পুলিশ বলছে, সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই রাতে বোট ক্লাবের ভেতরে 'কিছু' একটা ঘটেছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কালো রঙের একটি গাড়িতে ওই রাত ১২টা ২২ মিনিটে পরীমনি ক্লাবে ঢোকেন, আর বের হন ১টা ৫৯ মিনিটে।
“বের হওয়ার সময় তাকে দু’জন চ্যাংদোলা করে বের করতে দেখা যায়।“
নগরীর অদূরে বিরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে ওই রাতের ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন এমন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “কালো রঙের গাড়ি থেকে নেমে স্বাভাবিকভাবে হেঁটেই বোট ক্লাবে ঢুকতে দেখা যায় পরীমনিকে।
“কিন্তু এক ঘণ্টা ৩৭ মিনিট পর তার হাত ও পা ধরে দু’জন ধরাধরি করে সাদা রঙের একটি গাড়িতে তুলে দেন।“
৮ জুন মাঝরাতের ঘটনার ছয়দিন পর সোমবার পরীমনি সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মাদক মামলায় নাসির ও অমি গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই রাতের ঘটনার বর্ণনায় ‘পরীমনির গালে থাপ্পড় এবং মাটিতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন’ বলে পুলিশের ভাষ্য।
গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মারামারির কথা দুজনই স্বীকার করেছে।”
বোট ক্লাবের যে বারে পরীমনির অভিযোগ অনুসারে ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে সেই ‘বারে’ কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।
তাই পুলিশের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল সেই চিত্র নেই।
তবে ওই বারে পরীমনির সঙ্গে থাকা তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি মোবাইল ফোনে ১৫ সেকেন্ডের ধস্তাধস্তির একটি ভিডিও করেছিলেন। এতে ভরাট পুরুষ কণ্ঠে গালমন্দ ও হই-হুল্লোর শোনার কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, “পরীমনি বনানী থানায় আসেন রাত ৩টা ৫২ মিনিটে। সেই সময় তিনি হেঁটেই থানায় ঢোকেন।”
এই চিত্রনায়িকার করা মামলা তদন্ত করছেন সাভার থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন।
জানতে চাইলে এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে। পুরোপুরি তদন্ত শেষে জানানো হবে।”
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী আরও বলেন, “ভেতরের বারে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তাই ভেতরের চিত্র পাওয়া যায়নি।”
বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির কখন ক্লাবে ঢুকেছেন জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সেই সময়টা বের করার চেষ্টা করছি। তবে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে নাসিরকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তার অর্থ নাসির আগের থেকেই ভেতরে ছিলেন।“
এটির সামনের দরজা থেকে নামেন পরীমনি। পেছনের ডান পাশের দরজা দিয়ে বের হন অমি, কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও একজন নারী।
রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়।
ওই রাত ১টা ৫৯ মিনিটে পরীমনিকে চ্যাংদোলা অবস্থায় বের করেন দুজন।
পুলিশ জানায়, এই দুজনের একজন জিমি ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। পেছনে যে নারীকে দেখা গেছে তার নাম বনি এবং তার পেছনে ছিলেন অমি।
বনি অভিনেত্রী পরীমনির বোন বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন।
মামলার এজাহারে পরীমনি অভিযোগ করেছেন, পূর্ব পরিচিত অমি ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বর্তমান বাসা থেকে বোট ক্লাবে নিয়ে যান এবং সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন।
“ওই রাতে সঙ্গীয়দের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে প্রায় অচেতন অবস্থায় রক্ষা পান।”
তিনি সোমবার মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই আসামীদের রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন এই চিত্রনায়িকা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এসে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজের হারানো ‘আত্মবিশ্বাস’ কিছুটা ফিরে পাওয়ার কথা বলেন।
অভিযোগের সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করলেও আসামিদের গ্রেপ্তারের পর এই বাহিনীকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: