জামালপুরে ‘গলুই’ বিভ্রাট

জামালপুরে চারটি মিলনায়তনে ঈদের সিনেমা ‘গলুই’র প্রদর্শনী জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সিনেমার প্রযোজক; তবে তা অস্বীকার করেছে জেলা প্রশাসক।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2022, 12:16 PM
Updated : 9 May 2022, 12:41 PM

জামালপুর শহরে কোনো সিনেমা হল না থাকায় শিল্পকলা একাডেমিসহ ৪ মিলনায়তনে সরকারি অনুদানে নির্মিতেএই সিনেমার প্রদর্শনী চলছিল।

এর মধ্যেই ১৯১৮ সালের সিনেমাটোগ্রাফ আইন দেখিয়ে জেলা প্রশাসন সিনেমার ‘প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু।

তা অস্বীকার করে জামালপুর জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করিনি; বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

“সিনেমা হলে সিনেমা চলবে, শিল্পকলা একাডেমি কিংবা অডিটোরিয়ামে কি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া যায়? প্রয়োজনে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে আসুক। সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে তো কেউ ‘না’ করছে না।”

এবার ঈদে ৩০টির মতো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খানের সিনেমা ‘গলুই’; জামালপুরেই বিভিন্ন এলাকায় এ সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছে।

জামালপুর শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, মাদারগঞ্জের নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম, ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়াম ও মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে ‘গলুই’র প্রদর্শনী হয়েছে ঈদে।

প্রযোজক খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিল্পকলা একাডেমিতে ঈদের দিন চারটা শো হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, শো চালানো যাবে না।”

শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার পর পুনরায় প্রদর্শনীর জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও অনুমতি পাননি বলে জানান খসরু।

খসরুর অভিযোগ, শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শনী বন্ধ করে বাকি মিলনায়নগুলোতেও প্রদর্শনী চালু রেখেছিলেন তারা; সেখানেও প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলা হয়েছে তাদের।

শুরুতে মিলনায়তনে প্রদর্শনীর অনুমতি দিয়েছিলেন কেন-এমন প্রশ্নে জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, “জামালপুরের মানুষের সেন্টিমেন্টের বিষয়টি চিন্তা করে আমরা স্বল্পসময়ের জন্য আমরা দিয়েছি (প্রদর্শন), যেহেতু এটা অনুদানের একটি সিনেমা।

“এখানে আমি দিনের পর দিন চালাইতে দিতে তো পারব না। ওনারা চালাতে চাইলে অনুমতি (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়) নিয়ে আসুক। একটা সময়ের জন্য প্রদর্শনের ইয়ে দিয়েছি। পারমিশন যেভাবে নিয়েছেন সেভাবেই চলেছে। প্রদর্শনী বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা যেভাবে অনুমতি দিয়েছি সেইভাবেই চলেছে।”

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সিনেমাটি মিলনায়তনে প্রদর্শনের অনুমতি পেতে প্রযোজক খসরু মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন।

ঈদের দিন শিল্পকলা একাডেমিতে ‘গলুই’র প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হলেও শিল্পকলা একাডেমি বলছে, ঈদের দিন থেকে টানা সাতদিন সিনেমাটির প্রদর্শনের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

জামালপুরের জেলা কালচারাল অফিসার আব্দুল্লাহ্-আল্-মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের দিন চারটি শো হওয়ার পর তারা শিল্পকলায় আর কোনো প্রদর্শনী করেননি; কেন করেননি তারা জানেন না। এখনও সেই অডিটোরিয়াম খালিই রয়েছে।

“শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামটা নতুন হয়েছে; ঈদের দিন জমজমাটভাবেই শো হয়েছে। পরের দিন কেন ওনারা চলে গেলেন, সেটা আমি বলতে পারব না।”

শিল্পকলার হল বরাদ্দের নীতিমালায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে কোনো আইনি বাধা নেই; যে কোনো প্রতিষ্ঠান টানা সাত দিনের জন্য হল বরাদ্দ নিতে পারবেন বলে জানান তিনি। নীতিমালা মেনেই তাদের হল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ।

দেশে একের পর এক সিনেমা হলের সংখ্যা কমে আসতে থাকায় বছরের পর বছর ধরেই শিল্পকলা একাডেমি ও দেশের বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে বিকল্প ব্যবস্থায় সিনেমার প্রদর্শন চলছে; এর মধ্যেই সিনেমাটোগ্রাফ আইন সামনে এলো।

শত বছরের পুরানো সিনেমাটোগ্রাফ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রাপ্ত লাইসেন্স দ্বারা অনুমোদিত স্থানের বাহিরে অন্যত্র অথবা লাইসেন্সে উল্লিখিত শর্তাবলী এবং নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ ব্যতিরেকে সিনেমাটোগ্রাফের মাধ্যমে কোনো প্রদর্শনী করিবেন না।”

বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য সিনেমা হলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকে; এর বাইরে অন্য কোনো স্থানে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি নেই। তা চললে বন্ধের এখতিয়ার জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে আইনে।

খসরুর ভাষ্যে, “সারা বাংলাদেশেই তো এভাবে সিনেমা চলে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, জামালপুর শহরে কোনো সিনেমা হলই নাই। হল থাকলে উনি বলতে পারতেন, হলে না চালিয়ে বাইরে চালাচ্ছেন। আমরা কত কষ্ট করে দর্শকগুলো ফিরিয়ে আনতেছি।”

অডিটোরিয়ামে প্রদর্শন বন্ধ হলেও জামালপুর জেলার একমাত্র হল আশা সিনেমা হল মেলান্দহের আশা সিনেমা হলেও সিনেমাটি প্রদর্শন চলছে।

২০২০-২১ অর্থ বছরে অনুদানপ্রাপ্ত এ সিনেমায় শাকিব খান ছাড়াও পূজা চেরী, আজিজুল হাকিম, আলী রাজ, সমু চৌধুরীসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।