সংগীত কিংবদন্তী আলাউদ্দিন আলী আর নেই

ঢাকাই ছলচ্চিত্রের বহু হৃদয়কাড়া গানের গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী চলে গেলেন সুরের ভুবন ছেড়ে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 01:02 PM
Updated : 9 August 2020, 03:49 PM

মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে শওকত আলী রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

৬৮ বছর বয়সী এই সুরস্রষ্টার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার ভোরে তাকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে রাখা হয়েছিল লাইফ সাপোর্টে।

হাসপাতালের পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলাউদ্দিন আলী ক্যান্সারের পাশাপাশি নিউমোনিয়া ও রক্তের ইনফেকশনে ভুগছিলেন, যেটাকে আমরা সেপটিসেমিয়া বলি। আমরা তার কোভিড-১৯ টেস্ট করেছিলাম, রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছিল।”

২০১৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাংককে নিয়ে পরীক্ষা করা হলে আলাউদ্দিন আলীর ফুসফুসে একটি টিউমার ধরা পড়ে। পরে তা ক্যান্সারে মোড় নেয়।

এরপর থেকে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তার ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছিল তাকে।

‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ- আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’- সহ কালজয়ী অসংখ্য গানে পেছনের কারিগর আলাউদ্দিন আলী।

১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে আলাউদ্দিন আলীর জন্ম। তার বাবা ওস্তাদ জাদব আলী ও  মা জোহরা খাতুন।

দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি হয় ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে।

১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে বেহালাবাদক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় তার।

সেসব দিনে আনোয়ার পারভেজসহ প্রখ্যাত অনেক সুরকারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন আলাউদ্দিন আলী। চলচ্চিত্রের সংগীতে বেহালা বাজাতে গিয়ে তার সংগীত পরিচালনার আগ্রহ তৈরি হয়।

১৯৭২ সালে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার বাংলা মা’ গানের মাধ্যমে জীবনে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। পাঁচ দশকের সংগীত ক্যারিয়ারে নিজস্ব একটি সংগীতের ধারা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন আলাউদ্দিন আলী।

গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৭৯ সালে, সুন্দরী সিনেমার জন্য ১৯৮০ সালে এবং কসাই ও যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।

এছাড়া ১৯৮৫ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আলাউদ্দিন আলী। খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রেও তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন।