গাফফার চৌধুরীর যে ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেল

পঁচাত্তরের অগাস্ট ট্রাজেডি নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবন নিয়ে চেয়েছিলেন আরেকটি সিনেমা বানাতে, কিন্তু তা আর হল না।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2022, 12:03 PM
Updated : 19 May 2022, 12:10 PM

তার আগেই চিরতরে বিদায় নিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক কিংবা চলচ্চিত্র নির্মাতার পরিচয় ছাপিয়ে যিনি একুশের গানের রচয়িতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতায় ভোগা গাফফার চৌধুরী ৮৮ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান।

গাফফার চৌধুরী তার স্বলিখিত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে একটি টিভি চলচ্চিত্র তৈরি করে। তাতে অর্থায়ন করেছিল শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার, লন্ডন।

তার আগে ২০০৫ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পরে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। লন্ডনের এক সাংবাদিকের পরামর্শে সেই চলচ্চিত্রের নাম দেন ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিক্স’।

কিন্তু অর্থের সংস্থান করতে না পারার কারণে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে সিনেমাটির কাজ আর এগোয়নি।

বছর দুই আগে এক সাক্ষাৎকারে গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, সিনেমাটি নিয়ে তিনি হাল ছাড়েননি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।

‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’তে বঙ্গবন্ধু চরিত্রে নেওয়া হয়েছিল পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ‘পোয়েট অব পলিটিক্সে’ বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল গাফফার চৌধুরীর। কিন্তু বাজেটে কুলাতে না পেরে তাকে আর প্রস্তাবেই দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, টালিগঞ্জের নির্মাতা গৌতম ঘোষের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ভারতের কোনো শিল্পীকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে নির্বাচন করে সিনেমার কাজ শুরু করবেন।

পরে গাফফার চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজটি থমকে ছিল। মাসখানেক আগে গৌতম ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সিনেমাটি নিয়ে গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে; তবে কাজটি তারা শুরু করেননি।

পরিচালক হিসেবে গৌতম ঘোষকে নির্বাচনের কারণ হিসেবে গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, “কলকাতায় উনার বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে হাসান ইমামও ছিলেন; উনি এখনও খুবই আগ্রহী।

“উনি এখনও ফোন করে বলেন, চিত্রনাট্যটি আমাকে দেন; কলকাতায় ছবিটি করব। ...আমার ছবিটা বাংলায় করব। এটি সামনের বছরই শুরু করব।”

পরে গাফফার চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেই উদ্যোগ ফের থমকে যায়; আর তার মৃত্যুতে সিনেমাটির ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জীবদ্দশায় সিনেমার অর্থ সংস্থানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা চেয়েও সাড়া পাননি বলে আফসোস করেছিলেন গাফফার চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “পরিচিত মন্ত্রী ও সেক্রেটারিদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা খুব একটা উৎসাহ দেখাননি।

“এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ করার সময়ও সরকার বা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।”

সেই চলচ্চিত্রগুলো ‘ডোনেশনের’ টাকায় করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “তারপর দেখলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে সরকার খুব একটা আগ্রহী নয়।”

চিত্রনাট্যের পাশাপাশি সিনেমাটি প্রযোজনাও করার কথা ছিল গাফফার চৌধুরীর।

সিনেমার প্রাথমিক বাজেট ধরেছিলেন ১০ কোটি টাকা; ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। তিনি অর্থ দিতে চেয়েছিলেন।

তবে মাঝে ফজলে হাসানের মৃত্যু হলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে সিনেমাটি করার চিন্তা ছিল তার।