‘মাসুদ রানা’ নিয়ে চলচ্চিত্রের কী হবে

কাজী আনোয়ার হোসেন ‘মাসুদ রানা’ লেখা শুরু করলেও সিরিজের অধিকাংশ বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমের স্বীকৃতি মেলার পর এ সিরিজ অবলম্বনে নির্মিতব্য ‘এমআর-নাইন’ চলচ্চিত্রের মালিকানা স্বত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2020, 10:04 AM
Updated : 15 June 2020, 10:23 AM

মাসুদ রানা সিরিজের ৪৫০টি বইয়ের মধ্যে ২৬০টি বই শেখ আবদুল হাকিমের; পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তার কাছ থেকে লেখা নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন নিজের নামে প্রকাশ করতেন বলে রোববার এক রায়ে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

এর আগে গত বছরের শুরুর দিকে মাসুদ রানা সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কাছে স্বত্ব বিক্রি করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

বাকি লেখকের অনুমতি ছাড়া তিনি এককভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বত্ব বিক্রি করতে পারেন কি না- বিষয়টি নিয়ে রোববারের রায়ের পর প্রশ্ন তুলেছেন সিরিজের ভক্তরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক জিজ্ঞাসায় কপিরাইট অফিস সোমবার দুপুরে জানিয়েছে, কপিরাইট অফিসে কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে ‘ধ্বংস পাহাড়’ বইয়ের নিবন্ধন করা না থাকলেও সিরিজের প্রথম দিকে তার লেখা ১৫টি বইয়ের মধ্যে এটি একটি।

কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী জানান, সিরিজে শেখ আবদুল হাকিমের ২৬০টি বইয়ের মধ্যে ‘ধ্বংস পাহাড়’ নেই। এটি নিয়ে তিনি কোনো দাবিও করেননি। ফলে নিজের লেখা বইয়ের চলচ্চিত্র স্বত্ব বিক্রি করার অধিকার কাজী আনোয়ার হোসেনের আছে।

চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরুর আগেই গত বছরের ‘ধ্বংস পাহাড়’সহ সিরিজের প্রথম দিকের আরেকটি বই অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়েছে প্রযোজনা জাজ মাল্টিমিডিয়া।

ফলে ‘এমআর-নাইন’ নির্মাণে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

হলিউডের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিলভার নাইনের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ৮৩ কোটি টাকা বাজেটের চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউড পরিচালক আসিফ আকবর।

চলচ্চিত্রের মাসুদ রানার চরিত্রে তরুণ অভিনেতা এবিএম সুমনকে নিজেই নির্বাচিত করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই লস এঞ্জেলস, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।

মাসুদ রানা সিরিজ থেকে শেখ আবদুল হাকিম চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বত্ব বিক্রি করতে পারবেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে কপিরাইট অফিস জানিয়েছে, তিনি চাইলে মাসুদ রানা সিরিজের নিজের ২৬০টি বই থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বত্ব বিক্রি করতে পারবেন। সেই অধিকার তার আছে।

তবে তার ‘মাসুদ রানা’ নাম ব্যবহারের সুযোগ নেই; তার নির্দিষ্ট বইয়ের নামে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বত্ব দিতে পারেন বলে জানান জাফর রাজা চৌধুরী।

“মাসুদ রানা সিরিজের মূল কারিগর কাজী আনোয়ার হোসেন। ফলে তিনিই নামটা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর পেছনে আবদুল হাকিমেরও ভূমিকা আছে। কাজী আনোয়ার হোসেন তার নাম ফেলে নিজের নামে বই প্রকাশ করে তার অবদানকে খাটো করেছেন।”

ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে সেবা প্রকাশনীর সত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ লেখা শুরু করেন; ধ্বংস পাহাড়সহ সিরিজের শুরুর দিকের ১৫টির মতো বই তিনিই লিখেছেন। 

পরবর্তীতে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শেখ আবদুল হাকিমসহ একাধিক লেখকদের লেখা নিয়ে ‘বাজারজাত করার স্বার্থে’ তিনি নিজের নামে প্রকাশ করতেন বলে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই লেখক সিরিজের ২৬০টি বইয়ের মালিকানাস্বত্ব দাবি করে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন শেখ আবদুল হাকিম।

তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও লেখক বুলবুল চৌধুরী, শওকত হোসেন, শিল্পী হাসেম খান, সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ইসরাইল হোসেন খানসহ কয়েকজনের বক্তব্যের আলোকে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে কপিরাইট অফিস।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৯০ দিনের মধ্যেই কপিরাইট বোর্ডে কাজী আনোয়ার হোসেনের আপিল করার সুযোগ আছে বলে জানান জাফর রাজা চৌধুরী।

কাজী আনোয়ার হোসেনের পরিবারের পক্ষে তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুর রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা এখনও রায়ের কপি হাতে পাননি। রায়ের কপি হাতে পেলেই কপিরাইট অফিসে আপিল করবেন।

“আমরা আইনের পথেই হাঁটব। সেখানেও ন্যায় বিচার না পেলে আমরা হাই কোর্টে যাব। আইনের মাধ্যমেই যা হওয়ার হবে।”

সোমবার দুপুরে কপিরাইট অফিস খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী আনোয়ার হোসেনের তরফ থেকে এখনও কোনো আপিল জমা পড়েনি কপিরাইট বোর্ডে।