সেট টপ বক্স কী, দাম কত, মিলবে কীভাবে?

কেবল টিভির গ্রাহকদের প্রান্তে ডিজিটাল ‘সেট টপ বক্স’ স্থাপন করা না হলে ৩০ নভেম্বরের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখা যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে সরকার; তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুই শহরের ‘৪০ লাখ’ গ্রাহকের কাছে যন্ত্রটি সরবরাহ করা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলছেন কেবল অপারেটররা।

সাইমুম সাদ গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2021, 06:53 PM
Updated : 11 Nov 2021, 04:39 AM

সেট টপ বক্স কী

সেট টপ বক্স হল এক ধরনের রিসিভার যন্ত্র; এটি টিভি ডিকোডার হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে মূলত অ্যানালগ ব্যবস্থায় কেবল টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার করা হয়। কেবল অপারেটরদের সার্ভার থেকে অ্যানালগ সিগন্যাল গ্রহণ করে ডিজিটালি টেলিভিশনে পাঠায়।

এর চেয়ে নিখুঁত, ঝকঝকে ছবি পাওয়া যায় সেট টপ বক্স ব্যবহারে।

অ্যানালগ ব্যবস্থায় ৬০টির মতো টিভি চ্যানেল দেখা গেলেও সেট টপ বক্স লাগালে গ্রাহকরা আড়াইশ’র মতো চ্যানেল দেখতে পারেন। গ্রাহকরা চাইলে আড়াইশ’, দেড়শ’ কিংবা একশ’ চ্যানেলের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজও নিতে পারেন। এতে বাংলাদেশে চ্যানেল, নিউজ চ্যানেল, শিশুদের চ্যানেলের আলাদা আলাদা অপশন থাকে।

কেবল টিভি দেখার জন্য যে পোর্টটি সরাসরি টেলিভিশনে যুক্ত করা হয়, সেটি সেট টপ বক্সে লাগাতে হবে। সেই বক্স থেকে ইউএসবিএন কেবলের মাধ্যমে সিগন্যাল টেলিভিশনে পাঠানো হয়।

দাম কেমন, মিলবে কীভাবে

বাংলাদেশের বাজারে যন্ত্রটি সহজলভ্য নয়। এটি মূলত চীনে উৎপাদিত হয়। কেবল অপারেটররাই চীন থেকে আমদানি করে গ্রাহকদের বাসায় স্থাপন করে দেয়। তবে চাইলে গ্রাহকরা বাজার থেকে কিনেও নিতে পারে।

সেট টপ বক্সের দাম বাজার ভেদে ১৬-১৮ শত টাকা থেকে ৪ হাজারের মধ্যে পড়ে। দামভেদে টিভির ছবি ও শব্দের মানের ভিন্নতা থাকে।

সেট টপ বক্সের জন্য এককালীন কিংবা কিস্তিতে আলাদাভাবে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। মাসিক ফি আলাদাভাবে দিতে হবে, সেটি নির্ভর করতে গ্রাহকরা কোন প্যাকেজ ব্যবহার করছেন সেটির উপর।

কেন দরকার

প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সেট টপ বক্সের ব্যবহার করা হয়। দুই কোটিরও বেশি গ্রাহকের বাংলাদেশে গত এক দশকে বাংলাদেশে কয়েক লাখ গ্রাহক যন্ত্রটি নিলেও তা সংখ্যায় খুবই নগণ্য।

সম্প্রচার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেট টপ বক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটির মাধ্যমে দর্শকরা ঝকঝকে চ্যানেল পাবেন। এই ইন্ডাস্ট্রি ডিজিটালাইজেশন না হওয়ায় কেবল টিভির গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায় না। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেট টপ বক্স বসানো হলে দেশের প্রতিটি গ্রাহকের তথ্য অপারেটরদের কাছে থাকবে। সরকারের রাজস্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপারেটরদেরও লাভ হবে।

সরকার কী বলছে

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) ও পরিবেশকদের বৈঠকের পর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেট টপ বক্স স্থাপনের সময়সীমা বেঁধে দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

হাছান মাহমুদ তখন বলেন, “কেবল অপারটেররা জানিয়েছেন, তারা ডিজিটাল ডিভাইস বসিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নেই। এখন গ্রাহকদের সেট টপ বক্স সরবরাহ করা হবে। গ্রাহকরা এই সেট টপ বক্স না বসালে ৩০ নভেম্বরের পর টেলিভিশন দেখার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হবে।”

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বিভাগীয় ও মেট্রোপলিটন শহরের সঙ্গে পুরোনো ১১টি জেলা কুমিল্লা, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাঙামাটি ও কক্সবাজার, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা ডিজিটাল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

কেবল অপারেটররা পারবেন?

সরকারের বেঁধে দেওয়া ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ‘৪০ লাখ’ গ্রাহকের বাসায় সেট টপ বক্স স্থাপন করা সম্ভবপর নয় বলে জানান কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজ।

কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজ জানান, ইতোমধ্যে কেবল অপারেটররা তাদের প্রান্তে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে চীন থেকে সেট টপ বক্স আমদানির চেষ্টা করছেন কেবল অপারেটরা।

পারভেজ জানান, পুরো দেশের প্রায় দুই কোটি গ্রাহককে সেট টপ বক্স সরবরাহ করতে তাদের প্রায় দুই বছরের মতো লাগতে পারে।

ঋণ চান কেবল অপারেটররা

দেশজুড়ে প্রায় দুই কোটি গ্রাহকদের জন্য দুই কোটি সেট টপ বক্স কিনতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থের সংস্থান করতে সরকারের কাছে স্বল্পমূল্যে ঋণ চাইছেন কেবল অপারেটররা। সেই সঙ্গে আমদানির শুল্ক মওকুফেরও দাবি করেন পারভেজ।

আনোয়ার পারভেজ বলেন, “সেট টপ বক্সটা মানুষকে স্বল্পমূল্যে দেওয়ার জন্য শুল্কটা মওকুফ করা হোক। একটা বক্সের মধ্যে তিনশ’ টাকা শুল্ক থাকে সেটা মওকুফ হলে সেটা কমে গ্রাহককে আমরা দিতে পারব। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী। বক্স আনার জন্য আমাদের লাইসেন্স জমা রেখে স্বল্প মেয়াদী ঋণ দেওয়া হোক।

“সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা হয়তো দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে। সরকার অ্যানালগ বন্ধ করে দিলে দর্শকের বিশাল অংশ টেলিভিশন দেখা থেকে বঞ্চিত হবে।”

সেই সঙ্গে সরকারের কাছেও সময়ও চাইছেন কেবল অপারেটরা। তাদের দাবি, চীন থেকে একসঙ্গে এতো পরিমাণ সেট টপ বক্স আমদানি করে স্থাপন করতেও আরও সময় প্রয়োজন।