ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্য প্রণাম, ভালোবাসা ও ফুলের সুগন্ধ

টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সুচনা করে যাওয়া নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা ঘোষ, জয়া আহসানসহ আরও অনেকে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2021, 12:04 PM
Updated : 30 May 2021, 12:04 PM

২০১৩ সালের ৩০ মে হৃদরোগে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে চলে গেছেন এ পরিচালক।

ঋতু-বিয়োগের দিকে তাকে প্রণাম, ভালোবাসা আর প্রিয় ফুলের সুগন্ধ পাঠিয়ে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ফেইসবুকে লিখেছেন, “কতদিন হয়ে গেল, তোমার সাথে বসে গল্প করি না, দেখাও হয় না। ৮ বছর হয়ে গেল তুমি নেই। শুধু তোমার কাজ, তোমার শিক্ষা, তোমার ভালোবাসা, তোমার বকা আর অনেক আশীর্বাদ আছে সঙ্গে।

“নতুন করে তোমায় মিস করি না কারণ কোনোদিন ভুলতেই যে পারিনি তোমায়!”

অভিনেতা প্রসেনজিৎ ফেইসবুকে লিখেছেন, “৮ বছর হয়ে গেছে তোর কোনো মেসেজ নেই, বকাঝকা নেই, সাক্ষাৎ হয় না, ঝগড়া হয় না, নতুন নতুন গল্প নিয়ে আলোচনা হয় না। কিন্তু তুই আছিস - আমাদের মনে, আমাদের কথাবার্তায় তুই চির বর্তমান।”

“এই সময়টায় তোর থাকা খুব দরকার ছিল রে। ভালো থাকিস ঋতু।”

ঋতুপর্ণর হাত ধরে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়ক ইমেজ ভেঙে আলাদা পরিচয় তৈরি হয়েছিল প্রসেনজিতের।

অভিনেত্রী জয়া আহসান লিখেছেন, “তার সাহস ছিল চলচ্চিত্রে, সাহস ছিল জীবনে-উন্মোচনের, সীমানা পেরোনোর।”

ঋতুপর্ণের জন্ম কলকাতায় ১৯৬৩ সালের ৩১ অগাস্ট। তার বাবা-মা দুজনেই চলচ্চিত্রজগতের মানুষ ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র নির্মাতা।

ঋতুপর্ণ লেখাপড়া করেন কলকাতাতেই সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলে। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন তিনি। আশির দশকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের কপিরাইটার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। সে সময় বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্য লিখে বেশ খ্যাতিও পান। তবে তার মূল আগ্রহ ছিল চলচ্চিত্রে। সত্যজিৎ রায়ের ভাবশিষ্য ছিলেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন নব্বইয়ের দশকে। প্রথম শুরু করেন তথ্যচিত্র দিয়ে।

নয় বছরের ক্যারিয়ারে মোট ১৯টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন ঋতুপর্ণ; অর্জন করেছেন ১২টি জাতীয় পুরস্কার। এর মধ্যে হিন্দী ভাষার ‘রেইনকোট’ এবং ইংরেজি ভাষার ‘দ্যা লাস্ট লিয়ার’ ছাড়া বাকি সবগুলোই বাংলা ভাষায় নির্মিত।

১৯৯৪ সালে ‘হিরের আংটি’র মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন ঋতুপর্ণ। একই বছর তিনি নির্মাণ করেন ‘ঊনিশে এপ্রিল’ সিনেমাটি; সে বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে সেরা ফিচার সিনেমার পদক জয় করে এটি।

এছাড়াও তার পচিালিত ‘দহন’, ‘উৎসব’, ‘দোসর’, ‘দি লাস্ট ইয়ার’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ এবং ‘আবহমান’ সিনেমা জয় করেছে  জাতীয় পুরস্কার। ঐশ্বরিয়া রাই তার সঙ্গে ‘চোখের বালি’ এবং ‘রেইন কোট’ সিনেমায় কাজ করেছেন। ‘চোখের বালি’ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ এবং রাইমা সেন। সিনেমাটি সে বছর বাংলায় সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার জয় করে।

অন্যদিকে অজয় দেবগান অভিনীত ‘রেইন কোট’ সিনেমাটি জিতে নেয় সেরা হিন্দি ফিচার ফিল্মের জাতীয় পুরস্কার। তার একমাত্র ইংরেজি সিনেমা ‘দ্যা লাস্ট লিয়ার’- এ অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ২০০৭ সালে সিনেমাটি জয় করে নেয় ‘সেরা ইংরেজি ফিচার ফিল্ম’ এর জাতীয় পুরষ্কার।

২০১০ সালের বিগ বাংলা মুভি অ্যাওয়ার্ডে দশর্কদের ভোটে ‘সর্বকালের সেরা পরিচালক’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ।

২০১২ সালে ‘চিত্রাঙ্গদা’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ঋতুপর্ণ বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পান। সিনেমাটি মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা চরিত্রটিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো। পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য রচনা এবং এর কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর একটিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।