ফড়িং জীবনের ফরীদি

আরাফাত শান্ত এবার লিখেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে। এই অভিনেতা বেঁচে থাকলে আজ উদযাপন করা হতো তার ৬৮তম জন্মদিন। তিনি নেই- তবু তাকে নিয়ে উদযাপনের কমতি নেই।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2020, 11:49 AM
Updated : 29 May 2020, 12:32 PM

কারণ তার অবদানেরও কমতি নেই।

অভিনেতা  হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে সব চেয়ে সুন্দর কথাটা শুনেছিলাম সূবর্ণা মোস্তফার এক সাক্ষাৎকারে, “তিনি জানাচ্ছিলেন আমি তেমন মিস করি না পার্টনার হিসাবে। কারন তোমাদের কাছে যে দেবতা, আমার কাছে যে মানুষ ভালো বন্ধু, প্রেমিক। এক সাথে দীর্ঘদিন সংসার করতে করতে যখন আর দেখলাম পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট নাই, তখন আলাদা হলাম। অভিনেতা হিসাবে তাকে আমি মিস করি সব সময়, কিছু কঠিন চরিত্র করার জন্য লোক পাওয়া যায় না, ফরীদি থাকলে তুড়ি বাজাতে বাজাতে নিমিষেই চরিত্রটা করে দিতো।”

হুমায়ুন ফরীদির একটা ইন্টারভিউয়ের কথা আমাকে মুগ্ধ করে, পুরোটা মনে নেই।

তিনি বলেছিলেন, “এই যে আমি একজন খারাপ মানুষের চরিত্রে অভিনয় করা খাঁটি সিনেমার মানুষ, কিন্তু আমি নায়কদের মত জনপ্রিয়, মঞ্চে এককালে যা অভিনয় করছি মানুষ তা মনে রাখছে, আর টেলিভিশনের যেখানেই যাই যত বড় ডিরেক্টর হোক আমাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে দেয়। এই এত অর্জন দেশ স্বাধীন না হলে আর অভিনয় না করলে কে দিতো!”

শায়ের খানের একটা চমৎকার লেখা আছে। তিনি জানাচ্ছেন, আউটডোরে উনাকে শুটিং করার কি ঝক্কি ঝামেলা। এত মানুষের প্রিয় ছিলেন উনি। অর্থনীতিবিদ  আনু মুহাম্মদ বলেছিল মজার কথা, উনি ফরিদীকে দেখতেন সব সময় প্রমাণ করতে চায়। ভার্সিটিতে যা কিছুই হোক ফরিদী থাকবেই। তবে হুমায়ুন ফরিদীর ব্যর্থতাও আছে। যেমন ধরুন তিনি সিনেমায় গিয়ে ছিলেন পাল্টে ফেলার আশায়। পাল্টে ফেলার বদলে তিনি নিজেই ঢুকে গিয়েছেন এফডিসির ফর্মুলা সিনেমার চোরা গর্তে। তারপরেও তিনি চেষ্টা করতেন, অভিনয় দক্ষতায় সিনেমায় প্রাণ আনতে। আবুল হায়াত যখন চাকরি ছেড়ে দিল, বিটিভির আয়ে আর পোষায় না, জানালেন ফরিদীকে। উনি সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি  সিনেমার কন্ট্রাক্ট ব্যবস্থা  করে দিলেন। অভিনেতা মিলন তার অনেক জুনিয়র, তাঁকে নিজের জায়গায় ঢুকিয়ে দিতেন। এই যে ভালোবাসা, সবাইকে ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা তা অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর ছিল।

জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা, হে গুণী। আপনি শম্ভু মিত্রের মত কিংবদন্তীর স্নেহের পাত্র ছিলেন। শম্ভু মিত্র নাকি বলতো- 'তোমার সাথে কথা বলতে আরাম, মানুষ আমাকে হয় ঈশ্বর বানায় নয় গালি দেয়, বন্ধু কেউ হয় না যার সাথে অবসর কাটানো যায়। 'বেলাশেষে', 'কন্ঠ' খ্যাত পরিচালক, শিবপ্রসাদ মুখার্জী কথা প্রসঙ্গে  বলছিলেন আপনার অভিনয় শৈলীর কথা। শিবু কুমার শীলের সাথে আপনার এক চমৎকার কথোপকথন আছে, সেখানে আপনি বলে ছিলেন, শিশিরের শব্দের মত টুপ করে চলে যেতে যান। সেভাবেই চলে গিয়েছেন। যারা আপনার অভিনয় দেখেছে তাদের পক্ষে আপনাকে ভুলতে পারা মোটামুটি অসম্ভব।