টালিগঞ্জের অভিনেত্রীদের নিয়ে বিজেপি নেতার টুইট ঘিরে বিতর্ক

বিজেপি নেতা তথাগত রায় হারের জন্য আক্রমণ করলেন শ্রাবন্তী, পায়েল ও তনুশ্রীকে। প্রতিবাদে কাঞ্চন।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2021, 03:04 PM
Updated : 5 May 2021, 04:15 PM

পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বার জয়ী হয়ে সরকার গড়তে চলেছে তৃণমূল। হার হয়েছে বিজেপি’র। তৃণমূলের মতোই নিজেদের দলেও তারকাদের প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তবে হিরণ ছাড়া কেউ জেতেননি।

আর এই হারের জন্য শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার ও তনুশ্রী চক্রবর্তীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়।

তিনি এই তিন অভিনেত্রীকে ‘নগরের নটী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কলকাতার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, বিজেপির হয়ে নির্বাচনে- বাঁকুড়া থেকে তনুশ্রী, বেহালা পূর্ব থেকে পায়েল এবং পশ্চিম থেকে শ্রাবন্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। নির্বাচন শুরু হওয়ার ঠিক আগে তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে রং খেলেছিলেন এই তিন অভিনেত্রী। একসঙ্গে সেলফি তুলে পোস্টও করেছিলেন।

তখনই নিন্দায় সরব হয়েছিলেন তথাগত। মঙ্গলবার আবারও একই প্রসঙ্গে তিন নায়িকাকে ‘নগরের নটী’ বলে আক্রমণ করেন তিনি।

টুইটারে তথাগত লেখেন, “পায়েল শ্রাবন্তী পার্নো ইত্যাদি ‘নগরীর নটীরা’ নির্বাচনের টাকা নিয়ে কেলি করে বেড়িয়েছেন আর মদন মিত্রর সঙ্গে নৌকাবিলাসে গিয়ে সেলফি তুলেছেন (এবং হেরে ভূত হয়েছেন) তাঁদেরকে টিকিট দিয়েছিল কে? কেনই বা দিয়েছিল? দিলীপ-কৈলাশ-শিবপ্রকাশ-অরবিন্দ প্রভুরা একটু আলোকপাত করবেন কি?”

এই পোস্টোর নিচেই তিনি সংশোধনী দিয়ে লেখেন, “সংশোধন: মদন মিত্রর সঙ্গে সেলফি তুলেছিলেন পার্নো মিত্র নয়, তনুশ্রী চক্রবর্তী।”

মঙ্গলবারে এর জবাব ফিরিয়ে দিয়েছেন শ্রাবন্তী ও পায়েল। আর বুধবার দুটি টুইটে তনুশ্রী নিন্দা জানান।

তিনি সাবেক আইনজীবী, বিজেপি’র প্রাক্তন সভাপতি সুষমা স্বরাজ এবং অভিনেত্রী মডেল ও রাজনীতিবিদ স্মৃতি ইরানির কথা উল্লেখ করে বলেন, “তারও তো এই দলেই ছিলেন বা আছেন। তারাও অনেক কাজ করেছেন। তাদেরও কি এভাবে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। অথচ আমাদের শুনতে হচ্ছে।”

তনুশ্রী দাবি করেন, “এমন উক্তির মধ্যে দিয়ে বিজেপির প্রবীণ নেতা দেশের সমস্ত নারীকে অপমান করলেন। অথচ, দল কিন্তু নারীশক্তিকে আলাদা সম্মান দেয়।”

তিনি আরও লেখেন, “পরাজিত হলেও আমরা এখনও দলীয় সদস্য। সেই দলের এক নেতার থেকে এই ধরনের মন্তব্য সত্যিই আমাদের তিনজনকে শুধুই অপমানিত করেনি, আহতও করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও বিজেপি’র মতাদর্শকে সম্মান করি। মনে করি, দল নীতিগত দিক থেকে এখনও বিচ্যুত হয়নি।”

এদিকে থেমে নেই অন্যান্য শিল্পীদের প্রতিবাদ।

ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৃণমূল সমর্থক কলকাতার অভিনেত্রী নুসরাত জাহান বলেন, “আমি বরাবরই বলে এসেছি বিজেপি নারীর প্রধান শত্রু। এই দল কখনই নারীকে সম্মান করতে পারেনি, পারবেও না। মেয়েদের ওরা এ ভাবেই দেখে।”

বামপন্থি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের মন্তব্য “এইসব অভিনেত্রীরা কি জানতেন না যে বিজেপি মহিলাদের কী চোখে দেখে তাহলে সেই দলে যোগ দিতে গেলেন কেন? এখন তো নিজেরাই লজ্জায় পড়ে গেলেন।”

এদিকে চলচ্চিত্র জগতের সহকর্মীদের হেয় করার প্রতিবাদে বিরোধী দলের থেকেও মুখ খুলেছেন কলকাতার উত্তরপাড়ার তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিক।

তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “আমার অভিনেত্রী বন্ধুদের বিরুদ্ধে একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের করা এই মন্তব্য সত্যি নিন্দনীয়। আমাদের পেশা নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে তার প্রতিবাদ আমি জানাবো দলমত নির্বিশেষে।”

এদিকে উল্টো সুরও বেজেছে।

তথাগত রায়ের পক্ষে কথা বলেছেন বিজেপি সমর্থক টালিগঞ্জের অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র।

তিনি হিন্দুস্তান টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি মনে করি না তথাগত রায় কোনো ভুল করেছেন। একদম ঠিক করেছেন। যদিও তথাগত রায়ের শব্দচয়ন ঠিক হয়নি।”

এই অভিনেত্রীর দাবি, “তিনি কিন্তু তার দলের লোকদের প্রশ্ন করেছেন। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।”

অন্য দলের নেতার সঙ্গে এভাবে নাচ জনগন ভালোভাবে মেনে নেয়নি বলে বিশ্বাস করেন কাঞ্চনা।