দর্শক যে সেভাবে হবে না, হল মালিকরাও তা জানতেন। সে কারণে অনুমতি মেলার পরও ঢাকার বড় হলগুলো এখনও খোলেনি। শুক্রবার যে ক’টা হল খুলেছে, সেগুলোর অধিকাংশ আসনই ছিল ফাঁকা।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে মার্চ মাসের শেষ অন্যসব বিনোদন কেন্দ্রের মত সারা দেশের সব সিনেমা হলও সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করার পর সেপ্টেম্বরে বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলতে শুরু করে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আগ্রহে গত বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ও সিনেমা হল খোলার অনুমতি দেয়।
তবে শর্ত দেওয়া হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ঠিকঠাকভাবে। আর আপাতত আসন সংখ্যার অর্ধেক দর্শক নিয়ে হল চালানো যাবে।
আনন্দ আর চিত্রা মহলে মুক্তি পেয়েছে নতুন সিনেমা ‘সাহসী হিরো আলম’। ছন্দে দেখানো হচ্ছে শাকিব খানের পুরনো সিনেমা ‘রাজধানীর রাজা’।
ঢাকায় চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মী আফাজ উদ্দিন শুক্রবার ছুটির দিনে ফার্মগেইটের আনন্দ সিনেমা হলে গিয়েছিলেন সিমেনা দেখতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “ছবি দেখতে আসছি। কিন্তু মন ভরে নাই। তারপরও দেখেছি। আইজকা কাম নাই, তাই।”
হলের ভেতরে দর্শক কেমন হয়েছে জানতে চাইলে আফাজ বলেন, “সব মিল্যা আমরা ৬০/৬৫ জন হইব। মানুষজন এককারেই কম।”
৬০০ আসনের ছন্দ হলে মর্নিং শোতে ৮৯ জন, আর বিকালের শোতে একশর মত দর্শক পাওয়া গেছে বলে জানালেন শামসুদ্দিন।
দর্শক না পেলেও হল খোলায় খুশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিনেমা হলগুলো দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় তাদেরই সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছিল।
পুরান ঢাকার চিত্রা মহলের কর্মচারী আসলাম বললেন, “ভাই, সাতটা মাস পরিবার নিয়া বড় কষ্টে ছিলাম। আয় নাই, রোজগার নাই। বলতে পারেন আধা পেট খাইতে হইছে অনেক সময়। কঠিন সময় গেছে আমাগো। অহন হল খুলছে, আমরা খুশি।”
আপাতত দর্শক সেভাবে না এলেও ‘সেইরম অ্যাকশন ছবি’ মুক্তি পেলে হলেও আবার জোয়ার লাগবে বলে আসলামের বিশ্বাস।
সিনেমা হলের বাইরে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা বললেন, “করোনার ভয়ে কেউ কিছু কিনতে চায় না। আমরা মহা বিপদে আছি স্যার। কবে যে যাইব এই বিচ্ছু করোনা কে জানে।”
এমনিতে ফার্মগেইটের মোড়ে আনন্দ সিনেমা হলের বাইরে মানুষের ভিড় লেগে থাকত সব সময়। একে বাসস্ট্যান্ড, তার ওপরে কয়েকটি বিপনী বিতান, কোচিং সেন্টার থাকায় নানা রকম মানুষের আনাগোনা থাকত অন্য সময়।
তবে এখন তো পরিস্থিতি ভিন্ন। সিনেমা হলে ঢোকার মুখেই স্বাস্থ্য বিধির কড়াকড়ি দেখা গেল। সিনেমা দেখতে আসা কারও মুখে মাস্ক না থাকলে তাকে বিনামূল্যে মাস্কও দেওয়া হচ্ছে।
হলের প্রবেশ দ্বারে সবার তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা হয়েছে, একজন কর্মচারী দর্শকদের হাতে হ্যান্ড সেনিটাইজার স্প্রে করে দিচ্ছেন দেখা গেল।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শুক্রবার সারাদেশে ৬৬টি প্রেক্ষাগ্রহ খোলার কথা। তবে মধুমিতা, বলাকা, অভিসার, জোনাকি, এশিয়ার মত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলগুলো এখনই খুলছে না।
স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, এসকেএস টাওয়ারের সবগুলো শাখা বন্ধ রয়েছে। সেগুলো খুলবে ২৩ অক্টোবর।
যুমনা ফিউচার পার্কের ব্লক বাস্টারের কর্মকর্তারা জানান, তাদের সাতটির স্ক্রিনের মধ্যে তিনটি শুক্রবার খোলা হয়েছে। বাকিগুলো পর্য়ায়ক্রমে খুলবে।
মধুমিতা হলের স্বত্ত্বাধিকারী চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, “ভালো ছবি না আসলে হল খুলে কী হবে? দর্শক তো আসবে না। এমনিতেই বিজনেস খারাপ। তার ওপর দর্শক যদি না হয়, লোকসান দিয়ে হল চালু রাখা কষ্টকর। দৈনিক যে খরচ, সেটা তো অন্তত উঠতে হবে।”