বাংলা চলচ্চিত্রের মাইলফলক হিসেবে পরিচিত বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত তিন ছবি ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’ এবং ‘অপুর সংসার’। আর চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান চরিত্র অপু বাঙালি মনে নানানভাবেই দাগ কেটেছে।
সেই অপুকে নিয়ে ‘অভিযাত্রিক’ ছবিটি তৈরি করে কলকাতার পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র নিজের কাজের মাত্রায় যোগ করেছেন সম্মানের মাত্রা। এরই মধ্যে ছবিটি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভল অফ ইন্ডিয়া আইএফএফআই’য়ের ইন্ডিয়ান প্যানারোমা’য় যুক্ত হয়েছে। আর ২৬তম কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রদর্শনের জন্য তালিকভুক্তিও অর্জন করেছে।
সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শুভ্রজিৎ টাইম অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ষাট বছর পর অপু ফিরে এসেছে। নিজের দেশ থেকে এরকম একটা সম্মান পাওয়াতে সত্যি আনন্দিত আমি। আসুন আমরা অপুর এই ভ্রমণক্ষুধা উপভোগ করি। ‘অপুর সংসার’ ছবির কাহিনির পর থেকেই শুরু হয়েছে এই ছবির গল্প।”
সময়ভিত্তিক এই সিনেমা নিয়ে অনেকেই সত্যজিতের ‘অপু টিলজি’র সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে পরিচালকের ব্যাখ্যা অন্য।
তিনি বলেন, “আমি শুধু বলতে চাই ছবির প্রধান চরিত্রের ভ্রমণপিপাসাকে কেন্দ্র করে কাহিনি এগিয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে বাবা-ছেলে শ্রদ্ধার বন্ধন। ছয় বছরের ছেলে, যার নাম কাজল। এটা একটা নতুন চরিত্র।”
“আরও আছেন লিলা, যার উপস্থাপন দেখা যায়নি অপু ট্রিলজিতে। তবে উপন্যাসে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সঙ্গে আরও যুক্ত করা হয়েছে অপু’র এই ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক তার এক বন্ধু। তিনি উপন্যাসেরও একটি অংশ আর অপু এবং কাজলের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
আমরা বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাসের স্পর্শ না করা চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করেছি। তাই সত্যজিতের ছবির সঙ্গে তুলনা না করে বরং আগে ছবিটি দেখে তারপর মন্তব্য করতে আমি অনুরোধ করবো।”
প্রায় এক দশকের চলচ্চিত্রের জীবনে ‘অভিযাত্রিক’ ছবিটি পরিচালকের একটি পরিপক্ক ছবি হিসেবে আখ্যা পাওয়া শুভ্রজিতের কাজের প্রেরণা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সাক্ষাৎকারে তাই তিনি বলেন, “সত্যাজিৎ রায়ের চরিত্রের মধ্যে অপু হিসেবে সৌমিত্র কাকুর কাজই আমাকে চলচ্চিত্রে কাজ করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আর সেটা ‘অপুর সংসার’ থেকেই।”
বিভিন্ন সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও এখনও ছবিটি সার্বিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
কবে মুক্তি পেতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভ্রজিৎ বলেন, “পুরোটাই নির্ভর করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। এটা ঠিক দুর্গাপূজায় বড় কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। তবে মানুষ এখন রেস্তোরাঁ ও পাবে যাচ্ছে, ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে গেছে। তবে সিনেমা হল কেনো নয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির টেকানোর জন্য এখন বড় ছবি মুক্তি দেওয়া উচিত।”
এই পরিচালক বর্তমানে তার পরের ছবি ‘মায়ামৃগ’র প্রাথমিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ তিনটি উপন্যাসের একটি ‘দুই বোন’ অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য তৈরি করা হচ্ছে। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৩ সালে।
ছবিতে অভিনয় করবেন অপ্রিতা চক্রোবর্তী, রিতাবরি চক্রোবর্তী, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অনিন্দ চট্টোপাধ্যায়, দিতিপ্রিয়া রয়, সুদিপা চক্রবর্তী এবং বরুণ চন্দ্র।