আফজাল-সুবর্ণার যে নাটকে গানও গেয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি

চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের অনেক চরিত্রকে অমর করে যাওয়া অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি অভিনয়ের পাশাপাশি গানে ক্যারিয়ার গড়লেও অনেকের চেয়ে ‘ভালো’ করতেন বলে মনে করেন সুরকার মো. শাহনেওয়াজ; যার সুরে আশির দশকের শেষভাগে একবার গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ফরীদি।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2021, 10:06 AM
Updated : 29 May 2021, 03:29 PM

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত খণ্ডনাটক ‘সমুদ্রে গাঙচিল’ এ গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর কথায় ও মো. শাহনেওয়াজের সুরে ‘দেখা হয় তবুও’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন ফরীদি।

মোহন খানের রচনায় নাটকটি প্রযোজনা করেন প্রয়াত প্রযোজক জিয়া আনসারী।  নাটকটিতে অভিনয়ে ফরীদি ছাড়াও ছিলেন আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা।

প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৬৯তম জন্মদিনে সেই গান নিয়ে আলাপকালে মো. শাহনেওয়াজ জানালেন, দারুণ গেয়েছিলেন ফরীদি; নাটকে গানটি প্রচারের পর দেশজুড়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। তিনি গানে নিয়মিত হলে এখকার অনেক শিল্পীদের তুলনায় ভালো গাইতেন তিনি।

‘আশা ছিল মনে মনে প্রেম করিব তোমার সনে’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা বন্ধু চিরকাল’, ‘সোনামুখি সুই দিয়ে সেলাই করা কাজ’, ‘জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আজো আমি’র মতো জনপ্রিয় গানের সুরকার শাহনেওয়াজের সঙ্গে পরবর্তীতে আরও গানে কণ্ঠ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ফরীদি।

শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ও সময়-সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে দেখা করত; নতুন গানে কাজের আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। আমি সেভাবে পরিকল্পনাও করেছিলাম। কিন্তু শুটিংয়ের ব্যস্ততায় করা হয়ে উঠেনি ওর। তারপরও তো আমাদের ছেড়েই চলে গেল ও।”

‘সমুদ্রে গাঙচিল’ নাটকের রচয়িতা মোহন খান জানালেন, নাটকের প্রধান দুই চরিত্রে আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফাকে নেওয়া হয়েছিল। পরে নাটকের গল্প শুনে ফরীদির আগ্রহের কারণে আরেকটি চরিত্র লিখে তাকেও নাটকে নেওয়া হয়েছিল।

হুমায়ুন ফরীদি

নাটকের শুটিংয়ে কক্সবাজার যাওয়ার আগেই ঢাকায় গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন করা হয়েছিল।

শাহনেওয়াজ জানালেন, রেকর্ডিংয়ের জন্য ফরীদিকে নিয়ে রাজধানীর কাকরাইলের একটি স্টুডিওতে গিয়েছিলেন তিনি; তবে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে সেখানে সম্ভবপর হয়নি। সেদিনই বিটিভির স্টুডিওতে গিয়ে সন্ধ্যা থেকে টানা রাত ১২টা পর্যন্ত গানের রেকর্ডিং করেছিলেন ফরীদি।

তার আগে হুমায়ুন ফরীদির কোনও গানের রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল না জানিয়ে মো. শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “সেটাই তার প্রথম গান ছিল। কিন্তু গেয়েছিল দারুণ। ও তো সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড ছেলে। গড গিফটেড ট্যালেন্ট যাকে বলে!”

‘গায়ক’ ফরীদিকে নিয়ে তার তৎকালীন স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার বয়ানে সেই সময়ের একটি মজার ঘটনার কথা তুলে আনলেন মোহন খান।

তিনি বলেন, “শুটিংয়ে কক্সবাজার যাওয়ার আগের রাতে হুমায়ুন ফরীদি-সুবর্ণা মুস্তাফা দম্পতির বাসায় নাটকের শিল্পী, নির্মাতা কলাকুশলীদের আড্ডায় সুবর্ণা মুস্তাফা নাটকের প্রযোজক জিয়া আনসারীকে বলেছিলেন, ‘জিয়া ভাই, ফরীদিকে নিয়ে তো গান করলেন কিন্তু ঝামেলা হইছে আমার। আর বইলেন না, বাসায় যেই আসে তাকেই সেই গানটা শোনায়। আমাকেও শুনতে হয়’।”

ফিশিং ট্রলারে মধ্যে ফরীদির গান গাওয়ার দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল।

কক্সবাজারে শুটিংয়ে গিয়েও আড্ডার মাঝে গানটি তিনি গেয়ে উঠতেন ফরীদি।

মোহন খান বলেন, “ফরীদি খুব মজার মানুষ ছিল। শুটিংয়ে গিয়ে আমি আর আফজাল একসঙ্গে থাকতাম। রাত ৩টার দিকে এসে বলত, ‘তোদের গানটা শোনাই’। আমি মনে করি, ফরীদি ওই নাটকটা দারুণভাবে করেছিলেন, গানটা দারুণভাবে করেছিলেন।”

তারকা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির কণ্ঠে গানটি প্রকাশের পর তুমুল সাড়া পড়েছিল তখন; পত্রিকাগুলোও বিস্তর লেখালেখি হয়েছিল। গানটি প্রকাশের চার দশক পরও অনেকে দেশের বাইরে গানটি নিয়ে নিজেদের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে লিংক পাঠান বলে জানালেন মোহন খান।

অনেকে নতুন করে গানটি গাওয়ার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন সুরকার শাহনেওয়াজকে; তিনি আপাতত ‘না’ করেছেন বলে জানালেন তিনি।

বহুমাত্রিক অভিনয়শিল্পী হুমায়ুন ফরীদি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মারা যান।

তিনি পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে। তার অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চ নাটক দিয়ে। পরে অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন।

ঊনিশশ আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে কয়েকজন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন। ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।

নীল নকশার সন্ধানে, দুরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙনের শব্দ শুনিসহ তার অভিনীত বহু নাটক দীর্ঘদিন মনে রাখবে এ দেশের মানুষ।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এই শক্তিমান অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে একাত্তরের যীশু, সন্ত্রাস, ব্যাচেলর, জয়যাত্রা, মাতৃত্ব, বীরপুরুষ, বিশ্বপ্রেমিক, শ্যামলছায়া। মাতৃত্বে অভিনয় করে ২০০৪ সালে তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।

ফরীদি প্রথমে একটি বিয়ে করলেও পরে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। তবে ২০০৮ সালে ফরীদি-সুবর্ণার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক মেয়ে রয়েছে ফরীদির।