‘সেলিব্রেটিদের দায়িত্ব’ তাহসানকে মনে করিয়ে দিলেন বিচারক

বিতর্কিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি সংক্রান্ত এক মামলায় সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা তাহসান খানকে আগাম জামিন দিলেও তারকা হিসেবে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 11:28 AM
Updated : 20 Jan 2022, 11:28 AM

বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই মামলায় তাহসানকে ছয় সপ্তাহের জন্য জামিন দেয়।

আদেশে এই জামিনের মেয়াদ শেষে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। সে সময় তিনি জামিন আবেদন করলে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

একই মামলার আসামি অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়াও আগে হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।

আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়ালি হওয়ায় জামিন আবেদনের শুনানির সময় তাহসান তার আইনজীবীর চেম্বার থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সানজিদা খানম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান।

জামিন আদেশের আগে তাহসান খানকে উদ্দেশ্য করে এক বিচারক বলেন, “সেলিব্রিটিদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কিছু লোক সেলিব্রিটিদের দেখেই পাগলের মতো দৌড়ায়। আপনাদের দেখে যুবসমাজ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আপনাদের অবস্থান সম্পর্কে আপনাদের খেয়াল থাকা দরকার।”

পরে আইনজীবী সানজিদা খানম সাংবাদিকদের বলেন, “শুভেচ্ছা দূত হিসেবে গত বছর ৫ মার্চ তাহসান খানের সাথে ইভ্যালির মধ্যে চুক্তি হয়। পরে যখন তিনি বুঝতে পারেন কোম্পানিটি প্রতারণা করছে, চুক্তির দুই মাসের মাথায় গত বছরের ২৫ মে তিনি শুভেচ্ছা দূত থেকে পদত্যাগ করেন। ইভ্যালি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ২৮ মে। আর এ মামলা হয়েছে পদত্যাগের আট মাস পর গত ৪ ডিসেম্বর। ফলে মামলা যখন হয়েছে তখন তাহসানের সাথে ইভ্যালির কোনো সম্পর্ক ছিল না।

“সুতরাং ইভ্যালি সংক্রান্ত তার কোনো দায় থাকতে পারে না। এমনকি তাহসান খানের বিরুদ্ধে মামলাটি চলতে পারে না। এ যুক্তিতে জামিন চাওয়া হয়েছিল। আদালত ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।” 

সাদ স্যাম রহমান নামের এক ব্যক্তি ইভ্যালির গ্রাহক পরিচয় দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি থানায় নয়জনের নামে মামলা করেন।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল, তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের পাশাপাশি তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়াকেও আসামি করা হয়। পরে মিথিলা ও ফারিয়াকে ১৩ ডিসেম্বর আট সপ্তাহের আগাম দেয় হাই কোর্ট।

তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়ার বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ, ইভ্যালি ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ তার কাছ থেকে তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তখন ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত তাহসান, মিথিলা ও ফারিয়ার উপস্থিতি ও তাদের ‘প্রমোশনাল’ কথাবার্তায় প্রলুব্ধ হয়ে তিনি পণ্যের অর্ডার করেছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

গাড়ি, মোটরসাইকেল, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন বিলাসী পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নজরে এসেছিল ইভ্যালি।

চটকদার ‘অফারের’ প্রলোভনে অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন, পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভাল লাভ করার আশায়।

কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া তাদের টাকাও ফেরত দেয়নি। এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ইতোমধ্যে গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।