কর্মীদের পাওনা মেটাতে ১১ কোটি টাকা ‘অনুদান’ চেয়েছে এফডিসি

অবসরে যাওয়া ৭২ কর্মীর আনুতোষিক (গ্রাচুইটি) ও ছুটির নগদায়ন বাবদ পাওনা ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে এক যুগেরও বেশি সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনুদানের আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।

সাইমুম সাদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2020, 11:19 AM
Updated : 20 August 2020, 12:01 PM

পাওনা আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে এফডিসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়ে এলেও সুরাহা না পাওয়ায় সোমবার এফডিসি প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে শামিল হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা বলছেন, অবসরে যাওয়া কর্মীদের পাওনা ২০০৬ সাল থেকে পরিশোধ করেনি এফডিসি। পাওনা নিয়ে দাবি-দাওয়ার মধ্যেই ২২ কর্মী মারা গেছেন; এর মধ্যে অনেকে ‘আর্থিক সঙ্কটে চিকিৎসার অভাবে’ মারা গেছেন। এখনও পাওনা বুঝে না পাওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের পরিবারের দিন কাটছে।

পাওনা মেটাতে না পারার দায় স্বীকার করে এফডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজস্ব তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এতদিনেও তারা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা দিতে পারেননি।

অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দাবির মুখে গত ৫ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা অনুদানের আবেদন জানিয়ে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নুজহাত ইয়াসমিন লিখেছেন, “জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধাদি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

“অনেকে অসুস্থ অবস্থায় আছেন; এমনকি এর মধ্যে আর্থিক সঙ্কটে চিকিৎসার অভাবে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে অবসরপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী চরম আর্থিক সঙ্কটে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।”

এফডিসির আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ৮ জুলাই ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ অর্থবছর তো মাত্র শুরু হলো। মহামারীকালে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারের আরও অন্যান্য খাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

“এফডিসির আবেদনটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কিছু অর্থ তো দিতেই হবে। এর আগেও এফডিসিতে কয়েকবার অনুদান দেওয়া হয়েছে।”

তবে কবে নাগাদ সেই অনুদান মিলতে পারে -তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি এ অতিরিক্ত সচিব।

২০২০-২১ অর্থবছর থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাটি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মনিরুল ইসলাম।

‘চোখের সামনে বাবার কষ্ট দেখেছি’

আশির দশকে এফডিসিতে চাকরিজীবন শুরু করে ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মোশাররফ আহমেদ তার আনুতোষিক পুরোটা না পেয়েই গত মাসে মারা যান। মোশাররফ আহমেদ একজন মুক্তিযোদ্ধা।

তার ছেলে সাঈফ আহমেদ তপু বলছেন, অবসরে যাওয়ার পর প্রাপ্য অর্থ তুলতে চোখের সামনে বাবাকে কষ্ট করতে দেখেছেন তিনি।

তপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাবার কষ্ট চোখের সামনে দেখেছি। যেটা চাচ্ছে সেটা হলো অধিকার, কিন্তু চাইতে হচ্ছে এমনভাবে যেন ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। করুণার ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। এটা আসলে ঠিক না। সবাইকেই এক সময় অবসরে যেতে হবে।”

“এটি নিয়ে সবাই চেষ্টা করতেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, চেষ্টাটা আরেকটু বেশি হওয়া উচিত। আমরা দেশ হিসেবে যথেষ্ট আপডেট হয়েছি, আমরা চাইলেই এটা পারি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে।”

এফডিসির অবসরপ্রাপ্ত ল্যাব প্রধান শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ কয়েক বছর ধরেই নিজেদের প্রাপ্য অর্থ বুঝে পেতে ৭২ কর্মীর পক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়ে আসছেন। 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, “এফডিসির বর্তমান কর্মীদের বেতনাদি বকেয়া নেই কিন্তু আমাদের পাওনা বছরের পর বছর ধরে বকেয়া রাখা হয়েছে। এর আগেও অনুদান পেয়েছে এফডিসি কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অর্থ পরিশোধ করেনি।

“এবারের অর্থ এফডিসির অন্যান্য খাতের বাইরে শুধু অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানাই যাতে ৭২ জনের সমুদয় অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ করা হয়।”