ম্যাড ম্যাক্সের সেটে টম হার্ডিকে নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন থেরন

ম্যাড ম্যাক্স সিনেমার শুটিংয়ে টম হার্ডিকে রীতিমত হুমকি বলে মনে হচ্ছিল শার্লিজ থেরনের কাছে; সেটা এতটাই প্রবল ছিল যে সেটে বাড়তি নিরাপত্তার দরকার হয়েছিল তার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2022, 08:18 AM
Updated : 24 Feb 2022, 08:18 AM

কাইল বুকাননের নতুন বই ‘ব্লাড, সোয়েট অ্যান্ড ক্রোম: দ্য ওয়াইল্ড অ্যান্ড ট্রু স্টোরি অব ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড’-এ এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নতুন বইটির বরাতে জানানো হয়েছে, জর্জ মিলার নির্মিত ২০১৫ সালের ব্লকবাস্টার সিনেমা ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোডের শুটিং চলাকালে টম হার্ডির ‘অপেশাদার আচরণ ও আগ্রাসী’ মনোভাব নিয়ে থেরনের অভিযোগগুলো উঠে এসেছে।

শার্লিজ থেরন ও টম হার্ডির মধ্যে শীতল সম্পর্কের কথা হলিউডের চলচ্চিত্র জগতে মোটামুটি সবারই জানা। তবে নামিবিয়ার মরুভূমিতে ২০১৫ সালে ম্যাড ম্যাক্সের শুটিংয়ের সময় তাদের বৈরিতার আরও বিস্তারিত চিত্র এ বইয়ে এসেছে বলে লেখকের ভাষ্য।

টম হার্ডি ওই সিমেনার মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন। ম্যাড ম্যাক্সের আসল ট্রিলজির ওই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মেল গিবসন। থেরন অভিনয় করেছেন ইমপেরাটর ফুরিওসা চরিত্রে, যিনি খলনায়ক ইমমোরটান জোর একজন সেনাপতি। সিনেমায় ফুরিওসা তার নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ম্যাক্সের দলে ভেড়েন এবং তরুণ নারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান।

বুকাননের সঙ্গে আলাপের সময় থেরন ও অন্য ক্রুরা হার্ডির বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ করেন। তারা বলেন, সেটে দেরিতে আসতেন হার্ডি। এ কারণে সহকর্মীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হত।

একবার সকাল ৮টায় হার্ডির শুটিং সেটে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল, অন্য ক্রুদেরও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তাদের মধ্যে থেরনও ছিলেন, ওই সময় তিনি নতুন মা হয়েছেন। বাচ্চাকে কাছের একটি শিশু সদনে রেখে তিনি শুটিংয়ে যেতেন।

হার্ডিকে প্রযোজক সময় মেনে শুটিংয়ে আসতে ‘বিশেষভাবে অনুরোধ’ করার পরেও তিনি তিন ঘণ্টার বেশি দেরিতে সেটে উপস্থিত হন সেদিন। ওই পুরো সময় থেরন শুটিংয়ের তার শট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে একই জায়গায় বসে ছিলেন।

সেই স্মৃতি মনে করে ওই চলচ্চিত্রের ক্যামেরা অপারেটর মার্ক গোয়েলনিচট বলেন, “তিনি (থেরন) আসলেই একটি পয়েন্ট তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি একদম অনড় বসে ছিলেন যুদ্ধযানটির ওপরে, এমনকি বাথরুমেও যাননি।”

শেষমেষ যখন হার্ডি পৌঁছালেন, থেরন হার্ডিকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি অন্যদের এতটা অসম্মান কীভাবে করতে পারেন?” এবং বলেন, প্রযোজকের উচিত “এই ক্রুদের বসিয়ে রাখার জন্য প্রতি মিনিটে এক লাখ ডলার করে আদায় করা।”

এর প্রতিক্রিয়ায় হার্ডি থেরনের দিকে তেড়ে গিয়ে বলেন- “কী বললেন আপনি?”

গোয়েলনিচট বলেন, হার্ডিকে খুবই আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছিল এবং থেরন ‘আসলেই হুমকির মধ্যে পড়েছিলেন’।

“সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট, কারণ এরপর তিনি বলেন, ‘সেটে নিরাপত্তার জন্য আমি কাউকে চাই’।”

ফাইল ছবি, রয়টার্স

ওই ঘটনা নিয়ে থেরন বলেন, “এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছিল যে সব কিছু আর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। মনে হচ্ছিল একজন নারী প্রযোজক থাকলে হয়ত কিছুটা ভারসাম্য থাকত, আমি আসলে সেখানে নিরাপদ বোধ করছিলাম না।

“বাজে আচরণের বিষয়ে আমি কোনো অযুহাত দাঁড় করাতে চাই না, তবে ওটা একটা কঠিন শুট ছিল। এখন আমি খুবই স্পষ্ট একটি প্রেক্ষাপট দেখতে পাই আসলে কী ঘটেছিল। যখন আমরা সিনেমাটি করছিলাম, তখন সব এত স্পষ্ট আমরা বুঝিনি। আমি তখন টিকে থাকার চেষ্টা করে গেছি, আমি আসলেই ভয়ে ছিলাম।”

