সৌমিত্রের শেষ বিদায়ে কবিতা, ফুল, গান স্যালুট

রবি ঠাকুরের গান ছিল, ছিল কবিতা আর অশ্রুমাখা ফুল, সবশেষে ‘গান স্যালুটে’ বিদায় জানানো হল ভারতীয় বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 03:53 PM
Updated : 15 Nov 2020, 03:53 PM

রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য হয় বলে জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো।

কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে চল্লিশ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার দুপুরে চিরবিদায় নেন দুই বাংলার জনপ্রিয়া এ অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

আনন্দবাজারের ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

তার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে যান পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র ও নাট্য অঙ্গনের কলা-কুশলীরা, ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

কেলা আড়াইটার দিকে সৌমিত্রের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় কলকাতার গল্ফগ্রিনের বাড়িতে। সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে ৩টার দিকে এ শিল্পীর কফিন শেষবারের মত তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে নেওয়া হয়। টালিগঞ্জের অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা, টেকনিশিয়ানরা অশ্রুচোখে তাকে শেষ বিদায় জানান।

সাড়ে ৩টার দিকে রবীন্দ্রসদনে নেওয়া হয় এই অভিনেতার কফিন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট জনরা সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখান থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে শবযাত্রায়ও তারা শামিল হন।

সৌমিত্র ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত আর সাহিত্যের অনুরাগী। তাই তার শেষযাত্রায় ছিল বিশ্বকবির গান আর কবিতার পাঠ। কখনও বাজানো হয় ‘আগুনের পরশমণি’, কখনও বার সৌমিত্রের লেখা কবিতাও আউড়ে যান অভিনেতা-আবৃত্তিশিল্পী কৌশিক সেন।

আনন্দবাজারের ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

কফিন নিয়ে সেই শবযাত্রায় ছিলেন অভিনেতা দেব, রাজ চক্রবর্তীসহ টালিউডের অনেকেই। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিআইএম নেতা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র। সৌমিত্রের নানা বয়সের ছবি হাতে ছিলেন ভক্ত আর সহকর্মীরা।

কেওড়াতলায় দাহ করার আগে গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই অভিনেতাকে, যার অভিনয়ে অমর হয়ে থাকবে সত্যজিত রায়ের সৃষ্টি অপু আর ফেলুদার মত বহু চরিত্র। 

চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের অনেকের বিচারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা।

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ অনেকেই।

আনন্দবাজারের ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

সত্যজিতের ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতেই তিনি অভিনয় করেছেন। কাজ করেছেন মৃণাল সেন, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গে।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে ‘অপুর সংসার’-এ প্রবেশের পর অক্লান্তভাবে অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন সৌমিত্র। পাশাপাশি বহু নাটকেও অভিনয় করেছেন; লিখেছেন গান ও নাটক।

চলচ্চিত্রে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ছাড়াও ফ্রান্স সরকারের ‘লিজিয়ন অব দ্য অনার’ পদকে ভূষিত হয়েছেন এই অভিনেতা। ২০০৪ সালে তাকে ‘পদ্মভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করে ভারত সরকার।