সাভার থানায় দায়ের করা ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনি অভিযোগ করেছেন, তাকে গভীর রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ‘পরিকল্পিতভাবে’।
Published : 14 Jun 2021, 03:06 PM
মামলার প্রধান আসামি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০) ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি)।
এজাহারে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে অমি নামে ৪০ বছর বয়সী একজনকে, যিনি পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমির ‘পরিচিত’ বলে আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
মামলার ছয় আসামির মধ্যে বাকি চারজনকে এজাহারে দেখানো হয়েছে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে, যারা প্রধান আসামিকে সহযোগিতা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
পরীমনি তার মামলায় বলেছেন, দুই নম্বর আসামি অমি ‘পরিকল্পিতভাবে’ ৮ জুন রাতে তাকে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সেখানে প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন। বাধা দিতে গিয়ে ‘মারধরের’ শিকার হন পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি।
এজাহারে বলা হয়েছে, “আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে।”
সাভার থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।”
রোববার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার ওই অভিযোগ সামনে আনেন দুই ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্র রূপায়ন করা পরীমনি।
সেখানে তিনি লেখেন, “আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”
পুলিশে জানিয়ে ফল পাননি জানিয়ে ওই ফেইসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান এই অভিনেত্রী। পরে রাতে বনানীতে নিজের বাসায় তিনি সাংবাদিকদের সামনে সেই রাতের ঘটনার বিবরণ দেন এবং ঢাকা বোট ক্লাবের নাসির উদ্দিন মাহমুদের নাম বলেন।
পরে রূপনগর থানার ওসি আরিফুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মধ্যরাতে পরীমনির বাসায় গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন।
বোট ক্লাব যেহেতু বিরুলিয়ায় সাভার থানার আওতায় পড়েছে, সেহেতু সোমবার সকালে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন পরীমনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও অমির সঙ্গে দুটো গাড়িতে করে উত্তরার দিকে যান পরীমনি। তার ছোটবোনও সে সসময় সঙ্গে ছিলেন।
পথে অমি বলে বেরিবাঁধ এলাকার ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামত তারা বোটক্লাবের সামনে থামেন।
তখন রাত প্রায় সোয়া ১২টা। বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি ফোনে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা এসে তখন বোট ক্লাবের দরজা খুলে দেন।
অমি তাদের বলেন, ক্লাবের পরিবেশ ‘অনেক সুন্দর’, তারা চাইলে নামতে পারেন। এর মধ্যে পরীর ছোটবোনের টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয় এবং তারা ক্লাবে ঢুকে বারের কাছের একটি টয়লেট ব্যবহার করেন।
এজাহারে বলা হয়, “টয়লেট থেকে বের হতেই ১ নং বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভিতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি পানের প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নং আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন।
“আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নং আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। তাতে আমার সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত লাগে।”
নাসির ইউ মাহমুদ তখন ‘অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ’ করতে থাকেন এবং ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
“১ নং আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রক্ষিত গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারে। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নং আসামিকে বাঁধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে নীলফোলা জখম করে।”
পরীমনি মামলায় বলেছেন, সাহায্য চাইতে তিনি জরুরি সেবার নম্বরে ৯৯৯ এ কল করতে গেলে তার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। তবে সঙ্গীদের সহায়তায় ‘ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা’ পান তিনি।
এজাহারে বলা হয়েছে, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ‘প্রায় অচেতন অবস্থায়’ পরীমনিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন সঙ্গীরা।
যেখানে ওই ঘটনা ঘটেছে, সেই ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তার কাছে নালিশ দিতে গিয়ে সফল হননি বলেও সংবাদ সম্মেলনের দাবি করেন পরীমনি।
এ বিষয়ে রোববার রাতে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তখন এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তার এ (অভিযোগের) বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“তবে তিনি আইজিপি স্যারের নাম কেন উল্লেখ করলেন, তা স্পষ্ট নয়। আইজিপি মহোদয়ের সাথে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি।”