শুটিংয়ের সময় থেরনের জন্য ডেনিস ডি নোভি নামের যে প্রযোজককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাকে সেটে যেতে বাধা দিয়েছিলেন সিনেমার আরেক প্রযোজক ডগ মিচেল। ফলে থেরন সেটে একাই থেকে যান।

থেরন বলেন, “আপনি বুঝতেই পারছেন একজন পরিচালক তার সেটকে সুরক্ষিত করতে চাইছেন, কিন্তু ওপর থেকে চাপ আসছে এবং পরিস্থিতি আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আপনাকে বিষয়টি আরও বড় পরিসরে ভাবতে হবে।

“ওখানে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম, জর্জ যদি শুধু আস্থা রাখতে পারতেন যে কেউ তার সিনেমার স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিতে আসছে না বরং শুধু মধ্যস্ততা করতে আসছে।”

এই অভিনেত্রী বলেন, ওই কয়েক সপ্তাহে সিনেমার শুটিংয়ে তিনি এমন এক পরিস্থিতে পৌঁছান, যে তিনি বুঝতে পারছিলেন না, সামনে কী ঘটতে চলেছে।

“সেটা আসলে খুব একটা সহনীয় পরিবেশ ছিল না, আপনাকে তো নিজের কাজটা করতে হবে। এটা অনেকটা পাতলা বরফের আস্তরের ওপর দিয়ে হাঁটার মত অনুভূতি।”

পরিচালক জর্জ মিলার বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে তিনি এখন কষ্ট পান।

“পেছনে ফিরে তাকালে, আমার মনে হয় যদি আমি আবারও ওই শুটিং করতে পারতাম, আমি হয়ত আরও বেশি সজাগ থাকতাম।”

বুকাননের বইতে যাদের কথা এসেছে, তারা সবাই মোটামুটি একমত যে থেরন ও হার্ডির মধ্যে ওই টানাপড়েন রূপালি পর্দায় উত্তেজনা ফুটিয়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে, তবে সেটা মূলত হার্ডির গোয়ার্তুমির জন্যই ঘটেছে।

সহকারী ক্যামেরাম্যান রিকি শ্যামবার্গ হার্ডিকে একজন ‘খোঁচানো স্বভাবের’ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তার মতে থেরন ছিলেন পুরোপুরি বিপরীত। এছাড়া দ্বিতীয় সহকারী পরিচালক সামান্থা ম্যাকগ্র্যাডি থেরনকে ‘সবচেয়ে সহজে মেশার মতো একজন মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সিনেমার সম্পাদক জে হুস্টন ইয়াং বলেন, “বললেও বিশ্বাস করবেন না! ওই দুই জন পরস্পরকে ঘৃণা করত। তারা এমনকি একজন আরেকজনকে স্পর্শও করতে চাইত না। তারা একে অপরের দিকে তাকাতে পর্যন্ত চাইত না, ক্যামেরা চালু না হওয়া পর্যন্ত এমনকি পরস্পরের মুখোমুখিও হত না তারা।”

সহ-অভিনেতা নিকোলাস হল্ট সেটের পরিবেশ পছন্দই করতেন। তার মতে সেটা ছিলো অনেকটা এরকম- “মনে করুন আপনি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গেছেন এবং গাড়ির সামনে প্রাপ্তবয়স্করা তর্ক করে যাচ্ছেন।”

থেরন বলছেন, “ওটা ছিলো একটা ভয়াবহ পরিবেশ! আমাদের ওমনটা করা উচিত হয়নি, আমাদের আরও ভালো আচরণ করা উচিত ছিল। আমি এটা মানতে রাজি আছি।”

এসব অভিযোগের জবাবে হার্ডি বলেছেন, “সময়ে সময়ে আমাদের দুজনের ওপরই অস্বাভাবিক চাপ ছিল। তার (থেরনের) একজন আরও ভালো, আরও অভিজ্ঞ সহযোগী দরকার, যে ভূমিকাটা আমার নেওয়া উচিত ছিল। আসলে কিছু বিষয় গোপন করা যায় না। আমি এখন ভাবতে ভালোবাসি যে আমার বয়স হয়েছে, দেখতে খারাপ হয়ে গেছি, আমি হয়ত এখন ওই ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।”

সিনেমা শুটিং এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে শার্লিজ থেরন ও টম হার্ডির সম্পর্কও কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে এবং চলচ্চিত্রের কাহিনীর মত করেই তারা আরও কাছাকাছি হতে থাকেন বলে জানান মার্ক গোয়েলনিচট।

২০১৬ সালের অস্কারে মিলারের এই ম্যাড ম্যাক্স ছয়টি বিভাগে পুরস্কার জেতে। এই সিরিজের আরেকটি সিনেমা আগামীতে আসছে।