জন্মদিনে চির সুরেলা রুনা লায়লা
গ্লিটজ ডেস্ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 17 Nov 2020 11:47 PM BdST Updated: 18 Nov 2020 11:10 AM BdST
রুনা লায়লা! তার জন্য কোনও বিশেষণ নয়- তিনি নিজেই নিজের বিশেষণ! নিজের উপাধি।
মিষ্টিভাষী এই কণ্ঠশিল্পীর কণ্ঠের যাদু ছড়িয়ে গেছে দেশে- বিদেশে। তার প্রাপ্তি, তার খ্যাতি- কাঞ্চনজঙ্ঘার মতন দৃশ্যমান সীমানার এপাড়ে - ওপাড়ে। তার ৬৮ তম জন্মদিনে শব্দে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানালেন আরাফাত শান্ত।
বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে ধারণা বদলে যায়। যেমন আমাদের অনেকের রুনা লায়লা নিয়ে উন্নাসিকতা আছে। অনেকেই তাকে খুব পছন্দ করেন, কেউ কেউ হয়তো অপছন্দ করেন।
কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কানও ম্যাচিউরড হয়, তখন মনে হয় কত বড় শিল্পী রুনা লায়লা।
পাঁচ ছয় দশক ধরে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছেন, এখনও গান সুর করছেন, গাইছেন এরকম মানুষ সাবিনা ইয়াসমিন ছাড়া আর কেউ নাই। গোটা জীবনই তার কেটেছে সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে তুলনায়।
এটা আসলে আমাদের অযৌক্তিক তুলনা, দুজন বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পীকে অযথাই এক পাল্লায় আনা। দুইজন দুভাবেই শ্রেষ্ঠ, তাদেরকে নিয়ে তুলনা করার কিছু নাই। তারা দুজনই বাংলা গানকে নিয়ে গিয়েছে উৎকর্ষের এক জায়গায়।
রুনা লায়লা শিল্পী জীবনের জন্য সব থেকে বড় অবদান তার মায়ের। তার মা চাইতেন খুব ভালো শিল্পী হবেন। এই জন্য তিনি খুবই পরিশ্রম করেছেন। অনেকেই জানেন না, রুনা লায়লা চার বছর নাচও শিখেছেন।
ওস্তাদ হাবিব উদ্দিন আহমেদ ও ওস্তাদ আবদুল কাদের পিয়ারুর কাছে ক্লাসিক্যাল শিখেছেন। বিখ্যাত গজল শিল্পী মেহেদী হাসানের ভাই ওস্তাদ গোলাম কাদেরের কাছে শিখেছেন গজল। সদ্য যখন কিশোরী তখনই তিনি প্লেব্যাক গাওয়া শুরু করেন।
এজন্য সব থেকে বেশি কৃতজ্ঞ মঞ্জুর হোসেন নামের এক সংগীত পরিচালকের কাছে। সেই পরিচালক কীভাবে গাইতে হবে মাইকে, সিনেমায় গানের কণ্ঠ কীভাবে দেয়া লাগে এসব বিষয়ে খুঁটিনাটি বিষয়ে শিক্ষা দেন।
কিশোর বয়স থেকেই রুনা লায়লা স্টার। বড় বড় উর্দু গানের কিংবদন্তীদের সঙ্গে গান গাইতেন। 'জুগনু' ছবি দিয়ে ১৯৬৫ সালে তার প্লেব্যাক ক্যারিয়ার শুরু হয়। আর বাংলা ছবিতে গান গাওয়া শুরু করেন, সুবল দাসের সুরে 'স্বরলিপি' ছবিতে।
১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানেই ছিলেন। সেখানকার টেলিভিশন ও সিনেমায় কাজ করেছেন। ওই সময় অনেক বড় মাপের শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। তার ভাগ্য অনেক ভালো যে বিখ্যাত সব লিজেন্ডদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছেন।
