ইভ্যালি ছাড়ার কারণ জানালেন শবনম ফারিয়া

প্রতারণার অভিযোগে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা শবনম ফারিয়া দাবি করছেন, মাসখানেক আগে তিনি ওই কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2021, 10:44 AM
Updated : 18 Sept 2021, 10:44 AM

গত জুনে এ দায়িত্ব নিয়ে ইভ্যালিতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন হালের আলোচিত এ অভিনেত্রী।

বিপুল দেনায় ডুবতে বসা এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান মোছা. শামীমা নাসরিনকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইভ্যালির সঙ্গে তাহসান রহমান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলার মত তারকাদের চুক্তি ও শবনম ফারিয়ার চাকরি নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে ফেইসবুকে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাসখানেক আগেই তিনি ইভ্যালি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “জুন-জুলাইয়ে পুরোদমে কাজ করেছি। তারপর দেখেছি, আমাদের কাজ করার কিছুই ছিল না। সবশেষ যমুনার বিনিয়োগের প্রেস রিলিজটা দিয়েছিলাম। এরপর আমাদের কাছ থেকে কোনো প্রেস রিলিজ যায়নি। প্রেস রিলিজ না হলে আমাদের কাজেরও কিছু নেই।

“একমাস পর যখন দেখলাম, ওদেরও অনেক কর্মী চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। তখনই অফিসে লেটার (পদত্যাগ পত্র) পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম, ‘আমি আর থাকতে চাচ্ছি না।’ সেখানে থেকে আসলে কোনো লাভও নেই। কাজ করার কিছু নেই। শুধু বসে থেকে লাভ নেই।”

এর আগে ইভ্যালির পণ্যদূত তাহসান রহমান খানও কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথা জানান। এ কোম্পানির প্রধান বিপণন কর্মকর্তার (সিএমও) দায়িত্বে থাকা আরিফ আর হোসাইনও পদত্যাগ করেছেন।

প্রায় এক মাস আগে পদত্যাগের পরও বিষয়টি ঘোষণা না দেওয়ার প্রশ্নে শবনম ফারিয়া বলেন, “আমি যখন চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি তখন নিউজ এসেছিল-আরিফ ভাই (আরিফ আর হোসাইন) তিন মাস আগে ছেড়ে দিয়েছেন। আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল। তখন অপ্রয়োজনীয় আলোচনা-সমালোচনা ফেইস করার ইচ্ছা ছিল না।

“তখন আমি জয়েন করেছি তখনও আমি কাউকে জানাইনি। আমার অভিনয়ের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানাতে পছন্দ করি না। অনেকে আমার কাজের থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করেন। কী স্ট্যাটাস দিলাম-সেটা নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন।

হয়তোবা দর্শকরা পছন্দ করে বলেই লেখেন। আমি তাদেরকে দোষ দেব না, তারা তাদের পেশাগত জায়গা থেকেই লিখেন। কিন্তু মাঝে এথিক্যাল জায়গাটা ঠিক থাকা উচিত। আমাদেরও তো পরিবার আছে। ওই জন্য অহেতুক আলোচনায় না আসার জন্য আমি কাউকে জানাইনি (পদত্যাগের বিষয়)।”

নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে পরিচিত পাওয়া এ অভিনেত্রী জানান, এর বাইরে তার কোনো স্টেটমেন্টের জন্য ইভ্যালির কোনো ক্ষতি হোক-এমনটা তিনি চাননি।

“তিনমাস পুরোদমে কাজ করেছি। তখন দেখেছি, কোম্পানির অবস্থা খারাপ। তখন ফলাও করে যদি বলি, কোম্পানিটার আরো লস হতে পারে। আমি তো ভেতরের জিনিস জানি না। আমি তো ছিলাম পিআর। আমি জানতাম- এই প্রেস রিলিজটা দিতে হবে, এই চ্যানেলে এই অ্যাডটা দিতে হবে। ফলে আমার জানার আসলে ‍সুযোগই নাই।

“তখন তারা (ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ) বলছিল, ‘প্রডাক্ট আমরা দিয়ে দেব, আমাদের একটু টাইম দিতে হবে’। ফলে আমি চাইনি- আমার স্টেটমেন্টের জন্য কোম্পানির কোনো ক্ষতি হোক। এটা আমার এথিক্যাল জায়গা থেকে এই জিনিসটা ছিল।”

ইভ্যালির পণ্য বিক্রিতে তারকা হিসেবে শবনম ফারিয়ার তারকাখ্যাতির কোনো ভূমিকা ছিল কি না-তা নিয়েও আলোচনা চলছে ফেইসবুকে।

তবে তা মানতে নারাজ শবনম ফারিয়া।

তার ভাষ্য, “অনেকে বলছেন, হয়তো আমাকে দেখে কেউ অফার (পন্য ক্রয়) দিয়েছে। এর দায়ভার কী? আমি যখন জয়েন করি তখন সাইক্লোন অফার চলছিল। জয়েন করার এক সপ্তাহ পর সাইক্লোন অফার বন্ধ হয়ে টি টেন অফার চলে আসে। টি টেন অফারের সিস্টেম হচ্ছে, পণ্য পাওয়ার পর টাকা দেবে।

“আমি যদি এত ইনফ্লুয়েন্সার হই যে, আমি জয়েন করার সাত দিনের মধ্যে চার শত কোটি টাকার অর্ডার দিয়েছে মানুষ। তাহলে তো বলব, আমি বাংলাদেশে টপ ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে আমি আছি! আমার জন্য চার শত কোটি টাকার অর্ডার হয়েছে!”

তিনি ইভ্যালিতে চাকরি করেছেন; কোম্পানিটির কোনো ধরনের প্রচারণা মূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

“আমি কিন্তু ‘ফেইস অব ইভ্যালি’ কিংবা ইভ্যালির অ্যাম্বাসেডর ছিলাম না। আমি জব করেছিলাম। আমি কোথায়ও ইভ্যালিকে প্রচার করিনি। আমার ফেইসবুকে বলেন কিংবা অন্য কোথাও ইভ্যালিকে প্রচার করিনি। ওদের সঙ্গে আমার ডিলই ছিল, আমি দাপ্তরিক কাজ করব। যেহেতু আমি একজন প্রফেশনাল অ্যাক্টেস ফলে আমি কোনো কিছু প্রমোট করতে হলে তার জন্য চুক্তি করতে হবে। এই জন্য ওদের প্রচারণা করি নাই কখনো। দাপ্তরিক কাজের জন্য একান্তই ব্যক্তিগত জীবন।”

শবনম ফারিয়ার বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে এসেছে, তিনি চাকরি করলেও কোনো বেতনাদি তিনি পাননি।

বিষয়টি জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

তিনি অন্য কোনো কোম্পানিতে চাকরি খুঁজছেন বলে জানালেন এ অভিনেত্রী; তবে আপাতত অভিনয়ের ব্যস্ততা থাকায় মাস দুয়েক পর চাকরি ‍শুরুর ভাবনার কথা জানালেন ফারিয়া।

“আমি অনেক জায়গায় কথা বলছি, চেষ্টা করছি। এখনও কোনো জায়গায় কনফার্ম হয়নি। এই মুর্হূর্তে অভিনয়ের প্রেশারটা বেড়ে গেছে। হয়তো বা এই দুই-তিনমাসের মধ্যে হচ্ছে না। সেটা (চাকরি) হয়তো দুই-তিন মাস পরে হতে পারে।”