ধুঁকছে ঢালিউড, প্রণোদনা না পেলে ‘ঘুরে দাঁড়াবে না’

করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক মাস ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় ‘প্রায় ২০০ কোটি টাকার’ ক্ষতির মুখে সরকারি প্রণোদনা না পেলে চলচ্চিত্র শিল্পে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে শঙ্কার কথা জানালেন প্রযোজক নেতারা।

সাইমুম সাদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2020, 04:47 PM
Updated : 18 April 2020, 05:21 PM

বৈশ্বিক মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকারের ঘরে থাকার সাধারণ ছুটিতে অন্যান্য শিল্পের মতো চলচ্চিত্র শিল্পেরও সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

মুক্তির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১৫টি চলচ্চিত্র মুক্তি না পাওয়ায় ও দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্র শিল্পের ‘প্রায় ২০০ কোটি টাকা’ ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।

“করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ হওয়ার পরও ক্ষতিটা কতকাল আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে-সেটা নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় আছি। চলচ্চিত্র আদৌ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে কি না-তাও বলতে পারছি না।”

করোনাভাইরাসের থাবায় ক্রমাগত ধুঁকতে থাকা চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখছেন না বলে মনে করছেন প্রযোজক নেতা খসরু।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রাখতে চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ও প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের জন্য সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে। অন্যথায় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।”

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ২০১২ সালে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

শিল্প হিসেবে এই সঙ্কটে চলচ্চিত্রকে সামনে এগিয়ে নিতে সরকারি প্রণোদনাকেই সমাধান হিসেবে দেখছেন দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকার গার্মেন্ট শিল্পে যেভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে; চলচ্চিত্রও শিল্পেও সেরকমটা জরুরি। অন্যথায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাবে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি।”

দেশের হলমালিকদের ‘নাজুক’ পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রদর্শক সমিতির এ নেতা বলেন, “দেশের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে আমাদের হলগুলো কবে খোলা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে অনেক হলের যন্ত্রপাতি হয়তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা না চলায় স্টাফদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিকরা।”

স্টাফদের জন্য ত্রাণের বন্দোবস্তের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান মিয়া আলাউদ্দিন।

প্রেক্ষাগৃহের মালিক ও প্রযোজকরা বিভিন্ন উৎসবে চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন; এবার নববর্ষে কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। মাসখানেক পর ঈদুল আযহায় কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে কি না-তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তারা।

প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ফেরা নিয়েও ‘অনিশ্চয়তা’

দেশের সচল প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমতে কমতে হাজার থেকে ১শটিতে নেমেছে। কয়েক বছর ধরেই দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহ থেকে দর্শকরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

করোনাভাইরাসের ধকল কাটিয়ে প্রেক্ষাগৃহ খোলার পর ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে’ অবশিষ্ট দর্শকরাও মুখ ফিরিয়ে নেবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন খসরু ও মিয়া আলাউদ্দিন।

খসরু বললেন, “সমাজের সবাই এখন জানে, করোনাভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ; এটি প্রতিরোধ করতে জমায়েত এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে। সেই আতঙ্কের কারণে দর্শকরা হলে আসবে কি না-সেটি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।”

দীর্ঘদিন প্রেক্ষাগৃহে না যাওয়ার ফলে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শক’ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে আরেক শঙ্কার কথা জানালেন মিয়া আলাউদ্দিন।

আর্থিক কষ্টে নিম্ন আয়ের কলাকুশলীরা

কাজ না থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটছে নিম্ন আয়ের কলাকুশলীদের। এদের মধ্যে অনেকে দিন চুক্তিতে চলচ্চিত্রের ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে সংসার চালান; যারা ‘এক্সট্রা’ বলে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ‘এক্সট্রা’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় দুই দশক ধরে এফডিসিতে যাওয়া-আসা করি। সারাদিনে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনো মতো সংসার চালাই। প্রায় এক মাস ধরে কোনো কাজ করতে পারি না। কবে কাজ পাবো সেটাও জানি না।”

শুধু এক্সট্রা নয়, মেকআপ আর্টিস্টদের সহকারী, স্ট্যান্টম্যান, প্রোডাকশন বয়সহ আরো অনেক কলাকুশলীরাই ‘বেকার’ হয়ে গেছেন।

এফডিসির বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে টুকটাক সহায়তা পেলেও তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন।

এর বাইরে চলচ্চিত্রের ডাবিং, সম্পাদনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও কোনো কাজ পাচ্ছেন না।

ধার-দেনা করে অনেক তরুণ নির্মাতা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন; ছবিগুলো আটকে থাকায় তারাও সঙ্কটে রয়েছেন বলে জানান প্রযোজক নেতা খসরু।