নতুন বর্তমানে যেমন আছেন প্রিয়াঙ্কা এবং আরিক

নৃত্যশিল্পী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক র‍্যাচেল প্যারিস প্রিয়াঙ্কা ও অভিনেতা, বর্তমানে একটি অনলাইন কনটেন্ট প্লাটফর্মে কর্মরত আরিক আনাম খানের সংসারের বয়স দেড় বছর।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2020, 05:02 PM
Updated : 26 June 2020, 07:53 PM

নিমা রহমান এবং তারিক আনাম খানের সন্তান আরিক ও তার স্ত্রী র‌্যাচেলের এমন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বাসায় সময় কাটানো এই প্রথম! গ্লিটজের সঙ্গে আলাপে উঠে এল নতুন বর্তমানে তাদের অভিজ্ঞতা।

২০১৯ সালে বিয়ে করা এই দম্পতির সংসার শুরু হতে হতেই এই কাজ সেই কাজ, মধুচন্দ্রিমা - আরও কত তালিকার বাইরে ব্যস্ততা শুরু হয়। আর পেশাগত কারণে র‌্যাচেল তো উড়ে যান প্রায়ই এদিক সেদিক। আরিকও বেশ ব্যস্ত নতুন ট্রেন্ড ধরে অনলাইন কন্টেন্ট প্লাটফর্ম নিয়ে।

এর মাঝেই এই ব্যস্ততা হয়তো দুজনকে কাছে থেকেও নিরিবিলি সময় দিতে পারতো না যদি না করোনাভাইরাসের মত বৈশ্বিক হাহাকার গ্রাস করতো পৃথিবীকে।

ওরা দুইজন ওদিকে তারিক আনাম খান - নিমা রহমান জুটি! এই চারজনে হেসেখেলে পার করা সংসারটা নতুন করে সাজানো হলো এই গৃহবাসের সময়টাতে।

র‌্যাচেল ও আরিক জুটি ভিষণ আড্ডাবাজ বলেই জানেন কাছের মানুষ। তারপরেও যখন এহেন ঘরে থাকারই আহ্বান - কেমন আছেন তারা?

হেসে র‌্যাচেল বলেন, “আছি ভালো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেই গুছিয়ে কথা বলায় হয়তো বাড়তি অনুশীলন আছে তার।

গুছিয়ে বললেন, “আমরা একান্নবর্তী পরিবার। কিন্তু বিয়ের পরে এভাবে একসেঙ্গে থাকা হয়নি। অনেক খারাপ সময়ের মাঝেও এটা কিন্তু একটা বাড়তি পাওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যস্ততা আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকা, তাদের কথার আসল অর্থ বোঝার জন্য এটা আমার কাছে একটা দারুণ সুযোগ বলবো।”

আরিকও তাল মেলান এবার স্ত্রী সঙ্গে, বলেন, “ঠিক তাই। আমরা দুজন দুজনের অপছন্দ বা পছন্দ তো জানতামই - এবার সুযোগ হলো এর কারণগুলোও জেনে নেওয়ার।”

বাংলাদেশে র‌্যাচেল প্যারিস একমাত্র নৃত্যশিল্পী যিনি গৌঢ়নৃত্যের ওপর পড়ালেখা করে এসেছেন। পালন করেছেন গুরুশিষ্য পরম্পরা।

তাই আড্ডায় পরিবার তো আসবেই - নাচের আর ছন্দের কথা না বললেই নয়।

এই গৃহবাসের প্রথমেই, মার্চের দ্বিতীয় ভাগে র‌্যাচেলের একটি নৃত্য সবার নজর কাড়ে। বলা যায়, ভার্চুয়াল রাজ্যে বাংলাদেশে তিনিই প্রথম যিনি নাচ নিয়ে আসেন সামাজিক মাধ্যমে। এর ভিডিওটিও করেন আরিক।

