হুলিয়া: ফরীদিকে মঞ্চে খুঁজে পেয়েছিলেন তানভীর মোকাম্মেল

আশির দশকে ঢাকার মঞ্চে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হুলিয়া’-তে ‘কাস্ট’ করেছিলেন বলে জানালেন নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2021, 02:48 PM
Updated : 29 May 2021, 03:29 PM

১৯৮৪ সালে ‘হুলিয়া’র মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো কোনও চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান হুমায়ুন ফরীদি; পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্রে নিজেই এক অধ্যায় হয়ে উঠেছেন তিনি।

এর আগে মাদারীপুর, চাঁদপুরে স্কুলজীবন থেকেই মঞ্চনাটকে তার পদচারণা ছিল। সত্তরের দশকের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একটি নাট্য প্রতিযোগিতায় ফরীদির নাটক প্রথম হলে নির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নাট্যদল ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন তিনি।

নাট্যাচার্য সেলিম আল-দিনের শকুন্তলা নাটকের তক্ষক চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকার মঞ্চে অভিষেক ঘটে ফরীদির। তারপর বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে কাজ করেছেন তিনি। কাজ শুরু করেছিলেন টিভি নাটকেও।

হুমায়ুন ফরীদির ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রথম চলচ্চিত্রের নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল বললেন, মঞ্চে ফরীদির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েই তাকে চলচ্চিত্রে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।

তাতে ‘কাস্ট’ করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি বিবেচনায় ছিল?-এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর মোকাম্মেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চরিত্রটার জন্যে একটা গ্রাম্য অবয়ব (লুক) দরকার ছিল। যেটা আমার মনে হয়েছে হুমায়ুন ফরিদীর ভাল ছিল।

“আর দ্বিতীয় কারণটা অবশ্যই হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়দক্ষতা। ফরিদী একজন অসাধারণ অভিনেতা। আমি মূলতঃ মঞ্চে তার অভিনয় দেখেছিলাম এবং আমার খুব ভাল লেগেছিল। তাই ‘হুলিয়া’-র চরিত্রটার জন্যে তার কথাই আমার প্রথম মনে হয়েছিল।”

ষাটের দশকে প্রগতিশীল সংগঠনের কর্মীদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে হুলিয়া বুকে নিয়ে ঘরছাড়া এক তরুণকে নিয়ে লেখা কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতাকে ক্যামেরার ফ্রেমে তুলে এনেছেন তানভীর মোকাম্মেল।

চলচ্চিত্রে সেই উত্তাল সময়ে আইয়ুবী স্বৈরশাসনের ভয়ংকর রূপ, শেখ মুজিবের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তরুণদের রাজনীতি সচেতনতাও উঠে এসেছে।

কবিতার প্রধান চরিত্র খোকার ভূমিকায় প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলে আসাদুজ্জামান নূর; এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দেখা গেছে ফরীদিকে।

প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এতে অভিনয় করেছিলেন বলে জানালেন নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল।

তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “হুলিয়া” তার প্রথম ছবি বলে এ ছবিটাতে ফরীদি খুব গভীর আন্তরিকতা নিয়েই কাজ করেছিলেন।

“আমি পরে শুনেছি, অনেক নির্মাতার সঙ্গে হুমায়ুন ফরীদির কিছু ব্যবহারিক সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু ‘হুলিয়া’ চলচ্চিত্রে আমার কোনও সমস্যা হয়নি বরং তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আমার খুবই ভাল।”

হুমায়ুন ফরীদি একজন ‘জাত অভিনেতা’ বলে বিবেচনা করেন নির্মাতা তানভীর; তিনি জন্মগতভাবেই তিনি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বলে মনে করেন তিনি।

“তার প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই যেন অভিনয় করে। বিশেষ করে বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশে তার মুখের নানা রকম ভঙ্গিমা সিনেমার ক্লোজ আপের জন্যে খুবই কার্যকরী। তার ব্যবহারিক কিছু সমস্যা থাকলেও অভিনয়ের ক্ষেত্রে ফরিদী জন্মগতভাবেই ছিলেন প্রতিভার অধিকারী।

“তারপর দীর্ঘ দিন মঞ্চে কাজ করার ফলে তার অভিনয়দক্ষতাটা আরো শাণিত হয়েছে। এটা দুঃখজনক যে বাংলাদেশে শিল্পসম্মত ছবি তেমন তৈরী হয় না। হলে ফরীদি আরও ভালো ভালো চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। সে দক্ষতাটা হুমায়ুন ফরীদির ছিল।”

হুলিয়া চলচ্চিত্রে আসাদুজ্জামান নূর, ফরীদি ছাড়াও অভিনয় করেছেন লিলি চৌধুরী, ডলি আনোয়ার, শামীম আকতার, লাবনী, আলী যাকের, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, ইনামুল হক, খালেদ মাহমুদ, সোমেন, সালেক খান, আব্দুল আওয়ালসহ আরও অনেকে।

প্রায় ২৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটি সম্পাদনা করেছেন সাইদুল আনাম টুটুল।

‘হুলিয়া’ মুক্তির পর ১৯৮৫ সালে প্রয়াত নির্মাতা শেখ নিয়ামত আলীর ‘দহন’ ছবির মধ্য দিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে যাত্রা করেন ফরীদি; এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পান।

শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় ‘সন্ত্রাস’ ছবির মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে কাজ শুরুর পর ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘বীরপুরুষ’, ‘লড়াকু’সহ তার ২৫টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় দর্শকমহলে আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন ফরীদি।

তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে-একাত্তরের যীশু, সন্ত্রাস, ব্যাচেলর, জয়যাত্রা, মাতৃত্ব, বীরপুরুষ, বিশ্বপ্রেমিক, শ্যামলছায়া। মাতৃত্বে অভিনয় করে ২০০৪ সালে তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।