দিদি, আমার সবচেয়ে বড় উপহার তো আপনি: লতার স্মরণে রুনা

উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রুনা লায়লার সম্পর্ক ছিল পরিবারের মত, যোগাযোগও হত নিয়মিত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2022, 01:40 PM
Updated : 6 Feb 2022, 02:39 PM

গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুতে তাকে স্মরণ করে নিজেদের গভীর সম্পর্ক আর যোগাযোগের কথা ফেইসবুকে এক আবেগমাখা পোস্টে তুলে ধরেছেন রুনা লায়লা।

দুজনের ছবি শেয়ার করে বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি লিখেছেন- “লন্ডনে যাওয়ার আগে শেষবার যখন তার সঙ্গে কথা হয়েছিল, তখন বলেছিলেন, আমার সঙ্গে তিনি কথা বলতে পছন্দ করেন। আমরা যখন কথা বলি, তখন তিনি অনুভব করেন, আমরা পরিবারের খুব কাছের সদস্য।

“তিনি বলেছিলেন, আমি তার ছোট বোন এবং আমাকে খুব ভালবাসতেন ও আমার প্রতিভাকে সম্মান করতেন।”

রুনা লায়লা লিখেছেন, “আমাকে অনেক মিস করছিলেন তিনি। শিগগিরই তাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, যাতে সামনা-সামনি দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে পারি।

“বলেছিলাম, পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেখতে যাব। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।”

দীর্ঘ সাত দশক ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতভক্তদের সুরের মায়ায় বেঁধে রেখে রোববার সকালে ৯২ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন লতা মঙ্গেশকর।

মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার সপ্তাহ সেখানে ভর্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

উমহাদেশের সংগীত জগত ও সংগীত প্রিয় মানুষকে শোকে বিমূঢ় করে চলে গেছেন এই গুণী শিল্পী। ভারতবাসীর কাছে তিনি ছিলেন গানের পাখি নাইটিংগেল, কেউবা বলতেন ‘স্বরা কোকিল’।

তার কাছাকাছি আসার কথা তুলে ধরে রুনা লায়লা লিখেছেন, টেলিফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হত তাদের। সাধারণত গান নিয়েই কথা হত বেশি।

“আমি তাকে জোকসও পাঠিয়েছিলাম, তিন খুবই উপভোগ করেছিলেন। দিদির হাস্যরসের একটি দুর্দান্ত অনুভূতি ছিল। আমাকে তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলতেন, আমরা খুব হাসতাম।”

রুনা লায়লা লিখেছেন, তিনি গুড মর্নিং বললে এর উত্তরে পছন্দের ফুল ও শিশুদের ছবি, তার গানের অডিও বা ভিডিও পাঠাতেন লতা।

“এগুলোর বেশিরভাগই আমি ইতোমধ্যে শুনেছি ও মুখস্থ করেছি। তার কাছ থেকে আসা এগুলো ছিল বোনাস।”

রুনা লায়লার জন্মদিনে প্রতিবারই তার জন্য শাড়ি উপহার পাঠাতেন ‘বলিউডের নাইটিংগেল’। এই বছর রুনা লন্ডনে যাচ্ছেন বলে ঢাকায় ফিরে এলেই উপহার পাঠানোর কথা বলেছিলেন লতা।

ফেইসবুকে রুনা লিখেছেন, “দিদি, আমার জন্য সবচেয়ে বড় যে উপহার, তা তো আপনি।… যে কণ্ঠটি আমার মত লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, তা এখন স্বর্গে ফেরেশতাদের জন্য গান করছে।”

“আমি মন শূন্যতায় ভরে গেছে, এ শূন্যতা আামার কাটকে না। রুনা জি আপ ক্যায়সি হ্যায়- মধুর কণ্ঠে এই কথা আর শুনব না।”

আবেগ মাখা পোস্টে রুনা লায়লা লিখেছেন, “দিদি, আপনি আমাকে এবং আরও অনেককে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আপনি আমাকে অনেকের চেয়ে বেশি দিয়েছেন।

“আপনি আমাকে আপনার শেষ ভয়েস মেসেজগুলোতে যে আশির্বাদ পাঠিয়েছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আপনার আশীর্বাদ এবং ভালবাসা শেষ অবদি লালন করব, সরস্বতী মা। আমার দিদি...।”

ভারতের ইন্দোরে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর সঙ্গে বাঙালি আর বাঙালি সংস্কৃতির যোগাযোগ ছিল গভীর। সিনেমা আর বেসিক রেকর্ডে তার বহু গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে, গেয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতও।

ভারতীয় বাংলা সিনেমায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ২০০। তার কণ্ঠের ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’, ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায়’, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যা রে উড়ে যারে পাখি’, ‘বলছি তোমার কানে’, ‘চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়’ এর মত বহু গান শ্রোতার হৃদয়ে আজও দোলা দেয়।

আরও খবর