মহামারীকালে ‘বলিউডি দাওয়াই’ চান প্রযোজক, হল মালিকরা

মহামারীকালে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরাতে ‘সাময়িক সময়ের জন্য’ বলিউডের কয়েকটি চলচ্চিত্র একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তির অনুমতি চাইছেন প্রযোজক, হল মালিক ও পরিচালকরা।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2020, 09:57 AM
Updated : 20 Nov 2020, 08:20 PM

সপ্তাহ দুয়েক আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস এ দাবি তোলেন।

চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, বাংলাদেশ প্রেক্ষাগৃহ প্রদর্শক সমিতি ও প্রযোজকদের সঙ্গে বৈঠক থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন এফডিসির শীর্ষ সংগঠকরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে বলিউডের ছবি আনার বিষয়ে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও সাবেক প্রযোজক নেতা শামসুল আলম।

করোনাভাইরাসের মধ্যে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর ১৬ অক্টোবর থেকে সিনেমা হল খুললেও প্রযোজকরা তেমন ছবি মুক্তি না দেওয়ায় দর্শক খরায় হলগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে বলে মালিকরা জানিয়েছেন।

প্রযোজকদের হাতে মুক্তি দেওয়ার মতো ২০টি চলচ্চিত্র থাকলেও লোকসানের শঙ্কায় সেগুলো মুক্তি দিচ্ছেন না। ফলে চলচ্চিত্রের ‘কৃত্রিম সঙ্কটে’র মধ্যে সিনেমা হল বাঁচাতে ‘সাময়িক দাওয়াই’ হিসেবে বলিউডের ছবি আনতে চাইছেন হল মালিকরা, তাকে সমর্থন জানিয়েছেন পরিচালক ও প্রযোজকরাও।

চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে এফডিসির শীর্ষ সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘মতানৈক্য’ দেখা গেলেও বলিউডের ছবি আনার বিষয়ে একাট্টা হওয়ার কথা বলছেন তারা।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাগৃহ প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলছেন, সিনেমা হল বাঁচাতে এখন বলিউডের ছবি আনা দরকার। হলে দর্শক ফিরলে হল মালিকরা অন্তত চলমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। হলগুলো এখন ধুঁকছে। সেগুলো একবার বন্ধ হয়ে গেলে আর কখনো চালু করা যাবে না।

দাবির সঙ্গে নিজেদের যুক্তি তুলে আনার পাশাপাশি বলিউডের ছবি দেশের সিনেমা হলে নিয়মিত মুক্তি পেলে চলচ্চিত্রের দুরাবস্থা আরও বাড়ার শঙ্কার কথাও মানছেন তারা।

সে কারণে দেশের চলচ্চিত্রের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়- সে বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত এক বছরের জন্য পাঁচটি কিংবা দশটি বলিউডের সিনেমা মুক্তির অনুমতি চাইবেন তারা; দুই মাসে একটি বলিউডের ছবি সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ চালানোর নিয়ম করতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে আলোচনা করবেন পরিচালক, প্রযোজক ও হল মালিকরা।

ছয় মাস কিংবা এক বছরের মধ্যে চলচ্চিত্রের অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ হলে বলিউডের সিনেমা আর আনার প্রয়োজন থাকবে না বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এর আগেও বলিউড ও টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় আমদানি করে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মৃক্তি দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের দিকে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হিন্দি ছবির আমদানি বন্ধের প্রতিবাদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) মানববন্ধন করেছিলেন শিল্পী সমিতির তৎকালীন সভাপতি চিত্রনায়ক শাকিব খান, পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রনায়ক ওমরসানীসহ অনেকে।

আন্দোলনের চার বছরের মাথায় মুশফিকুর রহমান গুলজার বলছেন, “পরিস্থিতির কারণে আমরা এখন বলিউডের সিনেমা আনার কথা বলছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আমরা বলব, বলিউডের সিনেমা বন্ধ করতে হবে।

“খাদ্য সঙ্কট হলে বাইরে থেকে সাময়িকভাবে ওই মৌসুমের জন্য তা আমদানি করা হয়। আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি, এখনও এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।”

হিন্দি ছবিতে দর্শক ফিরবে?

