বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুরের ঘর পোড়ানোর প্রতিবাদ

বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুরের গানের ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ২২ মে শুক্রবার ২০২০ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2020, 10:44 AM
Updated : 22 May 2020, 10:44 AM

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক বিপুল কুমার দাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ নগর কমিটির সদস্যসচিব জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দীন প্রিন্স ও ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগরের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ।

নেতৃবৃন্দ রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, গত ১৭ মে ২০২০ রাতের বেলায় দুর্বৃত্তরা বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুরের গানের ঘর আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। এতে ঘরসহ তার প্রিয় দোতারা, অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র, প্রায় ৪০ বছর ধরে সংগৃহীত মূল্যবান গানের খাতাসহ অন্যান্য সামগ্রী পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়, যা সংস্কৃতির অপূরণীয় ক্ষতি। নেতৃবৃন্দ বলেন, রণেশ ঠাকুরের ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ আমরা বিক্ষুব্ধ হলেও বিস্মিত হইনি। কারণ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বাউলদের উপর যে বহুমাত্রিক হামলা, নির্যাতন চলছে এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। রণেশ ঠাকুরের সঙ্গীত চর্চায় এর আগেও বাধা দিয়েছিল ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে এটা জমি নিয়ে বিরোধের জের। কিন্তু তাহলে ঐ ঘরে থাকা গৃহপালিত পশুদের বের করে কেন আগুন দেয়া হয়েছে। অন্য ঘরে কেন আগুন দেয়নি। উল্লেখ্য এর আগে ২০১০ সালে একই গ্রামে বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের সঙ্গীত চর্চায়ও একই গোষ্ঠী বাধা দিয়েছিল।

তারা বলেন, বাউল দর্শন বাংলার জনপদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। আনুমানিক সপ্তদশ শতক থেকে উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ও লোকাচার হিসেবে যার চর্চা বাংলার মাটিতে হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাউলেরা ধর্মীয় ভেদাভেদের বাইরে বৃহত্তর মানবতার গান গায় সেজন্যই উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি বারে বারে বাউলদের উপর হামলা চালায়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, একদল উগ্র সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নষ্ট করার কাজে লিপ্ত আছে। যাদের পরমত সহ্য করার মতো উদারতা নেই। ওই শক্তি বার বার বাউলদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে। তাদের সংস্কৃতি চর্চায় বাধা দিয়ে আসছে। জনসাধারণের সামনে তাদেরকে হেয়-নিন্দিত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা প্রচার ও কুৎসা রটিয়ে, অপপ্রচার চালিয়ে আসছে, তাদের আখড়ায় আগুন দিয়েছে, গানের আসরে হামলা করেছে, সরকার ধর্মান্ধদের কাছে নতি শিকার করে বাউলদের গ্রেফতারও করেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রাখতে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা যেমন বাড়াতে হবে, জনগণের মধ্যে সে মননজগৎ তৈরি করতে হবে, বাউল সম্প্রদায়সহ অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতির চর্চা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যারা শিল্পী রণেশ ঠাকুরের গানের ঘর আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।