যুগল পরিচালক শাহীন-সুমনের (রুহুল কুদ্দুস খান শাহীন ও ওয়াজেদ আলী সুমন) নির্মিত প্রথম ছবি এটি। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিতে একজন গডফাদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজম খান; যার আঙুলের তুড়িতে পুরো বাংলাদেশের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রিত হয়।
মেহেদি হাসান খোকনের প্রযোজনায় এ ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির সংলাপও লিখেছেন শাহীন-সুমন।
ছবির চিত্রনাট্যে গডফাদারের চরিত্র বিন্যাসের সময় আজম খানের কথা ভাবনায় ছিল না বলে চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু জানান।
আজম খানের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে ছবিটি নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে আলাপকালে বাবু বলেন, “২০০২ সালের দিকে যখন ‘গডফাদার’র চিত্রনাট্য লিখেছিলাম তখন সেই চরিত্রের জন্য আজম খানের কথা ভাবনায় ছিল না। চিত্রনাট্য লেখা সম্পন্ন হওয়ার পরিচালকরা সেই চরিত্রে আজম খানকে ভেবেছেন ও তার সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করেছেন।”
‘গডফাদার’ চরিত্রে আজম খানকেই কেন ভাবলেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক শহীন গ্লিটজকে বললেন, “ছবির চরিত্র অনুযায়ী একজন লিকলিকে অভিনয়শিল্পীকে দরকার ছিল যিনি পুরো দেশের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। সেকারণেই তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিই; তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন।”
শাহীন জানান, আজম খানকে অনেক আগে থেকেই পুরো বাংলাদেশ এক নামে চেনে। তিনিও আজম খানের গানের অনুরাগী ছিলেন; তবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। তার বন্ধু চিত্রসম্পাদক তৌহিদ হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে ছবির বিষয়ে আজম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি।
“প্রথমবার স্ক্রিপ্ট নিয়ে উনার বাসায় গিয়ে তাকে (আজম খান) আমরা খুঁজে পাইনি। পরে কলোনির মাঠে তাকে পেয়ে স্ক্রিপ্টটা দিলাম। কথায় কথায় তাকে বললাম, আপনি অভিনয়ের সম্মতি দিলে এই চরিত্রের জন্য আপনাকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি রাখতে হবে।
তার কিছুদিন পর জীবনের প্রথমবারের মতো কোনও চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি।
শাহীন বলেন, “অভিনয়ের তার মধ্যে একটুও জড়তা ছিল না। তিনি দুর্দান্ত স্ট্রেজ পারফর্মার ছিলেন, জনসম্মুখে নিয়মিত গাইতেন। ফলে অভিনয়ের সেরাটা দিয়েছিলেন তিনি। তার অভিনয়ের ক্ষমতা দারুণভাবে বিকশিত করেছেন এ ছবিতে। আমি চিন্তাও করতে পারিনি, আজম খান এত ভালো অভিনয় করবেন।”
শুটিংয়ের পর ডাবিংয়ের আগে আজম খানকে নিয়ে খানিকটা সংশয়ে ছিলেন বলে জানালেন পরিচালক শাহীন।
“ডাবিং করতে গিয়ে ভেবেছিলাম, ঠিক মতো পারব কি না। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি ডাবিং করেছেন, সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। যেহেতু উনি একজন দুর্দান্ত গায়ক সেকারণে ডাবিংয়ে বাড়তি সুবিধা হয়েছিল।”
ছবিতে আজম খানের সহশিল্পী ছিলেন চিত্রনায়ক রুবেল; ছবিতে যিনি ‘গডফাদার’র শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী বাবলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
রুবেল গ্লিটজকে জানান, শুটিংয়ের আগে থেকেই আজম খানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল; একসঙ্গে শুটিং করতে গিয়ে সেই সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছিল। আজম খানকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন তিনি।
আজম খানের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে রুবেল বলেন, “আজম ভাই ব্যক্তিগতভাবে আমাকে খুব আদর করতেন। অনেক সময় শুটিংয়ে আজম ভাইকে বলতাম, ‘ভাই এটা এভাবে করেন’। উনি আমার কথা শুনতেন, উনিও আমাকে শ্রদ্ধা করতেন।”
চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে আজম খানের কেমন ভাবনা ছিল?-এমন প্রশ্নের জবাবে রুবেল বলেন, “তিনি তো আসলে অন্য জগতের মানুষ ছিলেন। ফিল্ম নিয়ে ওই ধরনের কোনও চিন্তাভাবনা ছিল না। উনি গান ভালোবাসতেন, গান নিয়েই থাকতেন।”
‘গডফাদার’-ই আজম খান অভিনীত একমাত্র চলচ্চিত্র। ছবিতে তার গাওয়া সত্তরের দশকের শ্রোতাপ্রিয় গান ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা’ ব্যবহার করা হয়েছিল।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে আশির দশকে বিটিভিতে হীরামন নাটক সিরিজের `কালা বাউল’ পর্বে একজন বাউল শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজম খান। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে তাকে।
২০১১ সালের ৫ জুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আজম খান।