সিনেমা হল নিয়ে আশঙ্কায় হলিউড

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা হলগুলো হয়ত বাঁচানো যাবে না।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2020, 02:12 PM
Updated : 1 Oct 2020, 02:12 PM

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় ছয় মাসের ওপর বন্ধ থাকার পর কিছু কিছু সিনেমা হল খুললেও, হলিউডের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সরকারী সাহায্য না পেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বেশিরভাগ হল।

বুধবার হলিউডের বিভিন্ন স্টুডিও, হল ও পরিচালকরা এক বিবৃতিতে এরকম আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সেই সূত্র ধরে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘নির্দিষ্ট ত্রাণ’য়ের ব্যবস্থা না করলে প্রায় ৭০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি ধরনের সিনেমা হলগুলোকে হয় দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে নয়ত জোর করেই বন্ধ করে দিতে হবে।

বিবৃতিতে প্রায় ডজন-খানেক চিত্র নির্মাতা স্বাক্ষর প্রদান করেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন জাড অ্যাপাটো, জেমস ক্যামেরন, গ্রিটা গারউইন, ক্রিস্টোফার নোলান, জর্ডান পিল, ওয়েস অ্যান্ডারসন, ক্লিন্ট ইস্টউড এবং অ্যাং লি।

তারা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে এসব সিনেমা হলগুলো বাঁচানোর জন্য আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংগঠন ‘দি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ থিয়েটার ওনার্স (এনএটিও) পরিবেশকদের পক্ষে এই বিবৃতিটাকে আরও স্বীকৃতি দেন ‘দি মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা’।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমেরিকার গুণী শিল্পীদের সৃজনশীল কাজের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এই সিনেমা শিল্প। তবে এখন এর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা চিন্তিত।”

ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে সিনেমা হলগুলো খুলতে শুরু করেছে। আর মহামারীর পর সেসব হলে প্রথমেই মুক্তি পেয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘টেনেট’ সিনেমাটি। তবে বক্স অফিসে আশানুরূপ ফলাফল না আসায় ওয়াল্ট ডিজনি কো. এবং ইউনিভার্সেল পিকচার্স-সহ বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা তাদের ছবিগুলো আরও দেরিতে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন ‍গুটিকয়েক সিনেমার পোকা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সিনেমা দেখতে হলে যাওয়ার মানসিকতা ফিরে আসেনি।

গত সপ্তাহে ডিজনি ‘ব্ল্যাক উইডো’ এবং স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’ মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দেয়। তাদের পথ ধরে ওয়ার্নার ব্রস ‘ওয়ান্ডার উইম্যান ১৯৮৪’ মুক্তির তারিখ পিছিয়ে নিয়ে যায় খ্রিস্টমাসে।

লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউ ইয়র্কের সিনেমা হলগুলো বছরে মোট বক্স অফিসের ৩০ শতাংশ আর্থিক লেনদেনের প্রতিনিধিত্ব করে। সব হল কবে থেকে পুরোপুরি চালু হবে সেই বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। আবার হলগুলোকে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দরকার হবে লাভজনক সিনেমা।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা জগতের সংগঠনগুলো দেওয়া তথ্যানুসারে, ৯৩ শতাংশ পরিবেশকরা দেখতে পান গত বছরের তুলনায় এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয়ের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ কমে গেছে।

এই সিনেমা হল শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকেই চুক্তিভিত্তিক ও ঘণ্টা হিসেবে কাজ করেন। যদি এভাবে হলগুলো বন্ধ থাকে তবে এই ধরনের কাজের এক তৃতিয়াংশই হারিয়ে যাবে।

সংগঠনটি সাবধান করে দিয়ে জানায়, “আমাদের দেশ এই আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে না, যা হলগুলোর আমাদের দিয়ে আসছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা শিল্পের সঙ্গে জড়িত নেতারা দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে খরচ না হওয়া তহবিল থেকে সাহায্য করার আহ্বান জানান। যা ‘কেয়ার্স অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত, যেটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বছর মার্চ মাসে আইনানুগভাবে স্বাক্ষর করেন। এটা সিনেমা শিল্পকে সহায়তা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে হলগুলোও আছে।

পাশাপাশি অতিরিক্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্যান্য সুবিধা চালু করার ক্ষেত্রে  ‘কংগ্রেশনাল বিল’ পাশ করার পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়; যার মধ্যে রয়েছে ‘রিস্টার্ট অ্যাক্ট’।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো এইভাবে সমাধান করার মাধ্যমে কংগ্রেস’য়ের অভিপ্রায় পূর্ণ হবে। পাশাপাশি খুবই প্রয়োজনীয় এই সম্পদগুলো আমাদের শিল্পের প্রতি নজর দিতে পারবে।”