‘অনুদান’ না মিললে এফডিসিকর্মীদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা

লোকসানের মুখে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ১৮ কোটি টাকা ‘অনুদান’ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে আবেদনে করেছে তাতে সাড়া না মিললে সেপ্টেম্বর থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়ার কোনও উপায় দেখছে না এফডিসি কর্তৃপক্ষ।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2020, 12:02 PM
Updated : 20 Sept 2020, 12:02 PM

২০২০-২১ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটির ২৬১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে ১৮ কোটি টাকা চেয়ে জুলাইয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুজহাত ইয়াসমিন জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকগুলো বিল বকেয়া রেখে অগাস্ট পর্যন্ত কর্মীদের বেতন দেওয়া হলেও সেই অর্থ (অনুদান) না পেলে সেপ্টেম্বর থেকে বেতন কীভাবে দেব-তা বুঝতে পারছি না।”

১৮ কোটি টাকা ‘অনুদান’ দেওয়ার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তও হয়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমা মোবারেক।

কবে নাগাদ হতে পারে তা নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য মেলেনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসেও ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ‘অনুদান’ নিয়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে এফডিসি। অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে অগাস্ট পর্যন্ত বেতন দিতে পারলেও সেপ্টেম্বর থেকে ফের পুরানো সঙ্কটেই পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বেতন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তার মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, “এর আগেও একাধিক মাসের বেতন বকেয়া থাকার সময় বাসাভাড়া, সংসার খরচ, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ সামলাতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আবার বেতন বকেয়া পড়লে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হবে।”

চলচ্চিত্রের শুটিং কমে যাওয়া ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা জটিলতার জেরবারে গত পাঁচ বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটের মুখে নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বছর বছর অনুদানের আশ্রয় নিয়েছে এক সময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি।

২০০৫ সালের দিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনও কোনও বছর ৮০ লাখ টাকার মতো আয়করই দিয়েছে এফডিসি।

২০০৬ সাল থেকে লোকসান শুরুর হলেও কর্মীদের বেতনভাতা নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছিল। তার প্রায় এক দশক পর ২০১৫ সাল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে প্রায় পুরোপুরিই অনুদানের উপর নির্ভরশীল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতি বছরই ঘাটতি মেটাতে ‘ইকুইটি’ হিসেবে এ অনুদান দেওয়া বলে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

“ইকুইটি মানে অনুদান হিসেবেই এ অর্থ দেওয়া হয়। আমরা যেহেতু অটোনমাস বডিকে অনুদান দিতে পারি না। সেকারণে ইকুইটি হিসেবে দেওয়া হয়। যার ফলে এফডিসিতে সরকারের শেয়ার বাড়ল।”

কর্মীদের বেতন ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের আনুতোষিক বাবদ ১২ কোটি টাকা প্রায় এক যুগেও পরিশোধ করতে পারেনি এফডিসি। সেটাও পরিশোধ করতে ১২ কোটি টাকা ‘অনুদান’ চাওয়া হয়েছে বলে জানান এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি জানান, এফডিসির ফ্লোর ভাড়াবাবদ এটিএন বাংলার কাছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পাওনা আছে এফডিসির। সেটি পেলে তা দিয়ে এফডিসির আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো যেতে পারে।

এফডিসির ২৬১ কর্মীর জন্য প্রতি মাসে বেতনবাবদ প্রায় এক কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়। ফলে নিজেদের অর্থে আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো গেলেও অনুদানের অর্থ না পেলে এফডিসির পক্ষে বেতন পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।