২০২০ থেকে মহামারীর কারণে টিকিট বিক্রির যে ভাটা চলছে, হলিউডের সিনেমা হলের কর্তৃপক্ষরা আশা করছেন ২০২১ সালে রুপালি পর্দায় জোয়ার আসবে সুপারহিরো ও স্পাই অ্যাকশন নির্ভর ছবি মুক্তির মাধ্যমে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিলিয়ে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সিনেমা হল এখনও বন্ধ রয়েছে। আর হলিউড চলচ্চিত্র জগতের শতকরা ৮০ ভাগ আয় কমে গেছে এই কারণে।
তবে আশার আলো জ্বালিয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। এর ফলে হল কর্তৃপক্ষ ও চলচ্চিত্র-বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন এবার ভ্যাকসিনের বদৌলতে ‘জেমস বন্ড’, ‘ব্ল্যাক উইডো’সহ অন্যান্য সুপারহিরোরাও বেঁচে যাবেন, ফিরবে সিনেমা হলের জৌলুস।
এই বিষয়ে বক্সঅফিসপ্রো ডটকম’য়ের বিশ্লেষক শন রবিন্স রয়টার্সকে বলেন, “আমার মনে হয়ে ২০২১ জুড়ে আমরা নানান রকম উন্নয়ন দেখবো। তবে সেটার জন্য আমাদের কিছু সময়ও লাগবে। রাতারাতি পরিবর্তন কোনোভাবেই আশা করা ঠিক হবে না।”
হলিউডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মহামারীর কারণে বারবার ছবি মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। প্রতিবার পেছানোর সঙ্গে তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কখন মহামারীর পরিস্থিতি হালকা হবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এই আশায় পরিবেশনার ক্ষেত্রেও ধীর গতি দেখা গেছে। এছাড়া দর্শকরা এখন ঘরেই স্ট্রিমিং মিডিয়াতে বিভিন্ন ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছে।
আর এই পরিস্থিতিতে হলিউড বড় বাজেটের ছবিগুলো হলে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনায় মেতেছে, যেগুলো ২০২০ সালে আসার কথা ছিল।
এমজিএম এবং কমক্যাস্ট কর্প’স ইউনিভার্সাল পিকচার্স’য়ের জেমস বন্ডের নতুন ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’ এপ্রিলে মুক্তি দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়ে আছে। অন্যদিকে ওয়াল্ট ডিজনি কো. এবং মার্ভেল স্টুডিওস’য়ের ‘ব্ল্যাক উইডো’ এবং ইউনিভার্সাল’য়ের ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ মুক্তির তারিখ ঠিক হয়ে আছে মে মাসে।
এছাড়াও গ্রীষ্মে প্রত্যাশিত ছবির তালিকায় আছে ভায়াকম সিবিএস ইন্ক’য়ের প্যারামাউন্ট পিকচার্সয়ের ‘টপ গান: ম্যাভরিক’, ইউনিভার্সাল’য়ের অ্যানিমেইশন ‘মিনিয়নস: দি রাইজ অফ গ্রু’ এবং মার্ভেলের ‘শ্যাং-চি অ্যান্ড দি লেজেন্ড অফ দি টেন রিংস’।
২০২১ সালে ডিসেম্বরে ক্রিস্টমাস উপলক্ষ্যে মুক্তি দেওয়া হয় ‘ওয়ান্ডার উইমেন ১৯৮৪’। স্ট্রিমিং মিডিয়া এইচবিও ম্যাক্সে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হলেও, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রসের তথ্যানুসারে এই ছবির টিকিট বিক্রির পরিমাণ ছিল আশাতীত।
এই প্রতিষ্ঠান এবার একই কৌশল খাটিয়ে স্ট্রিমিং মিডিয়া ও হলে- দুই মাধ্যমেই ছবি মুক্তির পরিকল্পনা করছে। ২০২১ সালে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল এসব ছবি। এরমধ্যে রয়েছে ‘ডিউন’ এবং গডজিলা ছবির রিমেইক ‘গডজিলা ভার্সেস কং’।
এক গবেষণামূলক লেখায় ‘বি. রাইলি’র বাজার বিশ্লেষক এরিক অল্ড উল্লেখ করেন, “ওয়ান্ডার উইমেন ১৯৮৪’ ছবিটি আবার দর্শকদের বড় পর্দায় ছবি দেখার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, “এই থিসিস এটাই প্রমাণ করে যে, যখন ভোক্তারা আকর্ষণীয় উপাদান দেখার জন্য সিনেমা হলে যাওয়ার অনুমাতি পাবে তখন তারা আবারও ‘ছবিখাদক’য়ে রূপান্তরিত হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি রাষ্ট্রে সিনেমা হল পরিচালনা করে ‘বিঅ্যান্ডবি থিয়েটার’। তাদের তথ্যানুসারে ‘ওয়ান্ডার উইমেন ১৯৮৪’ ছবির সব টিকিট ক্রিস্টমাসের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। যদিও সামাজিক-দূ্রত্ব বজায় রাখতে তারা ২৫ থেমে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করেছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের উপ-সভাপতি ববি ব্যাগবাই ফোর্ড বলেন, “সপ্তাহের পর সপ্তাহ আমরা দেখেছি দর্শকদের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে।”
তবে তিনি আশা করেন না এভাবে ‘ইন্ডাস্ট্রি হিট’ হবে।
তার কথায়, “ভ্যাকসিনের প্রসার ও দর্শকদের উপস্থিতির সীমা না উঠিয়ে দেওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ দেখছি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পুরোদমে ফিরে আসতে ২০২১ সালের বছর শেষের ছুটি পর্যন্ত গড়াতে হতে পারে।”