ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এ নায়িকার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ; তা অস্বীকার করেছেন পরীমনি।
Published : 15 Jun 2021, 05:22 PM
সোমবার সকালে সাভার থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে পরীমনির মামলা দায়েরের পর বিকালে উত্তরা থেকে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরীমনি অভিযোগ করেছেন, গত ৮ জুন উত্তরার কাছের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন নাসির। তখন তাকে মারধরও করা হয়।
ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির মাহমুদ ক্লাবটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন; পরীমনির অভিযোগের পর সেই পদ খুইয়েছেন তিনি।
পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার আগে সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের সামনে পরীমনির অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন নাসির।
তিনি অভিযোগ করেন, সেদিন পরীমনি জোর করে দামি মদ নিতে গেলে বাধা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে এই অভিনেত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।
এ অভিযোগ নিয়ে সোমবার রাতে নিজের বাসায় পরীমনি বলেন, “এটা কেমন বাচ্চাদের মতো কথা হয়ে গেল না। …তিনি আমাকে কীভাবে গালাগালি করেছেন, সেই ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটা শুধু শোনেন, কান নিতে পারবে না। তারপরও যদি এমন একটা অভিযোগ করে, তাহলে এটা নিয়ে কিছু বলার নেই।”
উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির ইউ মাহমুদকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তারের সময় মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে পুলিশ। আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়া নাসির জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্যও।
নাসিরের নিজেকেই ‘ভিক্টিম’ বলে দাবির বিষয়ে পরীমনি বলেন, “আমি জানি না। কিছু তো একটা বলতে হবে। আমাকে কেন হিট করা হয়েছিল? তাহলে তার লোকজন দিয়ে ‘স্যরি’ কেন বলাচ্ছিল। সে যেগুলো বলেছে, সেগুলো আমার কাছে আছে।
“চারদিন ধরে তাহলে আমাকে কেন বুঝানো হচ্ছিল, আমি যেন কোথাও কিছু না বলি। সে ভিক্টিম হলে তো সে সবার সামনে যাবে।”
পরীমনির সঙ্গী কস্টিউম ডিজাইনার জিমির দ্বারাও আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে দাবি নাসিরের।
বিষয়টি অস্বীকার করে জিমি বলেন, “এই অবস্থাতে কোনো কিছু করা দূরের কথা উনার সঙ্গে কোনো কথা বলব, উনাকে তো চিনিও না।”
জিমি অভিযোগ করেছেন, পরীমনিকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করতে গেলে নাসিরই তাকে মারধর করা হয়েছে। তার মোবাইল ছুড়ে ফেলা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ (জিন্স প্যান্ট ও আকাশি রঙের শার্ট পরা)। সোমবার উত্তরা থেকে তার সঙ্গে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার ও কিছু মদ জব্দ করেছে পুলিশ। ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পরীমনি বলেন, “নাসির উদ্দিন মাহমুদই আমাকে জোড় করে মদ গিলিয়েছে। আমার ঠোঁট ফুলে গিয়েছিল।”
ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য না হয়েও সেখানে যাওয়ার ব্যাখ্যায় পরীমনি বলেন, সেখানে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। উত্তরা যাওয়ার পথে মামলার ২ নম্বর আসামী তুহিন সিদ্দিকী অমির পীড়াপীড়িতে সেখানে গিয়েছিলেন তারা।
অমি ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য ছিলেন। মামলার প্রধান আসামী নাসির উদ্দিন মাহমুদের পূর্ব পরিচিত অমি। নাসিরে সঙ্গে সেইদিন প্রথম সাক্ষাত হয়েছে পরীমনির।
পরীমনি তার মামলার এজাহারে বলেছেন, অমি ‘পরিকল্পিতভাবে’ ৮ জুন রাতে তাকে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। পরে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন।
কস্টিউম ডিজাইনার জিমির কলেজ জীবনের বন্ধু অমির উপর ‘বিশ্বাস’ রেখেই সেদিন তুরাগ নদীর তীরে সেই বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন বলে জানান পরীমনি।
বোট ক্লাবে যাওয়ার পর অমির ভিন্ন চেহারা দেখে বিস্মিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন পরীমনি।