চিরন্তন লতা মঙ্গেশকর: ছবিতে স্মরণ কিংবদন্তিকে

ভারতের নাইটিঙ্গেল খ্যাত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ৯২ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিরবিদায় নিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2022, 08:30 AM
Updated : 6 Feb 2022, 08:34 AM

দেহে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার।

এনডিটিভি জানিয়েছে, কিংবদন্তি এই শিল্পীর রেখে যাওয়া অমূল্য রত্নের মধ্যে কেবল সংগীতজগতে তার অতুলনীয় ‘লিগাসিই’ নয়, আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে রাখা তার স্মৃতির খানিকটা অংশও।

সাত দশক ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রোতাদের সুরের মায়াজালে বেঁধে রাখা এই শিল্পী ২০১৯ সালের সেপ্টম্বরে ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামে যুক্ত হন। ওই প্ল্যাটফর্মে সহশিল্পীদের সঙ্গে তার স্মৃতি ও প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দের অনেক মুহুর্ত শেয়ারে ভালোবাসতেন লতা, যে কারণে তার অ্যাকাউন্ট হয়ে ওঠে গুপ্তধনের খনি।

তার মধ্যে কয়েকটি ছবি এখানে তুলে ধরা হল-  

 

১৯৪১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম রেডিওতে গান লতা। সেই মুহুর্তের অমূল্য একটি ছবি গত বছরের ডিসেম্বরে নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে শেয়ার করেছিলেন তিনি।

 

১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধে জীবন দেওয়া ভারতীয় সেনাদের স্মরণে ১৯৬৩ সালে নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে লতার গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘এ মেরা ওয়াতান কে লোগো’ জওহরলাল নেহেরুর চোখে জল এনে দিয়েছিল। প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর নেহেরুর জন্মদিনে তার সঙ্গে তোলা এই ছবিটি পোস্ট করে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করতেন লতা।

গত বছরের মার্চে লতা ১৯৩৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তার প্রথম ক্লাসিক্যাল পারফরম্যান্স উপলক্ষে তোলা এই অমূল্য ছবিটি শেয়ার করেন। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, “আজ আমার পরিচিত উপেন্দ্র চিনচোরের ফোন এসেছিল। তিনি আমাকে জানান, বাবার সঙ্গে আমি প্রথম ক্লাসিক্যাল পারফরম্যান্স করেছিলাম ১৯৩৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, সোলাপুরে। অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য এই ছবিটি তোলা হয়েছিল। ৮৩ বছর চলে গেছে, মনেই হচ্ছে না।”

 

লতা কেবল তার সংগীতজীবনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতেন না। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে স্থান পেত আরও অনেক কিছু। এই ছবিতে পোষা কুকুর গুড্ডু ও বুড্ডুর সঙ্গে কোকিলকণ্ঠী লতা। ক্যাপশনে তিনি নিজেই লিখেছেন, “আমার পুরনো দুই সাথী গুড্ডু আর বুড্ডু।”

 

সোশাল মিডিয়া ট্রেন্ডের সঙ্গেও চলতে চেষ্টা করতেন লতা। নিজের ক্যামেরার পেছনে থাকা এই ছবিটি শেয়ার তারই একটি নজির। বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৯ অগাস্ট ছবিটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন কিংবদন্তি এই শিল্পী। সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি ডে হ্যাশট্যাগ জুড়ে দিতেও ভুলেননি তিনি।

 

ভারতে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ সিআইডির কলাকুশলীদের সঙ্গে লতা। ২০২০ সালের এপ্রিলে পোস্ট করা এই ছবিতে তার ক্যাপশন ছিল, “আমার পছন্দের সিআইডি টিমের সাথে।”

 

হৃদয়ছোঁয়া এই ছবিটি অবশ্য লতা মঙ্গেশকরের ইনস্টাগ্রাগ্রাম প্রোফাইল থেকে নেওয়া নয়।

লতার ৯১তম জন্মদিনে তার বোন আশা ভোঁসলে টুইটারে এই ছবিটি দিয়ে লেখেন, “লতা দি’কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, আজ ৯১ হল তার। এই ছবির মাধ্যমে আমাদের শৈশবের কথা স্মরণ করছি, এখানে দিদিকে বাম পাশে বসা দেখা যাচ্ছে। মীনা তাই ও আমি পেছনে দাঁড়ানো।”

ছবিতে থাকা লতার দুই বোন আশা ও মীনাও সংগীতশিল্পী। তাদের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর সংগীত পরিচালক।

১৯৪২ সালে বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে গানকেই বেছে নেন লতা। দীননাথ ছিলেন ক্লাসিক্যাল শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা।

বলিউডে প্রথম বড় সুযোগ পান ১৯৪৮ সালের ছবি মজবুরে। সেখানে গেয়েছিলেন দিল মেরা তোড়া। তবে পরের বছর মহল ছবিতে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গেয়ে মাত করে দেন সবাইকে। পরের কয়েক দশক লতার গানের মূর্চ্ছনা মুগ্ধ করে রাখে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশকে।

বাংলা, হিন্দি, মারাঠিসহ কয়েক ডজন ভাষায় কয়েকশ গান করেছেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।

আকাশছোঁয়া খ্যাতির পথে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেনও তিনি। ১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীকে ১৯৬৯ সালেই পদ্মভূষণে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার। ১৯৯৯ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন দেওয়া হয় তাকে।