জন্মহীন নক্ষত্রের সঙ্গে বসবাস

স্মৃতিপাতা হাতড়ে অস্পষ্ট না হওয়া বিমূর্ত কিছু সময়ের স্মরণ করলেন নিয়াজ আহমেদ অংশু।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2020, 07:59 AM
Updated : 18 Oct 2020, 07:59 AM

নব্বইয়ের দশকে ক্যাসেট কিংবা পরে সিডির প্রচ্ছদ অলংকরণে পরিবর্তণ আনায় যার ভূমিকা অনস্বীকার্য তিনি নিয়াজ আহমেদ অংশু। এতটুকু বললে কমই বলা হবে।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া বহু গানই তার লেখা। ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো, চেনো না’, ‘এক জন্মহীন নক্ষত্রের মতো’ এরকম বহু পরিচিত জনপ্রিয় গানগুলো সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর নাম যেমন আসে তেমনি গীতিকার হিসেবে চলে আসে অংশুর নাম।

আজ তাই আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে অংশু তার ঝুড়িভর্তি স্মৃতি হাতড়ে ছিটেফোঁটা ছড়ালেন গ্লিটজের পাঠকদের জন্যে।

না গাওয়া দু এক লাইন

বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে আমার গান লেখার প্রসঙ্গ আসলে ‘মেয়ে’ গানের কথা চলে আসবেই। এই গানের আগে বাচ্চু ভাই আমার-ই লেখা আরেকটি গান রেকর্ড করেন  ‘এক বিকেলের মেয়ে’ নামে। কিন্তু হচ্ছে হবে করতে করতে সেই গান বের হয় রেকর্ড হওয়ার প্রায় বছর পাঁচ পর ‘অচেনা জীবন’ অ্যালবামে। আর সেই ‘মেয়ে’ গানটিতে রেকর্ডিংয়ের সময় বাচ্চু ভাই কয়েকটি লাইন বাদ দিয়ে দেন। কারণ গানটি বেশ দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল। গীতিকার হিসেবে আমার কখনও মনে হয়নি সেই লাইনগুলো বাদ পড়ে যাওয়াতে গানটির ভাবে কোনো পরিবর্তন হয়ে গেছে।

নক্ষত্র বলা কত কঠিন

নতুন নতুন বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেছি। কোন শব্দ সুরে ভালো বসে বা গাইতে সহজ বুঝতাম না তেমন। এরকম সময়ে লিখে নিয়ে গেলাম ‘জন্মহীন নক্ষত্র’ নামের একটা গান। একদিন এলআরবি’র স্বপ্ন অ্যালবামের রেকর্ডিং সাউন্ড গার্ডেন ষ্টুডিওতে। আমি বিস্ময় নিয়ে দেখি আমার সেই গানটি রেকর্ড হচ্ছে।

বাচ্চু ভাই আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বললেন, “তোর কোনো ধারণা আছে নক্ষত্র বলা কত কঠিন।” তিনি আসলে উচ্চারণের কথা বুঝালেন।

সুরকার হিসেবে বাচ্চু ভাইয়ের বিশালতা এবং সুর করবার ক্ষমতা আসলেই তার সমসাময়িক কারোর সঙ্গে তুলনীয় নয়। তার স্থানে তিনি একজনই ছিলেন এবং থাকবেন।

শুধু কষ্টটা থেকে যায়

বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ১৯৯৫ সালে। আমি তখন চারুকলায় পড়ি। তার ‘কষ্ট’ অ্যালবামের কাজ শেষ প্রায়। আমাকে বললেন প্রচ্ছদ করে দিতে। আমার খুব শখ ছিল গান লিখবো। জেনে উনি বললেন “আমার কষ্ট অ্যালবামের সঙ্গে যায় এরকম একটা কিছু লিখে দে, অ্যালবাম ইনার কভার এ দেবো।”

আমি লিখলাম,

...তারপর একদিন ভরা জো‌ৎস্নায়,

আমিও চলে যাবো একমাত্র নিশ্চয়তাকে

সঙ্গী করে - চির নবান্নের দেশে।

জেনে যাবো “সবকিছুই বড় দেরিতে আসে... বড় দেরিতে ধরা দেয়... হারিয়ে যায়

সেও হঠাৎ করেই।”

... শুধু কষ্টটা থেকে যায়

আসলে কষ্টটা

এভাবেই ছিল,

কষ্টটা এভাবেই থাকে...

লেখাটা তার খুব পছন্দ হলো। বললেন, “কভারের ওপর যাক, ইনার কভারের বদলে।”

আমার প্রথম অ্যালবাম কভার। আমি ভাবলাম ক্ষতি কি। হয়তো সুন্দর লাগতেও পারে। অ্যালবাম প্রকাশের পর সেই অ্যালবাম সুপার হিট। সেই সঙ্গে অ্যালবামের মেসেজটাও। তারপর থেকে দেশ ছেড়ে আসার আগে পর্যন্ত বাচ্চু ভাইয়ের সব অ্যালবাম এর কভার মেসেজ একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ালো। আর আমার কাজ ছিল প্রচ্ছদ ডিজাইনের পাশাপাশি অ্যালবামের গানগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে অ্যালবাম মেসেজ লেখা।

তার চলে যাওয়ার দু বছর হতে চললো। এখনও মাঝে মাঝে আমি কভারের লেখাগুলো পড়ি আর ভাবি কীভাবে কথাগুলো বুকের এত কাছে এসে লাগে। ওপর থেকে বাচ্চু ভাই নিশ্চই মুচকি মুচকি হাসছেন।