‘লাইভ’ সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন নিয়ে নুহাশ হুমায়ূনের ক্ষোভ

একটি সংবাদমাধ্যমের লাইভ অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্ন নিয়ে ফেইসবুকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2022, 09:16 AM
Updated : 27 April 2022, 09:16 AM

মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোর ফেইসবুক পেইজে সরাসরি প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন নুহাশ; অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন, হুমায়ূন আহমেদের পুত্র না হলে আপনি এখানে থাকতেন বলে মনে হয় কি না।

প্রশ্নের উত্তরে নুহাশ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি বাবার পরিচয়ে নয়, নিজের কাজের জন্যই পরিচিতি পেয়েছেন।

পরে সেই প্রশ্ন নিয়ে এক ফেইসবুক পোস্টে নুহাশ হুমায়ূন লেখেন: “তোমাদের কী মনে হয় সানডেন্স, বুসান, এসএক্সএসডব্লিউ, মার্শে দ্যু ফিল্ম বাপের নাম দেখে প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানায়?”

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশে সাংবাদিকতা যদি আরেকটু সম্মানজনক হত! একটু আগে প্রথম আলোর লাইভ ইন্টারভিউতে ছিলাম; ভেবেছিলাম সেখানে ষ (ওয়েব সিরিজ) নিয়ে কথা হবে। সেখানে আমাকে প্রশ্ন করা হল, হুমায়ূন আহমেদ আমার বাবা না হলে আমি এখানে আসতে পারতাম?

“আমি জানি না, আপনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে এরকম প্রশ্ন কীভাবে করেন।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সারা ফ্যায়রুজ যাইমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুহাশ হুমায়ূনকে ‘ছোট করার’ কিংবা তার খারাপ লাগে এমন কিছু বলার কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না।

“তারপরও যদি তার (নুহাশ হুমায়ূন) কোনো কিছু খারাপ লেগে থাকে, তার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আসলেই খারাপ লাগানোর কোনো ইনটেনশন ছিল না। যারা এটা নিয়ে কথা বলছেন, তাদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ থাকবে, পুরো ইন্টারভিউ দেখলে জিনিসটা অনেকটাই ক্লিয়ার হবে।”

যাইমা বলছেন, “চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নুহাশ হুমায়ূনের কাজের প্রশংসা করি। তার সব কাজই আমি দেখেছি, তিনি খুব পছন্দের একজন। একটা বিষয় আমার সবসময় মনে হয়েছে, ফিল্ম মেকিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি হুমায়ূন আহমেদের থেকে বেশ আলাদা। এখানে তুলনা কিংবা ছোট করার কিছুই নেই।”

সঞ্চালক বলছেন, তিনি যে প্রশ্ন করেছেন, সেটা ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়, ‘একজন উপস্থাপকের জায়গা থেকেই’ তার প্রশ্নটা করা।

“প্রত্যেকেই জানতে চায়, বাবার পথ অনুসরণ করে কতটুকু এসেছেন। সেই জায়গা থেকেই প্রশ্নটা করেছি।”

সরব আরও অনেকে

নুহাশের সেই ফেইসবুক পোস্ট ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে; মন্তব্যের অংশে বা পোস্টটি শেয়ার করে এ নিয়ে আলোচনায় যোগ দিয়েছেন নুহাশের মা গুলতেকিন খান, বোন নোভা আহমেদসহ নুহাশের সহকর্মীদের অনেকেই।

গুলতেকিন খান লিখেছেন, “আপসেট হয়ো না বাবা। এ কারণেই আমি কোনো পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিই না। তারা নানাভাবে চেষ্টা করে; আমি বলি, প্রশ্ন মেইলে পাঠাও।আমি দেখলাম, কয়েকটা প্রশ্নের পর আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। কেউ কেউ উত্তরের এক অংশ ধরে ভিডিও বানায়, নানা অসত্য তথ্য থাকে।

এটাই কী পেশাদারিত্ব?”

আর বোন নোভা আহমেদ এমন সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নুহাশকে।

অভিনেত্রী অপি করিম লিখেছেন, “খুবই টিপিক্যাল প্রশ্ন করেছে। এই ধরনের সাক্ষাৎকারগুলো এড়িয়ে চলো। বিশেষ করে কথিত, অর্থহীন লাইভ ইন্টারভিউগুলো।”

পিয়া জান্নাতুল লিখেছেন, “তুমি ফেইসবুক যে কথাগুলো লিখেছ, সেই প্রশ্নের উত্তরে এই কথাটাই বলা উচিত ছিল, ‘তোমার কী মনে হয়, আন্তর্জাতিক উৎসবগুলো বাপের নাম দেখে আমন্ত্রণ জানায়?”

