সালমান শাহর মৃত্যু: মামলার নিষ্পত্তি হয়নি ২৫ বছরেও 

ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করা যায়নি ২৫ বছরেও। 

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2021, 05:56 AM
Updated : 6 Sept 2021, 05:57 AM

তিন দফা তদন্তের পর এ চিত্রনায়কের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও তা মানতে রাজি নন তার পরিবার। তার মায়ের দাবি এটি ‘হত্যাকাণ্ড’।

সালমানের ভক্তকূলও তেমনই বিশ্বাস করেন।  সালমান শাহর মৃত্যুর ‘আসল রহস্য’ উদঘাটনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। 

তবে সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।

ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।

তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।

সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।

সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

মামলাটি এরপর তদন্ত করে র‌্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন।

তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান।

গত ৩১ অগাস্ট ঢাকার মহানগর হাকিম  মামুনুর রশীদের আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু সালমান শাহের মা লন্ডনে থাকায় ‘নারাজি’ দাখিলে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর নতুন তারিখ রেখেছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার বাদী নীলা চৌধুরী লন্ডনে আছেন। তিনি দেশে ফিরে এলেই আমরা নারাজি দাখিল করব।”

তিনি বলেন, “পিবিআই যে প্রতিবেদন দিয়েছে আমরা তা মানিনি। আমরা মনে করছি মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে পিবিআই সালমান শাহের মায়ের সাথে যোগাযাগ করেনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে পেরেছি।

“আমরা মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করব। র‌্যাব বা অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে মামলাটি যেন পুনরায় তদন্ত করা হয়। সেটা না হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”