২০১৫ সালে দেশের ৫০টি সিনেমা হলে বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান অভিনীত ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তি দেওয়া হলেও ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল; দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি।

সাফটা চুক্তির আওতায় কয়েক দশকে ভারত থেকে আমদানি করা ‘যুদ্ধশিশু’, ‘খোকা’, ‘খোকা ৪২০’, ‘বেপরোয়া’, ‘বেলা শেষে’, হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘পোস্ত’, ‘জিও পাগলা’, ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’, ‘বিসর্জন’র মতো ছবিগুলোও দর্শক টানতে পারেনি।

তাহলে ফের বলিউডের ছবির শরণ নিচ্ছেন কেন?

দীর্ঘদিন ধরে হল বন্ধ থাকার পর ‘দর্শকদের চমক দিতেই’ বলিউডের ছবি আনতে চান প্রদর্শক সমিতির নেতা সুদীপ্ত কুমার দাস।

তার যুক্তি, এর আগে যে ছবিগুলো দেশে এসেছে তার সবগুলোই পুরানো। ফলে দেশে মুক্তি পাওয়ার আগেই দেশের দর্শকরা ছবিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে দেখে ফেলাতে আর দর্শক টানতে পারেনি। সে কারণে এবার বলিউডের সঙ্গে একই দিনে দেশের প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তির আবেদন করবেন তারা।

মুশফিকুর রহমান গুলজার বলছেন, দেশে সালমান খান, শাহরুখ খানদের মতো তারকা বলিউড অভিনেতাদের দর্শকশ্রেণি আছে। তাদের নতুন ছবি আনা গেলে দর্শক ফিরবে বলে আশা করছেন।

তবে চলচ্চিত্র নীতিমালায় বলা আছে, ভারতের কোনও ছবি মুক্তির দিনই বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া যাবে না। কয়েক মাস পর সেটি মুক্তি দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সুদীপ্ত কুমার দাস।

দেশের চলচ্চিত্র মুক্তি না দিয়ে বলিউডের ছবি আমদানি কেন?

প্রযোজকের কাছে মুক্তি দেওয়ার মতো প্রায় ২০টির মতো চলচ্চিত্র থাকলেও তা মুক্তি না দেওয়ায় ‘কৃত্রিম সঙ্কট’ তৈরি হয়েছে।

চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে সানি সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের ‘মিশন এক্সট্রিম’, শাপলা মিডিয়ার প্রযোজনায় শামীম আহমেদের ‘বিক্ষোভ’, এম এ রাহিমের ‘শান’, দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, নাদের চৌধুরীর ‘জ্বিন’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ বেশ কয়েকটি তারকাবহুল ও বড় আয়োজনের চলচ্চিত্র রয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সঙ্কটের মধ্যে তা মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এখন হল খোলার পর প্রযোজকরা লোকসানের শঙ্কায় ছবিগুলো আপাতত মুক্তি দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বলে জানান প্রযোজকরা।

মুক্তির তালিকায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার পাঁচটির মতো চলচ্চিত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত ছবিগুলো মুক্তি দেব না। আসছে ঈদে মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।”

একটি ছবি আমদানি করতে অর্ধ কোটি থেকে এক কোটি কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি অর্থ লগ্নি করতে হয়।

লোকসানের শঙ্কায় দেশে নির্মিত ছবি মুক্তি না দিলেও প্রযোজক-পরিবেশকরা অর্থ লগ্নি করে ছবি আমদানি করার ঝুঁকি নিচ্ছেন কেন?

এ বিষয়ে প্রযোজকদের তরফ থেকে কোনও উত্তর না মিললেও পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, “শুধু আমদানি করে নয়, পরিবেশক হিসেবে বলিউডের ছবি দেশের হলে মুক্তি দিতে পারা যাবে কি না সেটা নিয়েও আলোচনা করব আমরা।”

প্রযোজক শামসুল আলম বলেন, “আমাদের হাতে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র থাকলেও পুরো বছর হলে চালানোর মতো বড় আয়োজনের ‘পর্যাপ্ত’ ছবি হাতে নেই।”