সে সময় অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে আমাদের শবনমও ছিলেন। গানের শিল্পীদের মধ্যে মেহেদি হাসান, আহমেদ রুশদী, মালা বেগম— সবাই অনেক অভিজ্ঞ। তিনি ছিলেন তাঁদের তুলনায় নবীন। প্রত্যেকে রুনা লায়লাকে আদর করতেন।
১৯৭৪ সালে তিনি যেমন ঢাকায় ফিরেন, তেমনই ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারতে তিনটা বড় শহরে কনসার্ট করার সুযোগ পান। সেই সফরেই ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠী অবগত হয় তার গায়কী ও প্রতিভার সঙ্গে।
লতা মঙ্গেশকারের মতো প্রবাদ প্রতিম শিল্পীর স্নেহধন্য হন। এখনও লতাজী ও আশাজীর কাছের বন্ধু রুনা লায়লা। বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পীর এমন সৌভাগ্য হয়নি।
কিছু হিন্দি ছবিতেও তিনি গান গেয়েছেন, ভারতের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে তার একক অনুষ্ঠান হয়েছে। পশ্চিম বাংলায় তার বাংলা গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এক সময়।
তবুও তিনি দূরের মানুষই থাকতেন যদি তিনি আমাদের জন্য বাংলাদেশের সিনেমায় গান না গাইতেন।
বাংলা সিনেমায় সত্তর, আশি, নব্বই দশক মানেই রুনা লায়লার গান। তার কন্ঠের জাদুতে মোহিত হয়েছে দর্শক শ্রোতা সবাই।
তিনি যখন আনোয়ার পারভেজের সুরে, 'দ্যা রেইন' ছবিতে 'চঞ্চলা হাওয়ারে ধীরে ধীরে চলরে, গুন গুন গুঞ্জনে ঘুম দিয়ে যারে পরদেশী মেঘ রে, আর কোথা যাসনে'
আসলেই মনে হয় তার কন্ঠ শুনলে মেঘও থেমে যাবে। আমরা যেহেতু সামাজিক ইতিহাসকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবি তখন এই গানটার সঙ্গে মানুষের স্মৃতির গল্প শুনতে চাই।
এক ভদ্রলোক ইউটিউবে জানাচ্ছেন, “পুরানো খাতা বিক্রি করে ৩য় শ্রেণির টিকিট ১.৭০ টাকায় কিনে এ ছবি দেখে বাসায় এসে বড় ভাইয়ের হাতে মার খেয়েছি।”
কিশোরগঞ্জের শ্যামল নামের এক লোক লিখেছিলেন, ১৭ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তিনি এই সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন।
এরকম কত গল্প রুনা লায়লার কত গানের সঙ্গে। তখনকার শিল্পীরাও অদ্ভুত ছিলেন, হিংসা করতেন না, সিডিউল ওলট পালটের জন্য কত সাবিনার গান, রুনা লায়লা গেয়েছেন, রুনা লায়লার কত গান সাবিনা গেয়েছেন।
দেশের গান যদিও সাবিনা ইয়াসমিনের মতো গাওয়ার সুযোগ পাননি। তবুও রুনা লায়লার দেশের গানগুলোও প্রাণ ছুয়ে যায়।
আমার ঘুরে ফিরে খালি মনে পড়ে রুনা লায়লার একটা দেশের গান, আলাউদ্দীন আলীর কি মায়াবী সুর আর বিখ্যাত গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’।
ইউটিউবে এই গানের একটা কমেন্ট আমার ভীষণ প্রিয়, “গানটা যখন আমার মা গাইতো তখন মনে হতো এত ভালো গান দুনিয়ায় হয় না!”