আরিক নিজে অভিনয় করলেও ক্যামেরার পেছনের কাজই তার প্রিয়। লন্ডন ফিল্ম স্কুল থেকে পড়ালেখাও করে এসেছেন এই বিষয়ে। নতুন বর্তমানে হাসিমুখে মানিয়ে নিতে তাই তার অসুবিধা হয়নি মোটেও। বরং মনে খেদ ছিল, র‌্যাচেলের নাচের ভিডিও নেই বলে। সেই খেদটা এই তিনমাসেরও বেশি সময়ে বেশ কেটে গেছে।

আরিক বলেন, “এখন ওর নাচের অনেক ভিডিও।”

তবে নাচের ভিডিও দিয়ে সরগরম না করে র‌্যাচেলের লক্ষ্য নিজের শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, “মনের আনন্দে গান করা বা নাচ করা একটি বিষয়। কিন্তু তা যদি কোনো শাস্ত্রীয় সংগীত বা নৃত্য বলে নামকরণ করা হয়- আর যদি সেখানে মূলভাবটা না থাকে - তাহলে শাস্ত্রীয় নামকরণ না নেওয়াই শ্রেয়।”

নিজে শিক্ষক হিসেবেও এই বিষয়কে প্রাধান্য দেন র‌্যাচেল। যেমন কন্টেন্টের ব্যাপারে এর মূলভাবকে গুরুত্ব দেন আরিক।

চলমান ওয়েব সিরিজ নিয়ে ছোট্ট করে বলেন- “এই বিষয়ে এখনও আলোচনার বাকী আছে। গবেষণারও। বন্ধ না করে বরং সেটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।”

বন্ধ করে দেওয়া যেমন কোনো সমাধান নয়- তেমনই এই দম্পতি ভাবেন, ঘরে বসে থাকা মানেই মন খারাপ নয়।

তাই অন্তত সাতটি বিশেষ দিন তারা পার করেছেন এই লকডাউনে উৎসবের সঙ্গে। পহেলা বৈশাখ আর ঈদ তো বটেই, জন্মদিন, মা দিবস, বাবা দিবস এবং তারিক-নিমার বিবাহ-বার্ষিকীও করেছেন নিজেদের মতো করে।

র‌্যাচেল বলেন, “এর মধ্যে পহেলা বৈশাখের উৎসবটা নিয়ে না বললেই নয়। সেদিন রীতিমতো স্টেজ বানিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। মা (নিমা রহমান) কবিতা পাঠ করেছেন। আমি নাচ করেছি। আরিক সঞ্চালনা করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা যেটা – ‘বিচ্ছু’  নাটকের অংশ বিশেষ পাঠ করেছেন তারিক-আরিক পিতা পুত্র।”

স্বেচ্ছা গৃহবাসে এভাবেই আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন এই পরিবার।

ওদিকে কাজও থেমে নেই।

বাড়িতে বসে অনলাইনে পড়াচ্ছেন র‌্যাচেল, আরিকও চালিয়ে যাচ্ছেন অফিসের কাজ। তিনি কর্মরত আছেন একটি টেলকো প্রতিষ্ঠানে।

এই দম্পতি মনে করেন, নতুন বর্তমানে আসলে অভ্যস্ত হতে হতে দেখা যাবে ছন্দতে পতন ঘটেনি মোটেও কাজের ক্ষেত্রে; বরং চর্চা হচ্ছে নতুন করে ছন্দ তৈরি করার। কেউ রেসিপি দিচ্ছে, কেউ মনের আনন্দে কাজ করে যাচ্ছেন।

এটা আসলেই শিল্পের প্রতি ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।

এই দম্পতি আরও যোগ করেন, পৃথিবীজুড়ে- যখনই দুর্যোগ এসেছে, শিল্পই বাঁচিয়েছে মানুষকে। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন গান-নাচ-নাটক বা গল্পও।

আড্ডার মাঝেই জানালেন তারা এখন ভীষণ আশাবাদী। এই জুটির বিশ্বাস, অচীরেই এই সময় কেটে যাবে। কিন্তু শিল্পের প্রতি এই ভালোবাসা যার চর্চা আবারও হয়ত নতুন উদ্যোমে শুরু হয়েছে তা টিকে থাকবে আরও কয়েক বছর।