আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন ছেলে

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম অগ্রপথিক আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে স্মরণ করেছে এলআরবি ব্যান্ড।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2021, 11:51 AM
Updated : 16 August 2021, 11:51 AM

এলআরবি ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং প্লেব্যাক শিল্পী। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মৃত্যু হয়েছে তার। বেঁচে থাকলে ১৬ অগাস্ট ৬০ বছরে পা দিতেন এ কিংবদন্তি।

জন্মদিনে বাবার সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানালেন তাজোয়ার; কানাডার ভ্যানকুভারের ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলম্বিয়ায় পরিসংখ্যান বিভাগে পড়াশোনা করছেন তাজোয়ার।

জন্মদিনে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তাজোয়ার লিখেছেন, “আমরা তখন একসঙ্গে ভ্যানকুভারে এসেছিলাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার কয়েকটি আগে বাবার সঙ্গে ছবিটা তুলেছিলাম।”

মাস খানেক আগে বাবা দিবসে তাজোয়ার লিখেছিলেন, “প্রতিটা দিন তোমাকে মিস করি বাবা। আমি জানি, তুমিও মিস করো।”

বাবা মৃত্যুর পর ২৯২৮ সালে আইয়ুব বাচ্চুর জন্মশহর চট্টগ্রামের মঞ্চে বাবার গিটার হাতে মঞ্চে গান পরিবেশন করেছিলেন তাজোয়ার। ছেলের কণ্ঠে বাচ্চুর ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’ শুনে আবেগতাড়িত হয়েছিলে দর্শকরা। সেই মঞ্চে তাজোয়ারের সঙ্গে তার বোন ফায়রুজ সাফরাকেও দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে তাজোয়ারকে আর মঞ্চে দেখা যায়নি।

এলআরবির প্রাণপুরুষ আইয়ুব বাচ্চুকে তার ব্যান্ড এলআরবির ফেইসবুক পেইজ থেকেও স্মরণ করা হয়েছে। ‘চলো বদলে যাই’ গানের সঙ্গে তাকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছে ব্যান্ডটি।

আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘একদিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘চল বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’র মত বহু গান শ্রোতাদের হৃদয়ে এখনও বাজে।

আইয়ুব বাচ্চুর ডাক নাম রবিন। জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট, চট্টগ্রামে। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো।

কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা।

পেশাদার ব্যান্ডশিল্পী হিসেবে বচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৮ সালে। ব্যান্ড দলে ‘ফিলিংস’ এর সঙ্গে সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। দুই বছরের মাথায় যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলসে।

টানা দশ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন জয়, স্বপন আর এস আই টুটুল।

শুরুতে এলআরবির পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।

এলআরবির প্রথম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকার একটি ক্লাবে। সেখানে ইংরেজি গানই পরিবেশন করেছিলেন তারা। কিছুদিন পর ঢাকা শিশু একাডেমিতে এক কনসার্টে প্রথমবারের মত ক্লাব বা হোটেলের বাইরে দর্শকদের সামনে আসে এলআরবি।

১৯৯২ সালে দলের নামেই বাজারে আসে এলআরবির জোড়া অ্যালবাম এলআরবি- ১ ও ২। এরপর গত ২৭ বছরে সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, স্বপ্ন, ফেরারী মন, বিস্ময়, যুদ্ধ, স্পর্শসহ ১৪টি অ্যালবাম শ্রোতাদের সামনে এনেছে এলআরবি।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্ত গোলাপ’ বাজারে আসে ১৯৮৬ সালে। তখনও তিনি সোলসে। প্রথম অ্যালবাম খুব একটা সাড়া না পেলেও ১৯৮৮ সালে ‘ময়না’ অ্যালবামে গায়ক হিসেবে বাচ্চু শ্রোতাপ্রিয় হতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট দারুণ ব্যবসা সফল হয়।

পরের বছরগুলোতে ‘সময়’, ‘একা’, ‘প্রেম তুমি কি’, ‘কাফেলা’, ‘পথের গান’, ‘জীবন’, ‘রিমঝিম বৃষ্টি’, ‘বলিনি কখনো’র মত একক অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেনে আইয়ুব বাচ্চু। ২০১৫ বাজারে আসে তার একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প ’।

এছাড়া লাল বাদশা, গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান, ব্যাচেলর ও চোরাবালি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন বাচ্চু। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান- ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।