শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুকের চিরবিদায়

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্প নির্দেশক, চিত্রপরিচালক ও শিক্ষক মহিউদ্দিন ফারুক মারা গেছেন।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 01:00 PM
Updated : 17 April 2020, 01:00 PM

অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে ঢাকার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে (আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) নেওয়া হলে চিকিৎসক দেখে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মহিউদ্দিন ফারুকের মধ্যেও কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ থাকার কথা স্বজনদের কাছ থেকে জানার কথা বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তবে তার ছেলে নুরউদ্দিন ফারুক শুভ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় তা অস্বীকার করেছেন।

মহিউদ্দিন ফারুকের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর; দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হৃদরোগ, কিডনির জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

দুই বছর আগে তার হৃদযন্ত্রে দুটি ব্লক পাওয়ার পর দুইটি ‘রিং (স্টেনট)’ পরানো হয়েছিল বলে জানান নুরউদ্দিন।

তিনি বলেন, “হার্ট অ্যাটাকেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। সকালের দিকে উনার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।”

তবে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার ছেলেরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন; গাড়িতে গিয়েই চিকিৎসকরা মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। হয়ত পথেই কিংবা বাসাতেই মৃত্যু হয়েছে।

“এখন কোনো রোগী এলেই সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়িতে গিয়ে ডাক্তাররা দেখেন। নন কোভিড হলে সেই পেশেন্টগুলো সরাসরি নিয়ে আসি আর কোভিড হলে আইসোলেশন।”

ডা. আশীষ বলেন, “উনার ছেলের কাছে হিস্টোরি নিয়ে জানা গেল, উনি নয়-দশ দিন ধরে বাসাতে জ্বর-কাশি নিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা তার কোভিড টেস্ট করতে আইইডিসিআরে যেতে বলা হয়।”

মহিউদ্দিন ফারুকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ শোকবার্তায় বলেন, “গত তিন-চার দিন ধরে তিনি (মহিউদ্দিন ফারুক) জ্বরে ভুগছিলেন। সেজন্য করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে।”

তবে মহিউদ্দিন ফারুকের ছেলে নুরউদ্দিন শুভ্র বলেন, “বাবার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ ছিল না। আমি সবসময়ই তার সঙ্গে আছি। সেরকম কিছু থাকলে আমি তো জানতাম। এসব মিথ্যা।”

মহিউদ্দিন ফারুকের শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে নেওয়া হয়নি বলে জানান তার ছেলে।

তবে মহিউদ্দিন ফারুকের নিকটাত্মীয় শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। রুমের দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যেই থাকতেন। পরিচিত চিকিৎসকদের টেলিফোন করেই ওষুধ খাচ্ছিলেন।

“বনানীর বাসায় দুপুরের দিকে ঘরে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।”

শুক্রবার আসরের নামাজের পর মিরপুর-১৪ এলাকার একটি মাদ্রাসায় মহিউদ্দিন ফারুকের জানাজা হয়েছে; মাগরিবের দিকে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন করা হবে বলে জানান নুরউদ্দিন।

মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে ১৯৪১ সালের ৩রা মার্চ জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন ফারুক। 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মঞ্চনাটকের দল ‘থিয়েটার’ এর সাথে যুক্ত হন তিনি। যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির সাথেও।

১৯৬৫ সালে চারুকলার পড়ালেখা শেষ করে ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগদান করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই যুক্ত ছিলেন।

পরবর্তীতে উদয়ন চৌধুরীর ‘পুনম কি রাত’ ছবিতে শিল্প নির্দেশক হিসেবে যাত্রা শুরুর পর প্রায় ২০০ চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।

‘পালঙ্ক’, ‘বসুন্ধরা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘পিতা-মাতা-সন্তান’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘দুখাই’ এবং ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি।

চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য বাচসাস পুরস্কার, প্রযোজক সমিতি পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।

শিল্প নির্দেশনার বাইরে ‘বিরাজ বৌ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৬৫ সালে তিনি ফাতেমা আক্তার বানুকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।