সুনেরাহ বিনতে কামাল লিখেছেন, “বছরের পর বছর ধরে তুমি ও তোমার পরিবার কীভাবে সংগ্রাম করেছ, সেটা তারা দেখে না। কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে তুমি ধীরে ধীরে উচ্চ শিখরে উঠছ।”

কাজী নওশাবা আহমেদ, মাসুমা রহমান নাবিলাসহ আরও অনেকেই নুহাশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

সেই সাক্ষাৎকারে কী ছিল

সঞ্চালক: নুহাশ হুমায়ূনকে প্রশ্ন করতে গেলে ঘুরে ফিরে বাবা হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে। জানতে চাই, যদি আপনি নুহাশ হুমায়ূন না হতেন, হুমায়ূনপুত্র না হতেন, তাহলে আপনি এখানে থাকতেন বলে মনে হয়?

নুহাশ হুমায়ূন: জানি না। সবশেষ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পাঁচটা ইন্টারভিউ করলাম। সেখানে এই জিনিসগুলো আসে না, আমার খুব আরাম লাগে। আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ আমাকে কাজের ওপর চেনে। এটা আমাদের কালচারের একটি জিনিস, আর্টিস্টদের কাজের থেকে পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ইন্টারেস্ট বেশি।

এই প্রশ্নগুলো দেশের মিডিয়ার কাছ থেকে বেশি আসে, মিডিয়াগুলো এই রিপোর্ট করতে পছন্দ করে। কাজের সাকসেস নিয়ে ইয়ে করতে পছন্দ করে না। ব্যাপারটা আসলে মিডিয়ার সৃষ্টি। এটা নিয়ে আমি আসলে চিন্তা করি না। আমি ইন্টারন্যাশনালি সেলিব্রেটেড ফিল্মমেকার; ওখানে আসলে ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা করার কোনো স্পেস নাই।

সঞ্চালক: তারপরও কী ভালোলাগাও কাজ করে না কিছু কিছু ক্ষেত্রে?

নুহাশ হুমায়ূন: ডেফিনেটলি ভালো লাগে। তাইওয়ানের একজন প্রডিউসার আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন, আমার সঙ্গে একটি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখা হয়েছিল; পরে তিনি জানতে পেরেছেন আমি সাংস্কৃতিক পরিবারের সদস্য।

সে আমাকে নিয়ে জানতে গুগল করে, মানুষ যখন বিষয়গুলো (ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড) আবিষ্কার করতে পারে, তখন খুব ভালো লাগে। এটা নিয়ে আমি গর্ব করি। কোনো সময়ই আমি মনে করি না, আমার আইডেন্টিটি লুকানোর কিছু আছে। ফ্যামিলির সাপোর্ট ছাড়া তো আসলে কিছু করা যায় না। সো, মায়ের ও বাবার; বিশেষ করে মায়ের সাপোর্ট ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না।

 ...মাঝে মাঝে মিডিয়া থেকে এক ধরনের চাপ আসে, আমি বাবার মত কিংবা বাবার মত হব কি না। আমি খুবই হ্যাপি যে, আমার নিজের ফ্যামিলি থেকে চাপ আসে না। বাবার থেকেও কোনো চাপ ছিল না, বাবার মত লেখালেখি করব কিংবা ফিল্ম বানাব… মায়ের থেকে কোনোদিন চাপ ছিল না, থাকবে না। বাইরেরটায় আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই, কারণ সেটা নিয়ে কোনো কথা বলি না।

সঞ্চালক: তাহলে ‍হুমায়ূন আহমেদের পুত্র না হতেন তাহলে এখানেই থাকতেন কি না, তার মানে উত্তরটা এভাবেই ধরে নেওয়া যায়, এখানেই থাকতেন, নির্মাতাই হতেন?

নুহাশ হুমায়ূন: আমি ডেফিনেটলি নির্মাতাই হতাম। হয়ত লোকাল মিডিয়া থেকে পাবলিসিটি একটু কম পেতাম। যে জিনিসটা আমি অ্যাকচুয়ালি পছন্দ করতাম না।বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক নিউজ হচ্ছিল; আমার ছবি পত্রিকায় আসছিল। তখন আমার চেহারা অনেকে চিনত, বিভিন্ন নাটকের অফার পেতাম।

ফেইস ভ্যালু নিয়ে আমার একটা পারসেপশন ছিল; নুহাশ দেখতে এরকম- আমি ওটা থেকে বের হতে চেয়েছি। আমি মিডিয়াতে থাকব একটা চেহারা হিসেবে, ওটা কখনও চাইনি। আমি চাচ্ছিলাম, মানুষ আমাকে আমার কাজে চিনবে। আমি খুব হ্যাপি যে, সেই বিষয়টি উৎরে যেতে পেরেছি।