‘স্বামীর নির্যাতনে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বুধবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেছেন ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী।
টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী ফারিয়ার অভিযোগ, বিয়ের তিন মাসের মধ্যে ‘স্বামীর নির্যাতনের শিকার’ হয়ে তার হাত ভেঙেছিল। ভাঙা হাতেই সেই সময় ‘দেবী’ সিনেমার প্রচারে অংশ নিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক স্ত্রী ফারিয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিবৃতি কিংবা কোনো বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। যে টপিকটা চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে সামনে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।“
একটি বিপণন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ অপুর সঙ্গে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আংটি বদলের পর ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন ফারিয়া; এর এক বছর ১০ মাসের ব্যবধানে ২০২০ সালের নভেম্বরে দাম্পত্যজীবনের ইতি টানেন তারা।
“আমি জানতাম এই মানুষটার সাথেই থাকতে হবে, নইলে মানুষ কি বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে তাদের কী জবাব দেব! কাবিনের ৩ মাস না যেতেই এত কিছু, নিশ্চয়ই সমস্যা আমারই!
“আমি এটা ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। বার বার ভেবেছি কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে।”
জীবনের সেই কঠিনতম সময়ে মাকেই পাশে পেয়েছিলেন জানিয়ে ফারিয়া ওই ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহস দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন মানুষ কী বলে তার চেয়ে নিজের ভাল থাকা আরও অনেক জরুরি।
“জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা আরও জরুরি।”
ফারিয়ার অভিযোগ নিয়ে নাটক ও চলচ্চিত্রাঙ্গনে তুমুল আলোচনার মধ্যে তার সাবেক স্বামী অপুও বুধবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের জিজ্ঞাসায় তিনি জানান, ফারিয়ার অভিযোগের জবাবেই তিনি পোস্টটি দিয়েছেন।
হাত ভাঙার অভিযোগের জবাবে অপু লিখেছেন, “তবুও ভাঙা আঙুলের গল্পটা রয়েই যায়, তাই তো? বরং ঘটনাটা শুরু কীভাবে, হলো কীভাবে, ভাঙল কীভাবে- এটা হয়তো জানার দরকার বিপরীত পাশ থেকেই। না হয় একদিকেই দোষী মনেই হয়! রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গেলে হয়ত প্রতিটি কাপলেরই লিঙ্গ নির্বিশেষে আজ 'মি-টু' স্ট্যাটাস দিতে হবে!
“নিজেকে ভিকটিমের মতো উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিমূলক মতবাদ- আসলেই দুঃখজনক। যখন একটা মানুষকে জনসাধারণ অনুসরণ করে- তার দিক থেকে একটাই কথা মাথায় রাখা উচিত, ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দায়িত্ববোধও আসে। কেউ যদি সহজেই হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌছতে পারে, তারও উচিত সাবলীল ও সৃষ্টিশীল গঠনমূলক কথায় নিজের ইমেজকে বিকাশ করা। ইনফ্লুয়েন্সার আসলে যে কী- এটা হয়তো অনেকেই বুঝতে চান না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে আরেকটি পাল্টা ফেইসবুক পোস্টে ফারিয়া লিখেছেন, আমার কিছু বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। কারও ইমেজ ক্ষুন্ন করা কিংবা মনোযোগ পাওয়ার জন্য পোস্টটি দেইনি। আমি মূলত প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলতে চেয়েছি।
“বিয়ে দারুণ একটি বিষয়! ফলে আমরা বরাবরই বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করি। এমনকি যখন আমার কোনো বন্ধু বিচ্ছেদ করতে চায় তখনও আমি বলি, ‘সময় নাও’।
“কেউ মারা গেলে আমাদের সমাজ কাঁদে; আর যেকোনো বিচ্ছেদকে নারীর ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়, সেই নারী সংসারে যথেষ্ট আপোস করতে পারেননি। তারা (সমাজ) সেই নারীর ভুল খুঁজতে থাকে।”
অপুর পোস্টের জবাবে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, “আমার গল্পটা শেয়ার করা খুব সহজ ছিল না। আমি যদি কাউকে ব্লেইম করার উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্টটি করতাম তাহলে সেটি আরও অনেক আগেই করতে পারতাম।
“আমি এটাও দেখেছি, মানুষ কীভাবে কয়েনের মতো উল্টে গিয়ে আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। সে কারণেই আমরা এখন অহরহ পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা দেখি। এই সমাজ পুরুষকে মহিমান্বিত করতে ও নারীকে লজ্জা দিতে ভালোবাসে।”
২০১৩ সালে ‘অল টাইম দৌড়ের উপরে’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ফারিয়ার ছোটপর্দায় অভিষেক।
বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয়ের পর চলতি বছর অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘দেবী’ চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে এই অভিনেত্রীকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে কয়েকদিন ইভ্যালির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন শবনম ফারিয়া।
পরে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে তিনি সেখান থেকে সরে দাঁড়ান।
সবশেষ এ মাসে ইভ্যালির এক গ্রাহক ফারিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন। সেই মামলায় এই অভিনেত্রী আট সপ্তাহের আগাম জামিনে আছেন।