বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়েছেন সত্যজিৎ রায়: শর্মিলা ঠাকুর

কিংবদন্তি বাঙালি নির্মাতা সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 06:06 PM
Updated : 21 Jan 2021, 06:06 PM

ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২১-এর অংশ হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে তার সঙ্গে অভিনয় জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘সত্যজিৎ রায়: জাতীয় নাকি বৈশ্বিক’ শীর্ষক সেমিনারে অনলাইনে যোগ দেন শর্মিলা ঠাকুর।

তিনি বলেন, “চাইলেই বিদেশি ভাষায় সিনেমা নির্মান করতে পারতেন সত্যজিৎ, কিন্তু তা না করে বাংলা ভাষাকেই আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে নিয়ে গেছেন তিনি।”

সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, “সে সময় রায় সাহেব অতটা অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন না, খুব বেশি অর্থকড়ি ছিল না, একটা শট দু থেকে তিনবারের বেশি নেয়ার সুযোগ ছিল না, সেই অবস্থা থেকে বিশ্ব-দরবারে জননন্দিত হয়ে ওঠার পেছনে শ্রম ও মেধার অবদানই বেশি। আজকের তরুণ নির্মাতাদের জন্য সত্যজিৎ রায় অনেক বড় অনুপ্রেরণার নাম বলেও মন্তব্য করেন শর্মিলা ঠাকুর।”

সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ১৪ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল শর্মিলা ঠাকুরের; পরবর্তীকে বলিউডে অভিনয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

কলকাতা থেকে অনলাইনে সেমিনারে যোগ দেন আরেক বর্ষীয়ান অভিনেতা ধৃতিমান চ্যাটার্জি।

তিনি বলেন, “সত্যজিৎ রায় কোন নির্দিষ্ট জাতিসত্তার নন, তিনি সারা বিশ্বের জন্য চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক দৃষ্টান্ত। সত্যজিৎই একমাত্র নির্মাতা যিনি সিনেমায় রাজনীতিকে এতো জীবন ঘনিষ্ট করে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।”

‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার শুটিংকালের নানা পরিস্থিতি নিয়ে সত্যজিৎ রায়তে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

সেমিনারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি জানান, পথের পাঁচালী তাকে এতটাই নাড়া দিয়ে ছিলো যে, ‘মহানগর’ সিনেমা দেখার জন্য সেই বালক বয়স প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নীলফামারি থেকে ঢাকা এসেছিলেন।

১৯৭২ সালে যখন ঢাকার পল্টন ময়দানে সত্যজিৎ রায় এসেছিলেন, তাকে দেখার জন্য লক্ষাধিক মানুষ এসে ছিলো উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ওনাকে খুব সম্মান করেছিলেন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জীবন যে মসৃণ কোনো পথ নয়, বরং খাড়া পাহাড়ি ঢালের মতো বন্ধুর, সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র সেই শিক্ষাই দেয়’।

সেমিনারে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র জীবন, জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আরো কথা বলেন বিচারপতি রিফাত চৌধুরী এবং চলচ্চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।