গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ শুক্রবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সন্ধ্যায় গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে জিমিকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে সন্ধ্যায় ঢাকার পান্থপথ থেকে পরীমনির ঘনিষ্ঠ নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
‘যখন ডাকা হবে তখন আসার শর্তে’ তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন যুগ্ম-কমিশনার হারুন।
চয়নিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের কারণ জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যেহেতু পরীমনির সঙ্গে তাকে প্রায়ই দেখা গেছে, সেজন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে এসেছি।”
গত জুনে মাসে ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ‘নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার’ হওয়ার অভিযোগ তোলার পর জিমির নামও আলোচনায় আসে। জিমিও সেদিন বোট ক্লাবে পরীমনির সঙ্গে ছিলেন।
পরদিন তিনি সাভার থানায় মামলা করলে ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি) উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং ট্র্যাভেল এজেন্সির ব্যবসায় জড়িত তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরীমনির অভিযোগ ছিল, পূর্ব পরিচিত অমি গত ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বোট ক্লাবে নিয়ে যান এবং সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন। অবশ্য পরে তারা দুজনেই ওই মামলায় জামিন পেয়ে যান।
পরীমনির বনানীর বাসায় ১৩ জুনের সেই সংবাদ সম্মেলনে বোটক্লাবের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরীমনিকে ‘মারধরের’ ঘটনা এবং নিজেও মারধরের শিকার হওয়ার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন জিমি।
তবে এরপর পরীমনির বিরুদ্ধেই আরেকটি ক্লাবে ভাংচুর চালানোর অভিযোগ আসে। তার সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাবে জিমিরও নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
এদিকে ‘ডিজে পার্টি’ আয়োজনের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত মঙ্গলবার শরিফুল হাসান (মিশু হাসান) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরদিন বুধবার র্যাব যায় পরীমনির বনানীর বাসায়।
কয়েক ঘণ্টা অভিযান শেষে পরীমনি এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর অভিযান চলে বনানীতে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাড়িতে। সেখান থেকে রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে র্যাব আটক করে।
মিশু ও জিসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পরীমনি ও রাজের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে কমান্ডার আল মঈন সেদিন জানান।
পরীমনি, রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর বনানী থানায় মাদক আইনে দুটি এবং পর্নগ্রাফি আইনে একটি মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে তোলা হলে মাদক আইনের দুই মামলায় চারজনকে চার দিন করে রিমান্ডে পাঠান বিচারক।
শুক্রবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, জিমিকে শিগগিরিই গ্রেপ্তার করা হবে।
“জিমিকে আপনারাও দেখেছেন, রাতের বেলা হ্যাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরে বিভিন্ন ক্লাবে যাতায়াত করত। ওর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। তাকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। আরও যারা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাদেরও খোঁজখবর আমরা নিচ্ছি। আমরা মনে করি, শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পারব।”