পরীমনি বারবার রিমান্ডে কেন, সমাবেশে প্রশ্ন

মাদকের মামলার গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মী, সংস্কৃতিকর্মীরা।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2021, 02:28 PM
Updated : 22 August 2021, 02:33 PM

গত ৪ অগাস্ট ঢাকার বনানীর বাসায় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর তাকে তিন দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। শনিবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

‘পরীমনির জন্য ন্যায়বিচার চাই’ ব্যানারে রোববার বিকালে ঢাকার শাহবাগে নাগরিক সমাবেশে শামিল হন মানবাধিকারকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংস্কৃতির্মীরা।

‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজন’র আয়োজনে এ সমাবেশে এক ভিডিওবার্তায় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও স্পিকার নারী; তারপরও নারীকে কেন অপমানিত হতে হবে? পরীমনিকে কেন বারবার রিমান্ডে নিতে হবে? কেন আদালত পুলিশের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো জারি করবে না?

আদালতের রায়ের আগেই সোশাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে পরীমনিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার কবির। নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূল সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমকে সংযত হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

“তাকে নিয়ে নানা ধরনের অস্বস্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। নারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই মানসিকতা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা।”

মাদক আইনের মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে শনিবার আদালত হয়ে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: কাজী সালাহউদ্দিন রাজু

সমাবেশে ফোন কলে যুক্ত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, পরীমনির জামিনের আবেদনটা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে শোনা হচ্ছে না। তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করতে গেছেন, করতে দেওয়া হয়নি। তার আইনজীবী পরীমনির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন, কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

“এটা কোনো আদালত করতে পারে না। এটা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। যদি বিচারক উপস্থিত থাকেন ও আসামি কাঠগড়ায় থাকেন, তখন আইনজীবী কথা বলতে পারেন না। এর বাইরে অন্য কোনো সময় আইনজীবী কথা বলতে পারবেন না- এমন কোনো আইন নেই।”

কয়েক মাস আগে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলার পর মাদক মামলায় পরীমনিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই প্রসঙ্গ তুলে ‍সুলতানা কামাল বলেন, “একটি মানুষ কোনো একটি অপরাধের শিকার হয়ে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে তখন থেকেই তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাতে হেনস্তা করার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতে তুলে নিল। একজন নারীকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে তা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

“সন্দেহজনকভাবে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হয়ত কিছু আলামত পাওয়া গেছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার বিচার শুরুই হয়নি। সেই মানুষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট ভাষায় বিষোদগার করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই, নিন্দা জানাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির ফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, “একজন ব্যক্তির বাসায় অভিযান পরিচালনার জন্য এতগুলো গাড়ি, পুলিশ, র‌্যাব নিয়ে গেছে। মর্যাদাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি, দেশের কোনো নাগরিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করা যায় না।

“তাকে তিনবারে রিমান্ডে নেওযা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, নারী ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তাকে সম্মান দেখাতে তো ব্যর্থ হয়েছে, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করা হয়েছে।”

মাদক আইনের মামলায় কারাগারে থাকা চিত্রনায়িকা পরীমনির মুক্তি দাবিতে রোববার ঢাকার শাহবাগে ‘জাস্টিস ফর পরীমনি’র ব্যানারে সমাবেশ হয়। ছবি: কাজী সালাহউদ্দিন রাজু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদেকা হালিম ফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, “যে মামলাগুলো তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তা জামিনযোগ্য। তার পরিবর্তে তাকে তিন বার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়ার কী কারণ, সেটার যৌক্তিকতা কিন্তু আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়নি।

“সেই সময় মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে। তার সম্বন্ধে কটূক্তি ও অশ্রাব্য ভাষা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজন’র সমন্বয়ক রবীন আহসান বলেন, “তাকে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে এই রাষ্ট্র কী শুনতে চান?-সেই প্রশ্ন আমরা বারবার করেছি। পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার মাধ্যমে নারী শিল্পীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত পরীমনিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে একটা তালেবানী সংস্কৃতির উপস্থাপন করা হচ্ছে “

প্রীতিলতা চলচ্চিত্রের পরিচালক রাশিদ পলাশ বলেন, “মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। পরীমনি যদি কোনো ভুল-ত্রুটি করে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কিন্তু তাকে বারবার রিমান্ডে এনে মানসিকভাবে হেনস্তা করলে তার শিল্পীসত্ত্বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিচালক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আকরামুল হক।