নিজের মতো করে বাঁচতে জানি: বিয়ে নিয়ে ন্যানসি

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি; গীতিকার মহসীন মেহেদীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছেন তিনি।

সাইমুম সাদ গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 12:08 PM
Updated : 25 August 2021, 02:20 PM

চলতি সপ্তাহে আংটি বদলের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যানসি বলেছেন জীবনের নতুন অধ্যায় নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা; পাশাপাশি নিন্দুকদের কুৎসার জবাবে নিজের ভাবনাও তুলে ধরেছেন।

হবু বরের সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?

ন্যানসি: মহসীন মেহেদী একটি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসারের দায়িত্বে আছেন। তার সঙ্গে আমার শুধু পরিচয় ছিল, চেনাজানা ছিল।

তার সঙ্গে সে অর্থে ‘সম্পর্ক’ ছিল না। তার লেখা গান আমি করেছি। গত বছর তার লেখা ‘এমন একটা মন’ গানে কণ্ঠ দিয়েছি। আরও দুটি গান করা আছে, কিন্তু এখনও প্রকাশ হয়নি।

আংটি বদল হল, বিয়ে কবে?

ন্যানসি: কখন নতুন করে লকডাউন আসে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মৃত্যুর হারও তো প্রতিদিন দুইশর মতো। আল্লাহ না করুক, কোনোভাবে যদি এটা বেড়ে যায় তাহলে সরকার নিশ্চয় লকডাউন দেবে। আমি বিয়েতে যেমন আয়োজন করতে চেয়েছিলাম তখন সেটা হবে না। খুব কঠিন হবে।

ভেন্যুগুলোও নিশ্চিত হতে চায়- আয়োজনে কতজন আপনারা রাখতে চান। বেশি জনসমাগম তারাও চায় না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এটা আমার পুনরায় বিবাহ হলেও বিবাহ। দেখা যাচ্ছে, আমার আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যা খুব কম। বাবা-মা নেই। তারপরও কিছু তো আছে। তার (হবু বর) আত্মীয়-স্বজন আছেন।

এমনও হতে পারে, ঘরোয়াভাবে আকদ করলে যে কোনো সময় করা যেতে পারে। অগাস্ট শোকের মাস; আমি যেভাবে ঘটা করে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম সেটা শোকের মাসের সঙ্গে যায় না। কিন্তু যদি এটা হয় যে, ঘরোয়াভাবে কাবিন করানো যেতেই পারে।

আমরা তো বিশ-পঁচিশ বছরের তরুণ-তরুণী না। আমাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হচ্ছে। এগুলো আমাদের জন্য একটু বিব্রতকর। এই সময়ে এসে আবার সবাইকে বলা...। তাদের কিছু কথা শোনা। ‘হ্যাঁ, এটা করেছো? আগেরটা ঠিক ছিল না।’

দিন শেষে আমার লাইফ আমিই চালাব; সেটা অর্থনৈতিকভাবে হোক, কিংবা মানসিকভাবে। তারা না করবে অর্থর্নৈতিক সহযোগিতা, না করবে মানসিক সহযোগিতা। তারপরও এসব শুনতে হয়।

আপনি তো অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী...

ন্যানসি:
 ষোল বছর ধরে গান করেছি। দুটো বাড়ি করেছি। আমার মনে হয় ইটস এনাফ। তারপরও এগুলো দেখতে হয়; শুনতে হয়। এই সমাজ পুরুষের কততম বিয়ে হচ্ছে সেটা নিয়ে যতটা না আগ্রহী তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী নারীর কততম বিয়ে হচ্ছে সেটা নিয়ে।

আমার যোগ্যতায়, পুনরায় বিয়ে করবার মতো সাহস আছে বা অবস্থান আছে। এটা আমি নিশ্চিত করতে পারছি যে, আমি আর দশটা মেয়ের মতো অবলা না।

আমার সিদ্ধান্ত আমি নিতে জানি। আমার মতো বাঁচতে জানি। এটাকে কেউ আপ্রিশিয়েট করে না। বরং কিছু বাজে তকমা চলে আসে। দিন শেষে নারীর বিরুদ্ধেই এমন তকমাটা আসে।

কারো হাত ধরলে সেটা খুব রসালোভাবে ছড়ায়। যেন প্রেমের গল্প ছিল। সবগুলোতে রসালো প্রেমের গল্প থাকতে হবে, তা না। একটা লোকের সঙ্গে পথ চলতে গেলে নির্ভরতাও তো অনেক বড় একটা ব্যাপার।

