সোমবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তার ভেতর শিমুর লাশ পাওয়া যায়।
তার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকনের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, ‘দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করার কথা’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন নোবেল।
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়ার মেয়ে শিমু দুই যুগ আগে রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন; কৈশোরে এফডিসির অলি-গলি ঘুরতে ঘুরতে মান্নার কল্যাণে কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান।
১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় মান্নার ছোটবোনের চরিত্রে অভিনয় করেন কিশোরী শিমু; পরে কাজী হায়াতের আরেকটি সিনেমায় কাজ করেন তিনি।
কাজী হায়াৎ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিমুর ভাই খোকনের সঙ্গে মান্নার পরিচয় ছিল; মান্নার অনুরোধে তিনি শিমুকে সিনেমায় নিয়েছিলেন।
“পরে মেয়েটি ভালো অভিনয় করেছিল; প্রতিভা ছিল। ও খুব কম কথা বলত; চুপচাপ থাকত। ফলে আমি ওকে ‘বিষ্ণুপদ’ বলে ডাকতাম। পরে ওকে আরেকটি সিনেমায় নিয়েছিলাম।”
‘বর্তমান’ সিনেমায় মান্না ও শিমুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা; এছাড়া মৌসুমী, ডিপজল, মিজু আহমেদ, কাবিলাসহ অনেকে অভিনয় করেন।
পরে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ কয়েকজন পরিচালকের প্রায় দুই ডজন সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় শিমুকে। মান্না ছাড়াও শাকিব খান, রিয়াজের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে তিনি কাজ করেন।
‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমার অমিত হাসানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন শিমু।
সেই সিনেমার শিল্পী রিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিমুকে হত্যার খবরটি পড়ে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন শিমু; ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্যপদ হারানোয় সমিতির ভোটাধিকার হারান এ অভিনয়শিল্পী।
পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পেতে সবশেষ দুই বছরে এফডিসিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয়েছিলেন তিনি; শিল্পী সমিতির ক্ষমতায় থাকা মিশা সওদাগর-জায়েদ খানদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
তবে মিশা-জায়েদ খান বরাবরই তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
শিমুর হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াৎ, ওমর সানিসহ আরও অনেকে।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী সময় হারিয়ে যেতে থাকায় চলচ্চিত্রে শিমুর কাজও কমে এসেছিল। গত দশক থেকেই তিনি টিভি নাটকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন।
জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমদের মতো ছোটপর্দার তারকাদের সঙ্গে নাটকে কাজ করেছেন শিমু।
ফেইসবুক থেকে নেওয়া।
তার ফেইসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রডাকশন হাউজও চালাতেন এই অভিনেত্রী।
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ৪০ বছর বয়সী শিমু থাকতেন রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার একটি বাসায়।
শিমুর বাবা নুরুল ইসলাম আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য।
ওই ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য সৈয়দ কামরুজ্জামান চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুরুল ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রায় দুই যুগ আগে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে ঢাকায় যান শিমু। পরে এলাকায় আর ফেরেননি।
“পরে আমরা শুনেছি, ঢাকায় গিয়ে শিমু নায়িকা হয়েছেন। ছোটবেলায় তাকে দেখেছি; তারপর আর দেখিনি। তার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এলাকায় থাকেন।”
শিমুর এক ভাই ও এক বোন আছে; ভাই শহীদুল ইসলাম খোকনও চলচ্চিত্রের পার্শ্ব শিল্পী।