পুলিশ ‘ম্যাজিকের মত’ কাজ করেছে: পরীমনি

আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর পুলিশ ‘ম্যাজিকের মত’ আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে বলে নিজের ‘সন্তুষ্টির’ কথা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2021, 02:13 PM
Updated : 15 June 2021, 04:46 PM

মঙ্গলবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন তিনি।

চিত্রনায়িকা পরীমনি বলেন, “পুলিশ বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। পুলিশ, হারুন স্যার অনেকটা ম্যাজিকের মত সবকিছু করেছে। এতটা তাড়াতাড়ি পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করবে, সেটা আমি ভাবতে পারি নাই।

“কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখলাম (আসামিদের) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি অভিযোগের ব্যাপারে সঠিক বিচার পাব। পুলিশের উপর আমার আস্থা আছে।”

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনার পর দুদিন আগেই পুলিশের অসহযোগিতা পাওয়ার কথা বলেছিলেন ঢাকার চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়িকা।

৮ জুন ঢাকা বোট ক্লাবে এই ঘটনার পর রাতেই বনানী থানায় গিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন ফেইসবুক পোস্টে ও সংবাদ সম্মেলনে।

রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন করার পর নাসিরসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি। বিরুলিয়ায় অবস্থিত বোট ক্লাব সাভার থানায় অর্ন্তগত।

এরপর ওইদিনই রাজধানীর উত্তরা থেকে প্রধান আসামি নাসির ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এই দুজনই বোট ক্লাবের সদস্য (ঘটনার পর বহিষ্কৃত), যে ক্লাবের সভাপতি পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ।

আসামি গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই বাহিনীকে প্রশংসায় ভাসান তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে মঙ্গলবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে চিত্রনায়িকা পরীমনি ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের বর্তমান ভূমিকার প্রশংসা করেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে পরীমনি বলেন, “আমাকে ডিবি পুলিশ ডাকেনি, আমি নিজে থেকেই এখানে এসেছি।

“আমাকে কাজে ফিরতে হবে, এটা কিন্তু আমি নিজে নিজে ফিরেছি। সবাই হয়ত আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে, কিন্তু আমাকে তো কাজে ফিরতে হত।”

মঙ্গলবার বিকাল ৪টার একটু আগে তিনি রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখানে ঢোকার পর পরীমনিকে নিয়ে যাওয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদের কক্ষে।

ওই কক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার ও মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার মশিউর রহমান।

ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে পরীমনি আরও বলেন, “আমি কতটা শকড হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে, সবাই আমাকে কত ভালোবাসে, আমি সেটা দেখে অভিভূত। আমি এখন উঠে দাঁড়াতে পারছি।”

ডিবি কার্যালয়ে এই চিত্রনায়িকার সঙ্গে ছিলেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী ও পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি।

পুলিশের ভূমিকার ব্যাপারে প্রথম দিনে তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, “প্রথমে আমার অভিযোগটা আপনারা আমার ভেরিফাইড ফেইসবুকের মাধ্যমে জেনেছিলেন। এরপরে আমি অনেক কথাই বলেছি। আমি পেইজে ব্যাখ্যাও করেছি পরে।”

তার বিরুদ্ধে নাসির উদ্দিনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি মদ খেতে বা ছিনতাই করতে গিয়েছিলাম এমনটা কি বিশ্বাসযোগ্য? আপনারা কি তাই মনে করেন?”

সেই রাতে মাতাল ছিলেন কি না- এমন প্রশ্নে পরীমনি বলেন, “আমাকে মুখ চেপে জোর করে মদ খাওয়ানো হয়েছিল। জানি না ওই অবস্থায় আমাকে মদের সঙ্গে আর কী কী খাওয়ানো হয়েছিল, বুঝতে পারছিলাম না।

“আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমি যে মরে যাচ্ছিলাম, সেই অবস্থাটা জানাতেই- পুরো ঘটনাটা জানাতেই থানা পুলিশে গিয়েছিলাম। পুরোটাই থানা পুলিশকে জানিয়েছি এবং তাদেরকে বলেছি যে, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমাকে মদ খাওয়ানো হয়েছিল আমি ঠিক নাই, আমি সুস্থ নাই, আমি এখনও সুস্থ না। আমার সমস্যা হচ্ছে।”

পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে যোগাযোগ ও অসহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আইজিপির কাছে বক্তব্য পৌঁছাতে পারেনি বলেই এত কথা। তিনি আমার একমাত্র ভরসা ছিলেন।

“তার কান অবধি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস এবং আপনাদের মাধ্যমে আমার বার্তা পৌঁছে যাবার পরই কিন্তু তিনি তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।”

এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগকারী চিত্রনায়িকা পরীমনি মঙ্গলবার ডিবি অফিসে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শিল্পী সমিতি সম্পর্কে তার হতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম যে শিল্পী সমিতির হয়ে আমি বেনজীর স্যারের সাথে একটু বসতে চাই, কথা বলতে চাই।

“জায়েদ খানকে (শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক) বলেছিলাম, তুমি একটু হেল্প কর। তিনি বলেছিলেন, ডিটেইলস বলতে তোমাকে আসতে হবে। সরাসরি তুমি আসলে বেনজীর স্যারের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করতে পারব।”

পরীমনি আরও বলেন, “আমি কখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বলিনি। আমাকে প্রত্যেকে যথেষ্ট হেল্প করেছেন, এখন আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেন।”

‘ধন্যবাদ দিতে পরীমনি এসেছেন’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, “ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটনার পর পরীমনি পুলিশ ও আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি সেই সুযোগটা করে দেয়নি। এটিই পরীমনির অভিযোগ ছিল।”

তিনি জানান, পরীমনি পুলিশকে ‘ধন্যবাদ’ দিতে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন।

“মামলা রেকর্ড হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইজিপি স্যার ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করি।

“আসামিদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে পরীমনি তার বাসা থেকে ডিবি অফিসে ছুটে এসেছেন আজ। উনি (পরীমনি) এসে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং মামলার যাবতীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।”

“পরীমনি পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছেন, মামলাটি যেন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়।”

এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগকারী চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“যত বড় ব্যক্তিই হোক না কেন, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এই মামলায় যদি আরও আসামি থাকে তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে,” বলেন হারুন।

বনানী থানায় পরীমনির অভিযোগের বিষয়ে ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, “ঘটনার রাতে ৪টায় বনানী থানায় পরীমনি গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই সময় ওসি সাহেব থানায় ছিলেন না।

“থানায় অসুস্থতাবোধ করার কারণ হল সাময়িকভাবে পরীমনি বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। ওই সময় তিনি দ্রুত থানা পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে চলে যান।”

মঙ্গলবার এই মামলার পাঁচ আসামিকে আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিনের হেফাজত পেয়েছে পুলিশ।

এর আগে পরীমনিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য পরীমনিকে আসতে বলা হয়েছে।

পরীমনির মামলার পর সোমবারই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ নাসির ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ আরও তিন নারীকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় ওই বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।  

পরে সোমবার মধ্যরাতে বিমানবন্দর থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের এসআই মানিক কুমার শিকদার।

প্রথমে ফেইসবুকে এবং পরে বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে পরীমনি অভিযোগ করেন, গত ৮ জুন রাতে অমি তাকে তুরাগ নদীর তীরে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে নাসির তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন