থেমে গেলেন কোকিলকণ্ঠী: লতা মঙ্গেশকরের জীবনাবসান
নিউজ ডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 06 Feb 2022 10:40 AM BdST Updated: 06 Feb 2022 04:17 PM BdST
দীর্ঘ সাত দশক ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতভক্তদের সুরের মায়াজালে বেঁধে রেখে চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার সপ্তাহ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কোকিলকণ্ঠী এই শিল্পী। রোববার সকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পিটিআই।
গত শতকের চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করা লতা অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিলেন অপরিহার্য একটি নাম।
গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার বলেছিলেন, “মাইকেল অ্যাঞ্জেলো মানেই যেমন চিত্রকলা, শেক্সপিয়ার মানেই যেমন ইংরেজি সাহিত্য, তেমনই ভারতীয় সিনেমার গান মানেই লতা মঙ্গেশকর।”
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি সিনেমায় গান করেছেন লতা। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষাতেও তিনি গান করেছেন। অনেকের বিচারে ভারতের সর্বকালের সেরা সংগীত শিল্পীদের একজন তিনি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পর গত ১১ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরকে। করোনাভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার তাকে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় তাকে দেখতে হাসপাতালে যান বোন আশা ভোঁসলে। বলিউডের আরেও অনেকেই ছুটে যান এই মহাতারকার খোঁজ নিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই জানান শুভকামনা। কিন্তু সবাইকে শোকে ভাসিয়ে রোববার সকালে চিরবিদায় নিলেন এ শিল্পী।
ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
President Ram Nath Kovind condoles the passing away of singing legend Lata Mangeshkar
— ANI (@ANI) February 6, 2022
"A Bharat Ratna, Lata-Ji’s accomplishments will remain incomparable," the President says. pic.twitter.com/mTK1BRbPeH
Prime Minister Narendra Modi "anguished" at the demise of legendary singer Lata Mangeshkar
— ANI (@ANI) February 6, 2022
"She leaves a void in our nation that cannot be filled," he says.
(file photo) pic.twitter.com/vfpm2ybIBK
লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, ভারতের ইন্দোরে। আগে নাম ছিল হেমা। তবে মৃত বড় বোনের নাম লতিকা হওয়ায় তার নাম হয়ে যায় লতা।
বাবা দীনানাথ মুঙ্গেশকর ছিলেন ধ্রপদ শিল্পী, মারাঠি থিয়েটারের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি। তার কাছেই লতার গান শেখার শুরু। কৈশোরেই বাবাকে হারালেও গান শেখা ছাড়েননি।
সেসব দিনে ওস্তাদ আমান আলী খানের কাছে ক্লাসিকাল শিখতেন লতা। ১৯৪২ সালে ‘কিটি হাসাল’ নামে এক মারাঠি সিনেমায় তার প্লেব্যাক ক্যারিয়ার শুরু।
তখন কেএল সায়গল, শামশাদ বেগম ও নুরজাহানদের যুগ। শুরুর দিকে লতা মঙ্গেশকরকে শুনতে হয়েছিল, তার কণ্ঠস্বর একটু বেশিই পাতলা।
তাকে প্রথম সুযোগ দেন মাস্টার গুলাম হায়দার। তার পরেই আসে ‘মহল’-এর সেই বিখ্যাত গান ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। সেই সিনেমা ১৬ বছরের মধুবালা ও ২০ বছরের লতা, দুজনের জন্যই ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। নায়িকা ও গায়িকার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ওই সিনেমার পর। সেই পথ ধরেই লতার কণ্ঠ হয়ে ওঠে বলিউডের ‘গোল্ডেন ভয়েস’।

বাংলাদেশের একাধিক প্রজন্মের কাছেও লতার কণ্ঠ স্বপ্নের মত। বাংলা সিনেমাতেও প্রায় ২০০ গান রয়েছে লতার। তার কণ্ঠের ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’, ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায়’, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যা রে উড়ে যারে পাখি’, ‘বলছি তোমার কানে’, ‘চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়’ এর মত বহু গান এ দেশের মানুষ মনে রাখবে আরও বহু দিন।
প্রয়োজন অনুযায়ী গায়কী আর কণ্ঠ বদলে নেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা ছিল লতার। একই সিনেমায় তিনি তিন নায়িকার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।
প্রখাত সংগীত পরিচালক নওশাদ আলী বলেছিলেন “লতার মত সংগীত প্রতিভা আমি আর পাইনি । বিভিন্ন মাধ্যমেই এক একজন আসেন, যার মাথায় ঈশ্বর হাত রাখেন, লতা তেমনই একজন।”

“এক কাপ চা আর দু চারটে বিস্কুট খেয়েই সারাদিন কেটে যেত। এমনও দিন গেছে যে দিনে শুধু জল খেয়ে সারাদিন রেকর্ডিং করছি, কাজের ফাঁকে মনেই আসেনি যে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খাবার খেয়ে আসতে পারি। সারাক্ষণ মাথায় এটাই ঘুরত, যেভাবে হোক নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাকে।”
বলিউডে লতা মঙ্গেশকরকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখতেন নায়ক দিলীপ কুমার। আবার লতাও দিলীপ কুমারকে সব থেকে কাছের মানুষ মনে করতেন ইন্ডাস্ট্রিতে।
লতাকে ভেবেই ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’য়ের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন রাজ কাপুর। চেয়েছিলেন, লতা সেখানে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করুন। কিন্তু লতা সায় দেননি। অনেক পরে জিনাত আমান সেই ভূমিকায় অভিনয় করেন।
২০০১ সালে লতা মঙ্গেশকর ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
আকাশছোঁয়া খ্যাতির পথে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীকে ১৯৬৯ সালেই পদ্মভূষণে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার। ১৯৯৯ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন দেওয়া হয় তাকে।
সর্বাধিক পঠিত
- দিনে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কয়েকবার
- বেয়ারস্টো-রুটের ব্যাটে রেকর্ড গড়ার পথে ইংল্যান্ড
- নিজের গায়ে আগুন দেওয়া গাজী আনিসকে বাঁচানো গেল না
- মেডেন উইকেটের পর যে কারণে বোলিং পেলেন না মোসাদ্দেক
- ম্যাচ হেরে মাহমুদউল্লাহর যত আক্ষেপ
- বুয়েটের পর ঢাবিতেও প্রথম নটর ডেমের আসীর
- চেলসি থেকে বার্সেলোনায় ক্রিস্টেনসেন
- লুহানস্কের পতনের পর এখন কোন পথে এগুবে রাশিয়া?
- ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বাইক বন্ধ: বাইকারদের সন্দেহে বাস মালিকরা
- বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই, এবার ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার