‘ব্যোমকেশ’ হিসেবে নিজেকেই বেশি নম্বর দেব: আবীর চট্টোপাধ্যায়

সম্প্রতি উপস্থাপক হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্ম সরগরম করা আবীর চট্টোপাধ্যায়কে বাংলার মানুষ চেনেন গোয়েন্দা হিসেবেই।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 05:30 AM
Updated : 29 Sept 2020, 05:30 AM

লেবাস যাই হোক; হোক ব্যোমকেশ বা ফেলুদা বা ছোটদের সোনা দা, গোয়েন্দাগিরি তার পর্দাজুড়ে!

বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমে এই প্রথম আড্ডায় হাজির হলেন কলকাতার আবীর চট্টোপাধ্যায় উপস্থাপকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে।

২৫ বছরে পা রাখা জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজ সারেগামাপা-এর নতুন সঞ্চালক এই আবীর। যীশু সেনগুপ্তের মতো জনপ্রিয় মুখের বদলে এখন দেখা যাবে আবীরের সুরযাত্রা।

জিফাইভের নতুন এই রিয়েলিটি শো-এর যাত্রাটা কেমন আর লকডাউনে কেমনই বা কাটছে দিনকাল তা জানাতে হাজির হলেন গ্লিটজের আমন্ত্রণে।

প্রথমেই ‘প্রথম’ সবকিছু নিয়ে আলাপ শুরু করতেই বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য প্রথমবারের মতো সরাসরি কিছু বলার সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন পর্দার সত্যান্বেষী আবীর।

আবার প্রথমবারের মতো অনলাইন প্লাটফর্মে উপস্থাপক হওয়ার খবরটাও দিলেন।

২৬ সেপ্টেম্বর থেকে জি ফাইভে শুরু হওয়া সারেগামাপা’র নতুন সিজনের নতুন সঞ্চালক আবীর জানালেন, এই অনুষ্ঠানের আলাপটা আগেই শুরু হয়েছিল। অনেক জল্পনা কল্পনার শেষে শুটিং শেষ করে অবশেষে অনলাইনে শুরু হয়ে গেল এই যাত্রা।

সঞ্চালনা নিয়ে আবীর খুব বেশি চিন্তিত নন বটে। কারণ এর আগেও অ্যাওয়ার্ড শো-সহ বিভিন্ন শো করেছেন। তবে এমন শো এই প্রথম। তাও আবার সহকর্মী যীশুর বদলে!

তাতে কী কোনো মানসিক চাপ আছে? বা কোনো ‘দ্বন্দ্বের’ আভাস? বিষয়টা উড়িয়েই দিলেন আবীর।

বললেন, “এমন কোনো সম্ভাবনাই নেই। যীশু এবং আমি সহকর্মী। বিষয়টিকে আমরা একেবারেই প্রফেশনালি দেখছি। বরং আমি বলেছি যীশুকে, প্রয়োজনে ফোন করে টিপস নেব।”

চ্যানেল এবং ওটিটি প্লাটফর্মে কাজের ব্যাপারেও বেশ সোজাসাপ্টা এই অভিনেতা।

সারেগামাপা প্রসঙ্গেই বললেন, “চ্যানেলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। কিন্তু ওটিটি’র মজা হল- যেকোনো সময় এই অনুষ্ঠানটি যেকোনো প্রান্তে বসে জিফাইভের দর্শকরা দেখতে পারবেন।”

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি দর্শকদের কাছে সারেগামা’কে নিয়ে পৌঁছে যাওয়ার জন্য জিফাইভের মতো অনলাইন প্লাটফর্মকে ইতিবাচক হিসেবেই তাই দেখছেন এই অভিনেতা।

ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনলাইনের কন্টেন্টগুলোর জনপ্রিয়তাও। সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে অবশ্য দোনমনার শিকার এই অভিনেতা।

সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে- সেটা যেমন ভালো লাগছে তার কাছে- কিন্তু বড় পর্দায় ছবি মুক্তির যে আনন্দ সেটার কোনো বিকল্পই হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।

আবীর আরও মনে করেন দর্শকরাও বড় পর্দায় সময় নিয়ে আয়োজন করে ফের পছন্দের সিনেমাটা দেখতে ভালোবাসেন।

কিন্তু সময় যেহেতু অন্যরকম, তাই বিকল্প যদি কোনো ব্যবস্থা উঠে আসে, আর যদি আরেকটি মাধ্যম তৈরিও হয়ে যায় দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার - তাতেই বা ক্ষতি কী?

বড় পর্দার প্রসঙ্গ উঠতেই ব্যোমকেশের মুখে ব্যোমকেশের গল্প শোনা হবে না- তা হতেই পারেনা।

সম্প্রতি রটনার একটি অংশ ধরে এগুতেই আবীর ফের সোজাসাপ্টা জানালেন মূল ঘটনা।

এর আগে ভেঙ্কটেশ ফিল্মের পক্ষ থেকে ব্যোমকেশ হিসেবে নাকি নির্বাচন করা হয়েছিল অনির্বাণকে। কিন্তু টালিগঞ্জ সরগরম! কারণ হল, অনির্বাণ নয়, ব্যোমকেশের চরিত্রে থাকছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়।

মূল ঘটনা আবীর বললেন ঠিক এই ভাবে।

“নতুন ব্যোমকেশ নিয়ে আলাপ হয়েছে বটে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।”

তাই কে হচ্ছেন ব্যোমকেশ বা কে থাকছেন ব্যোমকেশ- বোমাটা ফাটানোই গেলনা এই আড্ডায়।

আর ফেলুদার খবর জানতে চাইলে, মাত্র একবারই ফেলুদা করা আবীর কিছুটা এড়িয়েই গেলেন। বরং নিজেকে ব্যোমকেশ হিসেবেই যেন বেশি বলতে ভালোবাসেন তিনি।

তবে বাংলার জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে ‍অদ্বিতীয় তা তিনি স্বীকার করেন নিজ মুখেই।

আর তা অন্য ফেলুদারও মানেন। যেমন, সব্যসাচী নিজেও গ্লিটজকে বলেছেন তার এই ভালোবাসার কথা।

ব্যোমকেশও কম দেখা যায়নি বড়পর্দায় এবং ছোটপর্দায়।

আবীরের চোখে তাহলে সেরা ব্যোমকেশ কে?

গ্লিটজের এই প্রশ্নের উত্তরে আবীর রহস্যের হাসি টেনে বললেন, “এই ব্যাপারে আমি নিজেকেই ভোট দেব। কারণ আমি মনে করি, ব্যোমকেশ আর আবীর একে অপরের জন্য...।”

বলেই, ঠিক লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই যেন নিজেকে আঁকার হরফে ব্যোমকেশ বক্সীর শব্দে গেঁথে দিলেন এই নায়ক।

তবে আলাপের এই পর্যায়ের নিজের সোনা-দা হওয়ার গল্পটাও বললেন।

বাচ্চাদের জন্যেও তিনি গোয়েন্দাগিরি করছেন। আর চরিত্রটা ঠিক যেন সোনামণিদের জন্যই বানানো। তাই নামটাও ‘সোনা দা’।

ভীষণ আনন্দিত তিনি এই চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে।

বারবার বললেন, “আমাকে সবাই ব্যোমকেশ হিসেবে ভালোবাসেন জানি। কিন্তু শিশুদের কাছে আমি কিন্তু সোনা দা হয়ে যাচ্ছি...।”

গ্লিটজের সঙ্গে ছোট্ট এই আলাপে বাংলাদেশের জয়া আহসানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বেশ জানিয়ে দিলেন। বাংলাদেশে গেল বছর আসার স্মৃতিটাও মনে করলেন।

 

তবে সবশেষে জানাতে ভুললেন না সবচেয়ে জরুরি বিষয়। তা হল, নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আবীর জানান, সারেগামাপা’র শুটয়ে কোনো দর্শক তো ছিলই না বরং আরও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে যেন কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়।

আবীর বলেন, “দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। সব বিধি মেনেই কাজ করছি। আমরা চাই দর্শকরা ঘরে বসে গান-সিনেমা-নাটক দেখে একটু হলেও ভালো ‍থাকুক। আর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।”

আবীর আশা করছেন আলোচনা অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথমেই সিনেমা হল খুলে দেওয়া হলে নতুন সিনেমাগুলো যেমন ফের বড় পর্দার স্বাদ পাবে তেমনি ফিরে আসবে ধীরে ধীরে সেই পরিচিত ছন্দ।

“সে পর্যন্ত, সারেগামাপা-এর নতুন এই সঞ্চালক আবীরকে না হয় ভিন্নভাবেই কাছে থেকে দেখুক দর্শকরা!”

এই বলে বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসা জানিয়ে আপাতত গ্লিটজের কাছ থেকে বিদায় নিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায়।