প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রোববার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল, যাতে সদ্য প্রয়াত আলী যাকেরকেও স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক শ্রেণির লোকেরা জাতির পিতার ভাস্কর্য উপড়ে ফেলতে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি প্রদান করছে।
“এইরকম একটা সময়ে কোনোভাবেই আমরা মঞ্চ খালি রাখতে পারি না। একদিকে সৃষ্টিশীল কাজ অন্যদিকে জনগণের সাথে তার সংযোগ স্থাপন- উভয়ই আমাদেরকে করতে হবে। এটিই আজকের দিনের প্রত্যয় হওয়া উচিত।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই নেতা জানান, আগামী ১ ডিসেম্বর বিকালে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ৫২টি সংগঠন মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ ঢাকার বাইরে মঞ্চ নাটকের মানোন্নয়নের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “সারাদেশে মঞ্চ নাটকের অবস্থা শোচনীয়। সেখানকার হলগুলো মোটেও উপযোগী না। এ বিষয়গুলো সংগঠনকে দেখতে হবে, এবং পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
মামনুর রশীদ বলেন, “দেশে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। একজন ক্রিকেটার বছরে একা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে, সেই টাকা দিয়ে আমরা এক হাজার নাট্যকর্মীকে সার্বক্ষণিক নাট্যকর্মীতে পরিণত করতে পারতাম।”
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এই অনুঠানমালা সদ্য প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকেরকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়েজিদ বলেন, “মঞ্চে আলী যাকেরের বিশাল অবদান। বহু বছর পর পর এমন মঞ্চপ্রেমী আসেন। আমাদের বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আজকের এই অনুষ্ঠান তাকে উৎসর্গ করেছি।”
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ বলেন, “দিনে দিনে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। আমরা বিভিন্ন নাট্যব্যক্তিত্বসহ হারাচ্ছি গুণী শিল্পীদের। আমাদের অনেক প্রিয় মানুষ চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।
“একদিন হয়ত এই মহামারী দূর হবে, অর্থনৈতিক সংকটও দূর হবে। কিন্তু যারা চলে গেছেন, তাদের অভাব পূরণ হবেনা কোনোদিন।”
অনুষ্ঠানে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের বিগত দিনের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয় রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, আতাউর রহমান, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের ও ম হামিদকে।
এছাড়া মহাসচিব হিসেবে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় ঝুনা চৌধুরী ও আকতারুজ্জামানকে। মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয় নাট্যকার-নির্দেশক এস এম সোলায়মানকে।
বাংলাদেশের সব নাট্যদলের একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসেবে ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
নাট্য আন্দোলনের পাশাপাশি নাট্যকর্মীদের পেশাগত স্বার্থসংরক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নাটকের মঞ্চ তৈরি করা, জাতীয়ভিত্তিক নাট্যোৎসব আয়োজন করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কাজ করছে এই ফেডারেশন।