ইরফানের সঙ্গে হত হৃদয়ের কথা, জন্মদিনে স্ত্রী সুতপার স্মরণ

ছোটখাটো বিষয়ে আলাপ কিংবা প্রশংসায় স্বস্তি পেতেন না প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান। তার সঙ্গে হৃদয়ের গভীরতর যে আলাপ আজও  তারই অভাব বোধ করেন স্ত্রী সুতপা শিকদার।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2022, 01:32 PM
Updated : 7 Jan 2022, 02:35 PM

বোম্বে টাইমস এর কাছে শ্রদ্ধেয় এ অভিনেতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের জীবনের সেই সব আলাপের কথা স্মরণ করলেন তার সহধর্মিনী।

২০২০ সালের ২৯শে এপ্রিল ইরফান খানের চলে যাওয়ার দিনটি স্মরণ করে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন সুতপা। জানালেন একজন ব্যক্তি হিসেবে তাকে কতটা পাল্টে দিয়েছিলেন ইরফান।

স্ত্রী সুতপা শিকদার বলেন, “এ বছর এপ্রিলে তার চলে যাওয়ার দুই বছর পেরিয়ে যাবে এবং তার কথা মনে পরেনি এমন একটি দিনও আমাদের কাটেনি।

“সে একান্তভাবেই হৃদয়ের গভীরতর বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চাইত এবং তার সঙ্গে আমি সবচেয়ে বেশি সেসব আলাপের অভাবটাই বোধ করি।

“সবকিছুরই ক্ষতিপূরণ হয়। বন্ধুরা আমার জন্য আছে, কিন্তু তার সঙ্গে সেসব আলাপের? সেসব কথা ছাড়া আমার জীবনটা এখন শূন্য। ইরফানকে ছাড়া এই পৃথিবীটা আমার অবিশ্বাস্য লাগে।”

জন্মদিনের কথা উঠতেই সুতপা জানালেন ইরফান জন্মদিনের উদযাপন একদমই পছন্দ করতেন না, কারণ তার কাছে এসব ‘জড়বাদী’ আয়োজন মনে হত।

“সে কারো জন্মদিন মনে রাখত না, নিজেরটাও না। আমাদের সম্পর্কের প্রথম বছরগুলোতে এটা মেনে নিতে একটু সময় লেগেছিল। কারণ আমি বড় করে উদযাপন পছন্দ করতাম।”

এ বিষয়ে ইরফান খানের মনোভাব তুলে ধরে স্ত্রী সুতপা বলেন, “ভ্যালেন্টাইন’স ডের তো প্রশ্নই উঠে না, সে বিশ্বাস করত জন্মদিনের উদযাপন হচ্ছে উপহার তৈরির কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কৌশল।”

তিনি জানান, ইরফান খান অবশ্য বিভিন্ন উপহার দিয়ে তাকে হুটহাট চমকে দিতে পছন্দ করতেন এবং সেটা করতেন কোনো উপলক্ষ ছাড়াই।

ইরফানের জন্মদিনে একান্ত আয়োজনের কথা তুলে ধরে সুতপা বলেন, “আমি এখনও তার জন্মদিনে চালের ক্ষীর বানাই। সে হয়তো জানে না যারা তার শুভকামনা করে তাদের কী বলতে হবে।

“সে ছোটখাটো বিষয়ে আলাপ করতে কিংবা প্রশংসা শুনলে স্বস্তি বোধ করত না। সে সেলফি ঘৃণা করত। সে প্রায়ই লোকজনকে বলত, আপনার যদি ফোন না থাকত, তবে কি আপনারা আমাকে মনে রাখতেন না?”

এসব কথা স্মরণ করে সুতপা বলেন, “আপনি কখনোই প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। আপনি কেবল তা সামলে নিতে শিখবেন।

“সে এমন একটা সময় চলে গেল যখন ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা সে উপভোগ করতে শুরু করেছিল। তার হাতে ছয়টি ফিল্মসহ বড় আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট ছিল, কিন্তু নিয়তির লিখন ছিল ভিন্ন।”

ইরফান খানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে সুতপা জানান, তিনি ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ, লাজুক এবং মৃদুভাষী।

আলাপের উপসংহার টেনে সুতপা বলেন, “ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে কঠিন হল সৎ থাকা। ইরফান তার সততা ধরে রেখেছিল। পরিচালককে খুশি করার জন্য তিনি কখনো ফোন কলের উত্তর দেননি।

তবে শেষ দুই বছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে তিনি কিছুটা নরম হয়েছিলেন জানিয়ে সুতপা বলেন, “সে বলত, ‘যদি কারো শিল্প সম্পর্কে আমার সমালোচনা তাদের কম আত্মবিশ্বাসী করে তোলে?’

“তখন তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, নির্মম সততার চেয়ে অন্যের প্রতি সহৃদয় হওয়া অনেক বেশি জরুরি।”