আমি নির্ভার হতে না পারলাম, তখন সংসার করাটা সহজ? সহজ না। আমার এই বয়সে ফ্যান্টাসি থাকে না। ফ্যান্টাসির একটা বয়স থাকে। সেই বয়সটা তো পার করে এসেছি। ফ্যান্টাসির বাইরে সংসার জীবনে নির্ভার হওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকে। আমি সব কিছু উৎরে এসেছি।  

ধরেন, এটা আমার তৃতীয় না; ত্রিশতম বিয়ে। ত্রিশবারের মতো আমি কোনো পুরুষকে গ্রহণ করতে যাচ্ছি। সেটা সেই পুরুষ জেনে, সানন্দে, সাগ্রহে আমাকে গ্রহণ করছে। আমার তো মনে হয়, এটাই বড় ব্যাপার।

বোঝাপড়া থাকাটাই মুখ্য বিষয়...

ন্যানসি: একদম। সেটা সে ভাবতে পারে যে, ‘এই ভদ্রমহিলা এখান থেকে এসেছে। আমি তাকে ভালোবাসি, আমি তার পাশে থাকতে চাইছি’। এই জায়গাটা তৈরি করতে পারার কথাটা আমাদের সমাজে বলা হয় না। সারভাইরাভাল ইস্যুতে নারীদের কথায় কথায় মা-খালাদের গল্প শোনানো হয়। কিন্তু তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি এত জটিল ছিল না; মানসিকতা এত কুটিল ছিল না। সেটাও ভাবতে হবে। তখন আমরা এত অনিরাপদ ছিলাম না। আমাদের এত চাহিদা ছিল না। সোশাল মিডিয়া ছিল না, এত জবাবদিহি ছিল না। থাকলেও জবাবদিহির জায়গাটা ছিল সীমিত।

একটা সিম্পল ব্যাপার বলি, আমি যখন বিয়েটা করব। তখন আমার পাশে মেয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকবে। এটা আমার জয় না? আমি আমার সন্তানকে সাথে নিয়ে তাকে খুশি রেখে আমার জীবনে আনন্দ আনতে চাচ্ছি। আমি তো তাকে আঘাত করে আনন্দ নিচ্ছি না।

আপনি বলছিলেন, আপনার বিয়ে নিয়ে সমাজে কিংবা ফেইসবুকে নানা জন কুৎসা রটাচ্ছে; তাদের জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে?

ন্যানসি: যারা ফেইসবুকে এসব লেখে, এরা হতাশায় ভোগে। তারা ভাবে, ন্যানসি দুটো বিয়ের পর আবার বিয়ে করতে চাচ্ছে বা আবার নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে চাচ্ছে। কারো হাত ধরে পথচলার সেই সাহসটা ন্যানসির  আছে। একটা লোকের হাত ধরা মানে শুধু তার হাত ধরা না; পুরো পরিবারের হাত ধরা। সবাইকে নিয়ে পথচলার মধ্যে এই মহিলা এতো সাহস পায় কোথা থেকে বা অল্প বয়সে তার জীবনে একটার পর একটা গান আসছে। একই সঙ্গে উত্থান হচ্ছে, আবার পতন হচ্ছে। এই মহিলার এতবার পতন হচ্ছে তারপরও সে উঠে দাঁড়ায়। এটা দেখে এরা ভাবে, পড়ে গিয়ে কেন তারা উঠতে পারে না।

আমি সৎসাহসের সঙ্গে বলতে পারি, দুই হাত ভরে মেহেদী দেব, গায়ে হলুদ দেব; বিয়েতে আমি নাচব, আমি গাইব। এটা তারা বলতে পারে না। নিজেরা সাধু বলে বলতে পারে না, তা না; ভয়ে বলতে পারে না। সেই ভয়টা আমি কাটিয়ে এসেছি।

সমাজটা আসলে কী, সমাজ মানে আমরা। আমি অনৈতিক কিছু করছি না, পাপ করছি না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু করছি না। বিশ্বের বাইরের উদাহরণ বাদ দিলাম। আমার দেশেই এরকম ঘটনা কী আমিই প্রথম ঘটাচ্ছি? এমন ঘটনা অসংখ্য ঘটেছে।