ফকির আলমগীরকে আমি বলি ‘বাংলার সংগীতের বাঘ’: ফেরদৌস ওয়াহিদ

গানে গানে ফকির আলমগীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল ফেরদৌস ওয়াহিদের; সেই সত্তরের দশকে বাংলা পপ গানে শ্রোতাদের মাঝে উন্মাদনা ছড়িয়েছিলেন তারা। পাঁচ দশকের বন্ধু ফকির আলমগীরকে হারানোর কষ্ট ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রকাশ করলেন এক বুক শূন্যতা নিয়ে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2021, 07:09 PM
Updated : 23 July 2021, 07:09 PM

শুক্রবার রাতে বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে শোকাতুর ফেরদৌস ওয়াহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “সবার সঙ্গে লোকটার বন্ধুসুলভ ভাব ছিল। প্রাণবন্ত একটা মানুষ ছিল। সে আমার বন্ধু ছিল। আর বাংলাদেশের এমন একজন গায়ক ছিল, যাকে আমি বাংলার সংগীতের বাঘ বলি।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিন ধরে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন একুশে পদক পাওয়া গণসংগীত শিল্পী, একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা ফকির আলমগীর। শুক্রবার রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে ডাক্তারা তাকে আর ফেরাতে পারেননি।

ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, “গণসংগীত বলতে যেটা বোঝায়, সেই জায়গায় তেমন কেউ কাজ করেনি, কিন্তু ও করেছে। ওর মৃত্যুতে গণসংগীতের জায়গাটা শূন্য হয়ে গেল। জায়গাট কেউ ধরে রাখতে পারেনি, আবার চেষ্টাও করেনি। ও একাই চালিয়ে নিয়ে গেছে।”

১৪ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরদিন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন ৭১ বছর বয়সী ফকির আলমগীর। সে সময় তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে যে কষ্ট পেয়েছিলেন, সে কথাও বললেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।

“ওর মৃত্যুর গুজব উঠল, সেই দিন থেকে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওর শারীরিক অবস্থার আপডেট দেওয়া শুরু করলাম, যাতে মানুষ উল্টাপাল্টা কোনো তথ্য বিশ্বাস না করে। আমি আশা করেছিলাম ওর ফিরবেই। কিন্তু আর ফিরল না।”

সত্তরের দশকে যে বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল এ দুই গায়কের মাঝে, শেষ পর্যন্ত তা অটুট ছিল। ফকির আলমগীরে বিয়ের আয়োজনে যোগ দিয়ে তা আরও গাঢ় হয়েছিল বলে জানালেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।

ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ফকির আলমগীর। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও একসময় পালন করেছেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ফকির আলমগীরের কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

এছাড়া ‘মন তুই দেখলি না রে’, ‘ কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ’মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘ঘর করলাম না রে আমি’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’,  ‘বনমালী তুমি’সহ তার গাওয়া বহু গান আশি ও নব্বইয়ের দশকেও দারুণ জনপ্রিয় ছিল।