‘দায়িত্বহীন’ কাজ হয়েছে, ‘ঘটনা সত্য’ নাটক নিয়ে এফটিপিও

প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে ‘আপত্তিকর বার্তা’ ছড়িয়ে ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ‘দায়িত্বহীনতার পরিচয়’ দিয়েছে জানিয়ে ছোটপর্দার ১৪ সংগঠনের মোর্চা ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) বলছে, বিষয়টি নিয়ে তাদের সতর্ক করা হবে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2021, 12:08 PM
Updated : 26 July 2021, 01:39 PM

এ নাটকে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্ম নিয়ে অবৈজ্ঞানিক বার্তা দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সংগঠন, অভিভাবক ও দর্শকদের প্রতিবাদের মধ্যে তোপের মুখে রোববার দুঃখপ্রকাশ করে ইউটিউব থেকে নাটকটি সরিয়ে নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল মিউজিক অ্যান্ড ভিডিও (সিএমভি)।

বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে তুমুল সমালোচনার মধ্যে এফটিপিওর চেয়ারম্যান অভিনেতা-নাট্যকার-পরিচালক মামুনুর রশীদ বলছেন, “এটি খুব দায়িত্বহীন কাজ হয়েছে। নাট্যকাররা না জেনে-শুনেই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, মেডিকেলের বিষয়টিকে যে এভাবে তুলে ধরেছে তা ঘোরতর অন্যায়।”

সিএমভির প্রযোজনায় মঈনুল সানুর চিত্রনাট্যে নাটকটি নির্মাণ করেন তরুণ নির্মাতা রুবেল হাসান; প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী।

নাটকটি চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে প্রচারের পর শনিবার সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার থেকেই প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন, অভিভাবক ও দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, এ নাটকে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর বার্তা’ দেওয়া হয়েছে।

ছবি: ‘সত্য ঘটনা’ নাটকের দৃশ্যে আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী।

নাটকে বিলকিছ নামে একজন গৃহপরিচারিকার চরিত্রে মেহজাবীন চৌধুরী ও মুকুল নামে একজন গাড়ি চালকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হয়।

নাটকের শেষভাবে সেই সন্তানের জন্মের কারণ হিসেবে তাদের ‘অতীত জীবনের পাপকে দায়ী’ করে এ নাটকে ‘আপত্তিকর বার্তা’ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন। যা বাংলাদেশের প্রচলিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এমন ‘উদ্ভট’ বার্তায় বিষ্ময় প্রকাশ করে মামুনুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নিজেরও নাতি আছে; স্পেশাল চাইল্ড। …তারা একদমই দায়িত্বহীন কাজ করেছে। তারা নাটকটা তুলে নিয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের দিক থেকে খুব স্ট্রং রিঅ্যাকশন দিয়েছি।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩- এর ৩৭ এর (৪) ধারায় বলা হয়েছে, "কোনো ব্যক্তি পাঠ্যপুস্তকসহ যেকোনো প্রকাশনা এবং গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর ধারণা প্রদান বা নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যঙ্গ করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হইবে এবং তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।"

মামুনুর রশীদও বলেছেন, এটি ‘বড় অপরাধ’।

এর মধ্য দিয়ে নাট্যাঙ্গন নিয়ে সাধারণের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে কি না- এমন আলোচনায় শামিল হয়েছে নাট্যকার, নির্মাতাদের মধ্যে কেউ কেউ।

বিষয়টি নিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, “এটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল মানুষের ভুল। আমরা তাদের সাবধান করব। আমরা তুলে ধরব, ইট ইজ বিগ অফেন্স। এমনিতেই ওরা ক্ষমা চেয়েছে। তারপরও তাদের সতর্ক করব যাতে সামনে এমন আর না ঘটে।”

সিএমভির কর্ণধার এসকে শাহেদ আলী, নাট্যকার মঈনুল সানু, নির্মাতা রুবেল হাসান, অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

তার আগে সিএমভির তরফ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, “অসাবধানতাবশত নাটকে আমরা ভুল একটি বার্তা পৌছে দিয়েছিলাম। এরপর আমরা সঙ্গে সঙ্গেই নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর নাটকটি পুনরায় আবারও পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।”

রোববার নির্মাতা রুবেল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংশোধনীর কাজ সম্পন্ন করে নাটকটি প্রকাশ করা হবে।