জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শুটিং করছি: মিশু সাব্বির

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার সচল নাটক পাড়া। বিভিন্ন শুটিং হাউজে চলছে শুটিং। কোনো শিডিউল খালি নেই বললেই চলে।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 10:15 AM
Updated : 15 Sept 2020, 10:15 AM

তবে কমেনি কোভিড-১৯ এর প্রভাব। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা অচীরেই কোভিড-১৯ দানবের মতো ঘাড় মটকে ধরবে পৃথিবীর।

এরমাঝে নিয়মিত শুটিং করছেন মিশু সাব্বির। নিজেকে ‘দৈনন্দিন’ অভিনেতা বলা এই মিশুকে রোজই শুটিং-এর জন্য দৌড়াতে হয়।

এই বাড়ি ওই বাড়ি- এই স্পট ওই স্পট করেই তার কাজ চলছে আগের গতিতেই। কিন্তু বিশ্ব খুঁজে পায়নি আগের ছন্দ।

কি রকমের আশঙ্কা বা ঝুঁকি এখন এই কাজের ক্ষেত্রে তা তিনি জানালেন নিজেই।

আড্ডা শুরুতেই মিশু জানালেন, তার বেড়ে ওঠার গল্পে ডানপিটে ভাব আছে বলেই হয়তো ‘হার্ডি ইমিউনিটি’ ব্যাপারটা আগে থেকেই তার মাঝে আছে।

“বৃষ্টিতে খেলেছি, রোদে পুড়েছি- কলোনির পোলা- বুঝলেন- আমার এমনিতে ঠাণ্ডা কাশি কম হয়। হয়ত এজন্য এখনও টিকে আছি”- নিজস্ব স্টাইলে বলে গেলেন মিশু।

তবে শুটিং-এর জায়গাগুলোতো যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ হচ্ছে সেটার ব্যাপারে বেশ উৎকণ্ঠায় আছেন এই তরুণ অভিনেতা।

বলেন, “প্রথম প্রথম তাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ হয়েছে- এখন সেটার কোনো লক্ষণই নেই। সবার মাঝে গা ছাড়া একটা ব্যাপার!”

প্রথম প্রথম শুটিং স্পটে স্যানিটাইজের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতো। সবাই মাস্ক পরতেন। এখন সেই অভ্যাসটা হঠাৎ করেই কিন্তু চলে গেছে।

মিশু যোগ করেন, “কেউ মাস্ক পরে না, কারও হাত ধোয়ার বালাই নেই, এমন কী যে ছেলেটা খাবার দিচ্ছে- সেও তো তার নিজের থেকে আর্টিস্টকে খাবার পরিবেশন করার যে উপাদানগুলো আছে সেগুলো সরিয়ে রাখছে না। তাহলে কি করে আমরা নিশ্চিত হবে যে কোনো রকমের ড্রপলেটস ছাড়া আমাদের শুটিং-এর সময় প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো হাত পর্যন্ত আসছে?”

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ খ্যাত এই অভিনেতা বেশ বিরক্তই বটে শুটিং-এর এই হাল হকিকত নিয়ে।

শুটিং শুরু হওয়ার পরপর তিনি খাবার নিয়ে আসতেন। কিন্তু সেই বিষয়টা আসলে খুব বেশি কার্যকরী নয়। কারণ খাবার নিয়ে আসলেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।

এক্ষেত্রে সংগঠনগুলোর ভূমিকা আরেকটু জোড়ালো করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

মিশু বলেন, “যে কারণে শুটিং শুরু করা হয়, সেটি একটি মানবিক জায়গা বলেই কিন্তু আমরা নিয়মিত কাজ যারা করি তারা কাজ শুরু করেছি। আমরা হয়ত অনেকেই ২০২১ পর্যন্ত কোনো কাজ না করেও থাকতে পারতাম। কিন্তু যারা দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল- তাদের পক্ষে এটা সম্ভব হতো না। ফলে আমরা যারা কাজ করছি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব দরকার।”

শুধু নিজের নিরাপত্তা নয়, মিশু উল্লেখ করেন বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কথাও।

তিনি বলেন, “আমরা আক্রান্ত না হলেও- আমরা তো ‘ক্যারিয়ার’ হতে পারি এই রোগের। সেক্ষেত্রে কিন্তু যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করেন যেমন আবুল হায়াত, আসাদুজজ্জামান নূর বা রাইসুল ইসলাম আসাদ- তাদের নিরাপত্তা আমাদের হাতে চলে এসেছে। আমরা যে অবস্থায় শুটিং করি- তারা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন বলে আমি মনে করি।”

সম্প্রতি কে এস ফিরোজ, সাদেক বাচ্চু এবং মহিউদ্দিন বাহারের মৃত্যুর পর এটা নিয়ে ভাবার আরও সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি জানান, বিভিন্ন সংগঠন এক হয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছিল। দশটা থেকে দশটা শুটিং- সেই পদ্ধতি কেউই মানছে না। এমনকী শুটিং স্পটে শারীরিক দূরত্ব মানাও এখন অনেকের কাছে তাচ্ছিল্যের ব্যাপার।

মিশু জোড় কণ্ঠে বলেন, “কয়েকজন পরিচালক নিজ উদ্যোগে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এছাড়া সবাই ব্যাপারটাকে ছেলেখেলা মনে করছেন। কিন্তু এর কারণে কোনো শিল্পী আক্রান্ত হলে কারও কোনো দায় নেওয়ার তাগিদও নেই।”

মিশু প্রশ্ন ছুড়ে দেন. “তাহলে আমরা যারা এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক সদস্যকে বাঁচাতে আজ ক্যামেরার সামনে- আমাদের রক্ষার জন্য কে রইল?”

শুটিং স্পটে নানান হতাশা এবং আশঙ্কা নিয়ে থাকা মিশু সাব্বির নিজেই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন আছেন। বাসায় প্রবেশের মুখেই বাইরের কাপড় ছেড়ে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন। তার এই সুবিধা আছে বলেই হয়ত সেটা সম্ভব- কিন্তু অনেকের তো সেটা সম্ভব নয় বলে জানান মিশু।

তবে নিজের বাবা-মা ও পরিবারের কথা ভেবে কোনও না কোনও ব্যবস্থা করে নিতেও হয়ে বলে তিনি মনে করেন।

মিশু বলেন. “এখন সময়টা এমন যে ক্যামেরার সামনে না থাকলেও হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে। তাই ক্যামেরার সামনে থাকাটা জরুরি। আবার এটা নেশাও বটে। ফলে উপায় বের করতেই হবে।”

তবে এর দায় অনেকেরই ভাগ করে নিতে হবে। যদি পরিচালক স্বাস্থ্যবিধি মানে, ডিওপি মানেন- তাহলে কিন্তু ইউনিটের সবাই স্বাস্থ্যবিধি এমনিতেই মানবে। কারণ ওই সচেতনটা মইয়ের মতো ধাপে ধাপে পৌঁছে যাবে। অতএব এটাও মানা দরকারী।

নিজেদের জন্য নয়- সহকর্মীদের জন্য, পরিবারের জন্য, কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য এই ক্রান্তিকালে নিয়মটা মানা প্রয়োজন। না হলে এই যত আয়োজনের এই পৃথিবী- তার জন্য শুধুমাত্র ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে যোগ করেন মিশু সাব্বির।