কিংবা ‘আমার মন পাখিটা যায় রে উড়ে যায়’ অথবা ‘নদীর মাঝি বলে’ শুনলেই চোখে পানি এসে যায় আমার। কি একটা মিষ্টি শৈশবের বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল আমাদের।
মোট ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। দেশে বিদেশে তার মতো শো করেছেন এমন শিল্পী উপমহাদেশে হাতেগোনা। রুনা লায়লাই সম্ভবত একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমান ভাবে জনপ্রিয়। এই খ্যাতি দারুণভাবে উপভোগও করেন তিনি।
ভক্তদের ভালোবাসাতেই আজ তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। শ্রোতাদের জন্যই তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তী রুনা লায়লা।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
শুধু গানই নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন রুনা লায়লা। রুনা লায়লা গত বছর সংগীত পরিচালক হিসাবেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রাফি হোসেন একবার তার বাসায় গিয়ে বলেছিলেন, “আপনি এত পুরষ্কার পেয়েছেন রাখারই তো আর জায়গা নাই।”
কিছু কিছু মানুষ থাকে ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়েই সব জিতে নেন। রুনা লায়লা তেমনই, খালি মন দিয়ে শিখেছেন আর পরিশ্রম করেছেন এছাড়া তিনি তেমন স্ট্রাগল করেননি। নিজের গায়কিতেই তিনি হয়েছেন এই উপহাদেশের আইকনিক এক সংগীত শিল্পী। যাকে সবাই চেনে, তিনি সব জায়গাতেই সাবলীল।
বিশেষ করে পাকিস্তানে রুনা লায়লা যে ধরনের জনপ্রিয় তা অতুলনীয়। তার জন্মদিনের খবর পাকিস্তান টেলিভিশনে নিয়মিত পাওয়া যায়। বাংলা গান গেয়ে তার মতো আসর মাতাতে কেউ পারেন না আজও।
তিনি আরও অনেকদিন বাঁচুন, এত গান গেয়ে তিনি পূর্ণ করেছেন বাংলা গানকে তার কাছে নতুন করে চাইবার কিছু নাই।
তিনি যেমন গাইতে পারেন চটুল গান ‘পান খাইয়া ঠোঁট’ আবার তিনি গেয়েছেন নিখুঁত আধুনিক গান ‘শেষ করোনা শুরুতেই খেলা’,
ফোক সুরে বিভিন্ন গান তার কন্ঠে হয়ে উঠেছে মাধুর্যময়। জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিবেন, কিংবদন্তি!
-
শ্রেয়া ঘোষালের সংসারে আসছে নতুন অতিথি
-
আবুল মোমেন ও শীলা মোমেনের গল্প বলা
-
আসছে তারকাবহুল ওয়েব সিরিজ ‘সিক্স’
-
স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘রায়া অ্যান্ড দ্য লাস্ট ড্রাগন’
-
সেন্সর ছাড়পত্র পেল ‘ঢাকা ড্রিম’
-
মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০-এর চূড়ান্ত পর্বের সেরা ১০ নির্বাচিত
-
‘যৈবতী কন্যার মন’ মুক্তি পাচ্ছে ১৯ মার্চ
-
৩৩ বছর পর ‘কামিং টু আমেরিকা’
সর্বাধিক পঠিত
- স্টোকসের ‘গালি’ শুনে কোহলিকে বললেন সিরাজ
- নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে মিয়ানমারের জান্তার টাকা সরানোর চেষ্টা আটকেছে যুক্তরাষ্ট্র
- ফাইনালে বার্সার প্রতিপক্ষ বিলবাও
- ভিসি কলিমউল্লাহ দুষলেন শিক্ষামন্ত্রীকে; ‘রুচিহীন’ বলল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
- লিভারপুলকে হারিয়ে চারে চেলসি
- ৬ ওয়ানডে খেলেই অধিনায়ক বাভুমা, টেস্টের নেতৃত্বে এলগার
- আরেকটি শূন্য, ধোনি-সৌরভের পাশে কোহলি
- ভারতে ‘প্রেম করায়’ বাবার হাতে মেয়ের শিরশ্ছেদ
- দলের ওপর চাপ কমাতে বললেন মাশরাফি
- টিভি সূচি (শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১)